চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসায় হাসপাতাল চেয়েছে সিএমপি

নাজিম মুহাম্মদ

৪ জুন, ২০২০ | ৬:৫২ অপরাহ্ণ

করোনা আক্রান্তের তালিকায় আইন শৃঙ্খলা সংস্থার সদস্যের তালিকা দিন দিন বাড়ছে। চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), র‌্যাব-৭, জেলা ও শিল্প পুলিশে গত দুইমাসে ৩৩৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচজন।
শঙ্কার কথা হলো, অন্য রোগীরা যেভাবে সুস্থ হয়ে উঠছেন, পুলিশ বিভাগে এই সুস্থ হয়ে উঠার সংখ্যা খুবই কম। এর কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর নিবিড়ভাবে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া। নিজেদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল চেয়েছিল পুলিশ। এখনো সেটি জুটেনি। তবে রাজধানী ঢাকায় করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের চিকিৎসা দিতে ইমপালস হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। ৪৫০ শয্যার এ হাসপতালটি করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের নিবিড়ভাবে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেও পুলিশ সদস্যের জন্য এখনো একটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল পাইনি। আমরা সেটা পাবার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ ধরনের হাসপাতাল না পাওয়া পর্যন্ত সীমিত পরিসরে পুলিশের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-জনসংযোগ) আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, গত দুইমাসে চট্রগ্রাম মহানগর পুলিশের ১৬৮ জন সদস্য কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। আরো দুইজন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। তাদের নমুনা নেওয়া হলেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। আর সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৪৩ জন।
র‌্যাব-৭ এর সহকারি পুলিশ সুপার (জনসংযোগ) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, গত দুইমাসে র‌্যাবে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৭১ জন। সুস্থ হয়েছেন মাত্র তিনজন। আর শিল্প পুলিশে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৪৭ জন। সুস্থ হয়েছেন একজন। শিল্প পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন সহকারি পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া। চট্রগ্রাম জেলা পুলিশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন। সুস্থ হয়েছেন মাত্র তিনজন। মারা গেছেন একজন।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চট্রগ্রামের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল (বিএমএইচ) ও ইমপেরিয়াল হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল ঘোষণার পর পুলিশ চেয়েছিল বিএমএইচে তাদের চিকিৎসা হোক। কিন্তু হাসপাতালটি চালু হবার পথে দীর্ঘসূত্রিতা পুলিশকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। সরকারি আদেশের পর প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় চলে গেছে। বিএমএইচ কর্তৃপক্ষ বলছে, আরো এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।
সরকারের সঙ্গে হাসপাতালটির সমন্বয়কারী ডা. কামরুল হাসান বলেন, আমরা পুলিশকে হাসপাতাল দিতে রাজি আছি। তবে আমাদের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। বোতল সিলিন্ডার দিয়ে কাজ করতে গেলে রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা পাবেন না। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। পুলিশ চাইলে এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। তাহলে কাজটি দ্রুত হবে। তিনি বলেন, আমরা ১০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করছি। ইতিমধ্যে ৯০টি শয্যা তৈরি হয়েছে। তবে চিকিৎসক-নার্সরা কোথায় থাকবেন সেই প্রশ্নের সুরাহা হয়নি। নতুন করে নার্সও নিয়োগ দিতে হবে। এসব কাজ শেষ করতে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
জানা গেছে, বিএমএইচ কর্তৃপক্ষ আগামী এক সপ্তাহ পর হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি করার ঘোষণা দিলেও তার আগে চিকিৎসক-নার্সদের বেতন ভাতা ও বেতনের সরকারি অংশ পাওয়া এবং চিকিৎসক-নার্সদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়।
বিএমএইচ সুনিশ্চিতভাবে না পেয়ে বিকল্প হাসপাতালের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। নগরীর হালিশহর এলাকায় আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন একটি ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালের কাজ শুরু করেছে। ইতিপূর্বে একটি মেটারনিটি হাসপাতাল ছিল। পুলিশ এই হাসপাতালটিও নিতে চায়। আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জমির উদ্দিন বলেন, আগামী শুক্রবার হাসপাতালটি চালু হবে। আমাদের ইচ্ছে এর ছয়টি ফ্লোরের মধ্যে তিনটি পুলিশের জন্য বরাদ্দ রাখব। বাকি অর্ধেক অংশে সাধারণ জনগণ চিকিৎসা পাবেন। এ হাসপাতালটি হবে ১০০ শয্যার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট