চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

১১৭ প্রজাতির ‘সামুদ্রিক সবজি’ চাষের সম্ভাবনা দেখছেন গবষেকরা

বঙ্গোপসাগরে ফলবে সবজি

কক্সবাজার

২৮ মে, ২০১৯ | ৯:০৯ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারসহ দেশের ৭১০ কিলোমিটারব্যাপী সমুদ্র সৈকত এবং ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারব্যাপী উপকূলীয় অঞ্চল স-িউইড বা সামুদ্রিক শৈবাল চাষের উপযোগী।
কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় বঙ্গোপসাগরে ১১৭ প্রজাতির স-িউইড সনাক্ত হলেও এর মধ্যে ১০টি রপ্তানেিযাগ্য ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। দেশের ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্রসম্পর্কিত অর্থনীতি জোরদার করার জন্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও দেশের বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।
সম্প্রতি কক্সবাজারস্থ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কক্সবাজার উপকূলে স-িউইড চাষের সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় গবেষণার এই তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও মৎস্য বিজ্ঞানী ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি যদি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা না হয়, তাহলে সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কোন মানে থাকে না। আমাদের সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সমুদ্রসীমা বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে হবে।
গবেষণায় উঠে আসে, স্থানীয় ভাষায় স-িউইড ‘হেজালা’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিিটউটরে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র ২০১৩ সাল হতে স-িউইড নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদী-মহেশখালী চ্যানেলের মোহনায় নুনিয়াছড়া থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত সৈকতসংলগ্ন জোয়ার-ভাটা এলাকা ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন স-িউইডের প্রাকৃতিক উৎপাদন ক্ষেত্রের সন্ধান লাভ করেছে। প্রাপ্যতা ও স্থানীয় পরিবেশের সাথে মানানসই প্রজাতিগুলোর পুষ্টিমান যাচাই এবং খাদ্য উপাদান হিসেবে বাণিজ্যিক গুরুত্বের আলোকে গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে।
ইন্সটিটউিটরে বিজ্ঞানীরা কক্সবাজার উপকূলে এ পর্যন্ত ১১৭ প্রজাতির স-িউইড সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সেইসাথে স-িউইডের পুষ্টিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। পুষ্টিমানের বিচারে বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এটি সমাদৃত। মানবখাদ্য হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও ডেইর,ি ঔষধ, টেক্সটাইল ও কাগজ শিল্পে স-িউইড আগার কিংবা জেল-জাতীয় দ্রব্য তরৈেিত কাঁচামাল হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া জমিতে সার হিসাবে, প্রাণিখাদ্য ও লবণ উৎপাদনেও স-িউইড ব্যবহার করা হয়। স-িউইডে প্রচুর পরিমাণে খনিজ দ্রব্য বিদ্যমান থাকায় খাদ্যে অণুপুষ্টি হিসেবে এর ব্যবহার গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এসব স-িউইড বা সামুদ্রিক সবজিসমূহে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামসহ মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও আয়োডিনজনিত গলগণ্ড রোগের কার্যকরী প্রতিষেধক হিসাবে বিবেচিত বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
রক্তে কোলস্টরেল কমাতেও স-িউইডের অনন্য ভূমিকার কথা জানানো হয়। এতে সামুদ্রিক লবণের চেয়ে অধিক পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে বলে থাইরয়েড (গলগণ্ড) রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও এটি কাজ করে।
তবে আমাদের দেশে খাবার হিসেবে এর জনপ্রিয়তা না থাকলেও বিদেশে এদের প্রচুর চাহিদা ও বাজারমূল্য রয়েছে বলে জানান বিএফআরআই’র ডিজি ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
বিজ্ঞানীরা গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানান, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কক্সবাজার জেলার টেকনাফরে সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ইনানী ও শহরতলীর বাঁকখালী মোহনার আশপাশের পাথুরে ও প্যারাবন এলাকায় জোয়ার-ভাটার অর্ন্তবর্তী স্থানেই অধিকাংশ স-িউইড জন্মায়। তবে স-িউইড জন্মানোর জন্য কিছু ভিত্তির প্রয়োজন পড়ে। সাধারণতঃ বড় পাথর, প্রবাল, শামুক-ঝিনুক-পলিকিটের খোসা, প্যারাবনের গাছ-শিকড়, শক্ত মাটি কিংবা অন্য যেকোন শক্ত বস্তুর ওপর স-িউইড জন্মে বলে জানান বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশে স-িউইডের বৃদ্ধির হার ভারতের চেয়ে বেশি। তবে ভারতে বছরে ২১০ দিন চাষ করা গেলেও বাংলাদেশে মাত্র বছরে ৯০ দিনই চাষ করা যায়।
বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের জলবায়ুতে স্থানভেদে নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস স-িউইড চাষ করা যায়। তবে চাষের সর্বোচ্চ অনুকূল অবস্থা বিদ্যমান থাকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস। নারিকেলের রশি ও নাইলনের মাছ ধরার জাল ব্যবহার করে ইন্সটিিটউট থেকে আনুভূমিক নেট পদ্ধতিতে স-িউইড চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ৩ প্রকার স-িউইড চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের উপকূলে হিপনিয়া প্রজাতির স-িউইডের উৎপাদনশীলতা (৩০ কেজি/বর্গমি.) পার্শ্ববর্তী দেশের একই প্রজাতির উৎপাদনশীলতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট