চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

২২ দিনে সিএমপির ২১ পুলিশ করোনা আক্রান্ত

নাজিম মুহাম্মদ

৭ মে, ২০২০ | ৬:৩০ অপরাহ্ণ

গড়ে প্রতিদিন একজন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশে। গত ২২ দিনে (বুধবার পর্যন্ত) নগর পুলিশের ২১ জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ১৪ জন নগর ট্রাফিক পুলিশের উত্তর বিভাগের। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬ জন। কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ জন পুলিশ সদস্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাফিকের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. শহীদুল্লাহ।
দামপাড়া পুলিশ লাইনের ব্যারাক খালি করার পর এবার থানা-ফাঁড়ির ব্যারাক থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। নিজেদের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি করোনায় কর্মহীন প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী উপহার পাঠিয়েছেন সিএমপি। করোনার সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে নগরজুড়ে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নগরীর পুলিশ লাইনে গত ১২ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত হয় ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল অরুন চাকমা। এরপর থেকে প্রতিদিন কোন না কোন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন। নগর পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী যে ২১ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে দুই জন ট্রাফিকের এটিএসআই, একজন পুলিশ লাইনের মেস ম্যানেজার, অন্যরা কনস্টেবল। সর্বশেষ গতকাল বুধবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সিএমপির সরবরাহ শাখার সহকারী কমিশনার আরিফ হোসাইন।
নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান জানান, করোনাভাইরাস সামাজিকভাবে সংক্রমিত হয়েছে। পুলিশকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি গিয়ে কাজ করতে হয়। যারা কারণে পুলিশ সদস্যরা সংক্রমিত হচ্ছে এমনটি মনে হচ্ছে।
গড়ে প্রতিদিন একজন করে পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, করোনা বিস্তাররোধে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুুুতি নিয়েছি। এরমধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা, পুলিশ লাইনের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার ও সিএমপি স্কুল এন্ড কলেজে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পুলিশ লাইন থেকে বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে নিকটবর্তী আবাসিক হোটেল ও কমিউনিটি সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আমি নিজেই আক্রান্তদের পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের মনোবল শক্ত রাখতে আমরা তাদের পাশে আছি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, প্রতিকূল পরিবেশে মহামারী আকারে রূপ নেয়া এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের টিকে থাকতে হবে। একের পর এক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে তবে-আমরা হতাশ নয় আশাবাদী। সিএমপির সাত হাজার পুলিশ সদস্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা করা যেমন আমার দায়িত্ব তেমনি নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করা আমার দায়িত্ব। তবে সাধারণ মানুষ সহযোগিতা না করলে পুলিশের একার পক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা কোনমতেই সম্ভব নয়।
কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, থানা ও ফাঁড়ির ব্যারাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের দুই শিফটে ভাগ করা হয়েছে। দূরত্ব বজায় রেখে একদলকে ব্যারাকে রাখা হয়েছে। আরেক দলকে থানা এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদল দুই সপ্তাহ ডিউটি করলে আরেক দল দুই সপ্তাহ বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (ওসি) সদীপ কুমার দাশ জানান, থানার তিন তলা ভবন ছাড়াও থানার পেছনে একটি সরকারি ভবন রয়েছে। যেখানে ১৮টি বেডরুম রয়েছে। ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করার কথা ছিলো। করোনার কারণে ভবনটি ভাঙা হয়নি। সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাকলিয়া থানার পরিদর্শক মো. নেজাম উদ্দিন জানান, বাকলিয়া থানার এলাকার কোন আবাসিক হোটেল নেই। তবে থানা ভবনের একাধিক কক্ষ রয়েছে। যেখানে দুই ভাগে পুলিশ সদস্যদের রাখা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু বক্কর জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তাদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৩টি কক্ষকে কোয়ারেন্টিনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ২০টি আইসোলেশন শয্যার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর ১৬ শয্যার ফ্লু কর্নারও চালু রয়েছে। এছাড়াও নারী পুলিশ সদস্যদের কোয়ারেন্টিনের জন্য পুলিশ লাইনে একটি ভবনের সাতটি কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট