চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বোয়ালখালী

ইফতারসামগ্রীতে ভেজালের ছড়াছড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা, বোয়ালখালী

২৬ মে, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালীর গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে ইফতারির সেই পুরোনা ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। দুই দশক আগেও যেখানে দোকানে তেমন বাহারি ইফতারি পাওয়া যেত না, বর্তমান সময়ে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এখন মোড়ে মোড়ে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। আর এ সুযোগে ভেজাল অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করে যাচ্ছে দোকানিরা। ভেজালের বেড়াজালে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের কড়া নজরদারির অভাবে সুযোগ নিয়ে বিষ খাওয়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর, শাকপুরা চৌমুহনী, গোমদ-ী ফুলতল, বেঙ্গুরা বাজার, জোটপুকুর পাড়, কানুনগোপাড়া, দাশের দিঘীর পাড় ও গোলক কানুর বাজার ইফতারসামগ্রীর বড় বাজার। উপজেলার প্রায় প্রতিটি জংশনেই চলছে ইফতারি বিক্রি।
এতে মরিচ্চ্যা, আলুর চপ, বেগুনি, পিয়াজু, পাকোড়া, ডিম চপ, ভেজিটেবল কাটলেট ও চিকেন ফ্রাইসহ আরো কত কি বিক্রি হচ্ছে! যার বেশিরভাগ তৈরিতেই ব্যবহৃত হয় অস্বাস্থ্যকর রং ও পোড়া তেল। এসব রং পেটের পীড়া, হজমের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা, খাওয়ায় অরুচি, বমিভাব, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টি করছে বলে জানান গ্রাম্য ডাক্তার মিন্টু দে।
জিলাপি, বুন্দিয়া ও অন্যান্য মিষ্টি দ্রব্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভেজাল চিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি কর্মকর্তা সঞ্জয় সেন বলেন, এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লোমেট। এছাড়া অধিকতর মিষ্টি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে স্যাকারিন, সুকরালেস ইত্যাদি। তিনি বলেন, ইফতারিকে চিত্তাকর্ষক করার জন্যে মেশানো হয় নকল লাল, হলুদ বা বাসন্তি রং যা শরীরের জন্য বিপদজনক। বেশিক্ষণ মচমচে রাখতে ভোজ্য তেলের সাথে মেশানো হয় পোড়া মবিল। এসবই পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুব খারাপ।
দেখা গেছে, আগের দিনের থেকে যাওয়া বাসি ছোলা-বুট, বিরানি পরের দিনে আবারো প্রক্রিয়া করে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনিসহ নানা ইফতারসামগ্রীতেও ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রেড অক্সাইড নামক রং। উপজেলার প্রায় দোকানেই এর ব্যাপক ব্যবহার। বিক্রেতারা জানান, এ রং না দিলে ক্রেতারা কিনতে চায় না। রং ব্যবহারের কারণে বিক্রি হয় বেশি।
পবিত্র রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় মাছ ও ফলের দোকানে, ফল-সবজি বাজারেও ফরমালিনের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রণ না করায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়াভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এতে করে বেশি দিন টিকে থাকা এসব পচনশীল খাদ্যদ্রব্য দাম ধরে বিক্রি করা যায়। উপজেলা সদরের কয়েকজন ক্রেতা বলেন, যেমনি বেশি দাম তেমনি ভেজাল পণ্যে ভরপুর বাজার। এতে কোনটি আসল কোনটি নকল, বোঝার উপায় নেই। ভেজাল বন্ধে তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জানান।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) একরামুল সিদ্দিক বলেন, ইফতারিতে রঙের ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য সর্বদা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। আমরা ইতোমধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি ও তা অব্যাহত থাকবে। তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য পেলে যেন তাকে জানানো হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট