চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই চাই পদায়ন

সংবাদভাষ্য

ডা. ম. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী

২৭ মে, ২০১৯ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দুই মেডিক্যাল কলেজের একটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ। পারফরম্যান্সের দিক থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তুলনায় চট্টগ্রাম সবসময়ই এগিয়ে ছিল। চাকরির দিক থেকেও বরাবরই ভাল অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ছাত্ররা। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকা- চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সুনাম বিনষ্ট করছে। এমনকি প্রশাসনিক কিছু সিদ্ধান্ত কলেজের সার্বিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তার মধ্যে অন্যতম অভিযোগ হলো ‘পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা’। যা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে বলা যায় একরকম বিশৃঙ্খলা চলছে। জ্যেষ্ঠ একাধিক শিক্ষক থাকার পরও কনিষ্ঠ শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়ায় আলোচ্য চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক জি এম জাকির হোসেন ইউরোলজিতে সর্বপ্রথম এফসিপিএসধারী। অথচ তাকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব না দিয়ে কনিষ্ঠ একজন শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধান করা হয়েছিল। বৈষম্যের এই বিষয়টি তুলে ধরে পূর্বকোণে প্রতিবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও তাকে অদ্যাবধি মূল্যায়ন করা হয়নি।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি নীতিমালা আছে। যেমন : মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নির্বাচিত করার জন্য একটি কমিটি আছে। যাকে বলা হয়, বিভাগীয় প্রমোশন কমিটি (ডিপিসি)। আর অধ্যাপক পদের পদোন্নতি দেখে থাকে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। এই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে থাকেন বেশ কয়েকজন সচিব। উচ্চ পর্যায়ের ও ক্ষমতার এই বোর্ডের মনোনয়ন পেয়ে প্রফেসর নির্বাচিত হওয়া অনেক কঠিন একটি ব্যাপার। এক কথায়, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে একজন শিক্ষক প্রফেসর হন। অতএব, তাকে কোনভাবেই হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।
অথচ, দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ সার্জারি বিভাগের এমনটি ঘটেছে মর্মে গতকাল দৈনিক পূর্বকোণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ফুটে ওঠেছে কিভাবে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সিনিয়র সহযোগী অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান খানকে পাশ কাটিয়ে তখন সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর হোসেন ভূঁইয়্যা শাহীনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে গত ২ মে ডা. আনোয়ার উল হক ও ডা. মতিউর রহমান খান অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান।
একজন শিক্ষকের পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সেরকম কোন নীতিমালা নেই। তবে এক্ষেত্রে যে রীতি দীর্ঘসময় ধরে অনুসরণ করা হচ্ছে- তাহলো অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষককেই সাধারণত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর কারণ- অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতায় জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কনিষ্ঠের চেয়ে দক্ষ হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় এর সঙ্গে হাসপাতাল অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য উত্তম পাঠদান পরিকল্পনা, ইন্টার্নশিপ ইত্যাদির বিষয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অপেক্ষাকৃত বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ হয়ে থাকেন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের পক্ষেই হাসপাতালের রোগীদের অধিকতর ভাল চিকিৎসা প্রদান সম্ভব। অর্থাৎ একাডেমিক, প্রশাসনিক ও চিকিৎসা সেবা প্রদান বিষয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের ভূমিকা বেশি।
কিন্তু এই বাস্তবতা বিবেচনায় না এনে যদি কোন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙিয়ে কনিষ্ঠ কাউকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে সেটি অনিবার্যভাবেই অসন্তোষের কারণ হতে বাধ্য। অস্বস্তিকরও। একজন শিক্ষক যিনি কনিষ্ঠ বিভাগীয় প্রধানের অনেক বছর আগে চাকরিতে যোগদান করেছেন এমনকি পদোন্নতিতেও জ্যেষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন; তার পক্ষে কি কনিষ্ঠের নেতৃত্বে দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে করা সম্ভব? সম্ভব না। মুখে না বললেও তিনি যে কর্মস্থলে স্বপ্রণোদিত উৎসাহে কাজ করতে পারছেন না, সেটি সহজেই বোধগম্য।
জ্যেষ্ঠকে ডিঙিয়ে কনিষ্ঠের রীতিবিরুদ্ধ এই মূল্যায়নে একদিকে উপযুক্ত একাডেমিক শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে, মূল্যায়ন না পেয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের হতাশার কারণে চিকিৎসা সেবায়ও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এক্ষেত্রে (বৈষম্যহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া) বড় ভূমিকা রাখতে পারেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক। আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজই তিনি পড়ালেখা করেছেন। বঞ্চিত দুই অধ্যাপক এবং আমিও এই কলেজে পড়ালেখা করেছি। তাই অন্য সহকর্মীদের প্রতি দরদ ও সহানুভূতি একই কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে অধ্যক্ষেরই বেশি বোঝার কথা। বিভাগীয় প্রধানের পদটি সরকারস্বীকৃত কোন পদ না। তাই এটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি নৈতিক দিকটি বিবেচনা করা হয় তাহলে-জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই হওয়া বাঞ্চনীয়। অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা ও কম অভিজ্ঞদের বিভাগীয় প্রধানের পদে দায়িত্ব দেয়া কোন বিচারেই সমীচীন নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট