চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোরো ধান সংগ্রহ চলছে ঢিমেতালে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৪ জুন, ২০২০ | ৭:২২ অপরাহ্ণ

সরকারের বোরো ধান-চাল ক্রয় কর্মসূচি চলছে ঢিমেতালে। কৃষকের কাছ থেকে ২৫০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে মহানগীতে এখনো পর্যন্ত চাল দেয়নি মিলাররা। শুধু বাঁশখালী থেকে ৬৫ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আবু নঈম মো. শফিউল আজম পূর্বকোণকে বলেন, ‘৩০ এপ্রিল ছিল মিলারদের সঙ্গে চুক্তি করার শেষ সময়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকে পে-অর্ডার করতে না পারায় চুক্তি করতে পারেনি। তাই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত চুক্তির সময় রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই চুক্তি করেছেন। চুক্তির পর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ‘হয়তো ধানের দাম বাড়তি থাকায় অপেক্ষা করছেন মিলাররা। আশা করছি, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।’
খাদ্য বিভাগ জানায়, ৭ মে থেকে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করার কথা ছিল। গত ৩০ এপ্রিল ছিল মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারের চাল কেনা চুক্তি করার শেষদিন। সরকার নির্ধারিত সময়ে ব্যাংক বন্ধ থাকায় মিলাররা পে-অর্ডার করতে পারেনি। তাই চুক্তি মেয়াদ বাড়িয়ে ৪ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই চুক্তি করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত মহানগরীর কোনো মিলার চাল দেয়নি। চট্টগ্রাম জেলায় ১৪১ জন মিল মালিক রয়েছে। ফলে সরকারের চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
খাদ্য বিভাগ জানায়, সরকার মিলারদের কাছ থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করবে নয় হাজার ৬৭ টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে দুই হাজার ৮৪৩ টন। আতপ চাল প্রতিকেজি ৩৫ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা দরে কিনবে সরকার। আর ধান কিনবে কৃষকদের কাছ থেকে। প্রতিকেজি ধানের দাম ২৬ টাকা।
সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাল সংগ্রহ হয়েছে বাঁশখালী উপজেলা থেকে মাত্র ৬৫ টন। ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ২৫০ টন।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধানের দাম বাড়তি। সেই হিসাবে চালের দাম বাড়তি থাকায় মিলারদের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। লোকসানের ভয়ে অনেকেই চাল দিতে রাজি হচ্ছে না। তারপরও সরকারকে সহায়তা করার জন্য আমরা চুক্তি করছি। কালের মধ্যে (আজ বৃহস্পতিবার) অনেকেই চুক্তি করবে। চুক্তির পর চাল বিক্রি শুরু হবে।’
মিল মালিকদের দাবি, বাজারে নতুন ধান ওঠতে শুরু করেছে। তবে ধানের দাম বাড়তি থাকায় বাজারে চালের দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ মিল মালিক।
রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লোকসান হলেও সংকটময় মুহূর্তে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চুক্তি করেছি। মহানগর ও জেলার অনেকেই চুক্তি করেছেন। যারা চুক্তি করেছেন তারা খাদ্য বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।’
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৪১টি রাইস মিল রয়েছে। তবে সিদ্ধ চালের মিল রয়েছে মিরসরাই, সীতাকু-, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট এলাকায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও একই অবস্থা হয়েছিল। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকায় সরকার চাল দিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছিল মিল মালিকেরা। ফলে ওই দুই বছর সরকারি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর।
খাদ্য বিভাগ জানায়, কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সরকার এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। কৃৃষককে সরাসরি প্রণোদনা দিতে ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ না করে দালাল চক্র ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। ছিল নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, আনোয়ারা উপজেলা থেকে সরকার ধান সংগ্রহ করবে ৫৩৬ টন, আতপ চাল ৯৪৫ এবং সিদ্ধ চাল ২৬৯ টন। বাঁশখালী উপজেলায় ধান সংগ্রহ করবে ৮৩৯ টন, আতপ চাল ৬৮৩ এবং সিদ্ধ চাল ৪২০ টন। বোয়ালখালীতে ধান সংগ্রহ করবে ১৬২ টন, আতপ চাল ১১৩ এবং সিদ্ধ চাল ৮১ টন। চন্দনাইশে ধান সংগ্রহ করবে ২৯৮ টন, আতপ চাল ১৭৭ এবং সিদ্ধ চাল ৮১ টন। ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে ধান সংগ্রহ করবে ৬৭৯ টন, আতপ চাল ৯২৭ এবং সিদ্ধ চাল ৪৫১ টন। হাটহাজারীতে ধান সংগ্রহ করবে ৩১১ টন, আতপ চাল ১৫৯ এবং সিদ্ধ চাল ১৫৬ টন। লোহাগাড়ায় ধান সংগ্রহ করবে ৩০৯ টন, আতপ চাল ১৭৭ এবং সিদ্ধ চাল ১৫৫ টন। মিরসরাইয়ে ধান সংগ্রহ করবে ১২৪ টন, আতপ চাল ৮০ এবং সিদ্ধ চাল একশ টন। পটিয়ায় ধান সংগ্রহ করবে ৩৮৩ টন, আতপ চাল ৮৮৮ এবং সিদ্ধ চাল ২১১ টন। রাঙ্গুনিয়ায় ধান সংগ্রহ করবে ৬৩৮ টন, আতপ চাল ২৪৬১ এবং সিদ্ধ চাল ৩২০ টন। রাউজানে ধান সংগ্রহ করবে ২৮১ টন, আতপ চাল ৪১২ এবং সিদ্ধ চাল ১৪১ টন। সাতকানিয়ায় ধান সংগ্রহ করবে ৫৬২ টন, আতপ চাল ২৭৮ এবং সিদ্ধ চাল ২৮২ টন। কর্ণফুলী উপজেলায় ধান সংগ্রহ করবে ৫২ টন, আতপ চাল১২১ টন এবং সিদ্ধ চাল ২৬ টন। সীতাকু-ে সিদ্ধ চাল ১৫১ টন। মহানগরীর পাঁচলাইশে ধান সংগ্রহ করবে ৫৯ টন, আতপ চাল ৫২ এবং সিদ্ধ চাল ৩০ টন। চান্দগাঁও থানা আতপ চাল ১২৮৩ টন ও পাহাড়তলী থানায় আতপ চাল ৩১১ টন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট