চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কক্সবাজারে জামায়াতের বিদ্রোহীরা নতুন ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’এ

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার

২৬ মে, ২০১৯ | ১:৪২ পূর্বাহ্ণ

জামায়াত-শিবিরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত নেতা-কর্মীরা ভিড়েছে ভিন্ন প্লাটফর্মে। জামায়াতে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে সদ্য ঘোষিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’র হয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন এসব বিদ্রোহী নেতা-কর্মী। গত বুধবার কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে অভিজাত একটি হোটেলে ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ কক্সবাজার জেলা কর্তৃক আয়োজিত ইফতার পার্টিতে এসব নেতা-কর্মীর ভিড় দেখা গেছে। এসব নেতার কয়েকজনের বক্তব্যেও উঠে এসেছে তারা জামায়াতের নিয়ম-নীতি পছন্দ করেন না। দীর্ঘদিন ধরে তারা জামায়াতে সংস্কারের দাবি করে আসছিলেন। যার কারণে ডাক পাওয়ামাত্রই তারা ‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ নামক এই নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া এই নতুন রাজনৈতিক দল যে জামায়াতের জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাও উঠে এসেছে তাদের বক্তব্যে। এ নিয়ে কক্সবাজার জামায়াতে কয়েকদিন ধরেই চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমনকি মৃদু হাতাহাতি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় জামায়াতের মতো কক্সবাজারেও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের বিষয়ে প্রবল আগ্রহী হয়ে উঠে একটি পক্ষ। এদের অধিকাংশকেই জামায়াতের মূল ধারার নেতারা সাংগঠনিকভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে জামায়াত তাদের অস্বীকারও করে। ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জন আকাঙ্খার বাংলাদেশের সমন্বয়ক মুজিবুর রহমান মনজু। তিনি বলেন, ‘‘জন আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ ইসলামী দল প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, এটি গণমানুষের অধিকারভিত্তিক আন্দোলনের রাজনৈতিক প্লাটর্ফম।’ তিনি বলেন, ‘দেশে এর মধ্যেই ৭০টি ইসলামী দল রয়েছে। ইসলাম নিয়ে আমরা বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাই না। ইসলামী দলও আমরা চাই না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতে চাই।’
জন আকাক্সক্ষার অন্যতম উদ্যোক্তা এডভোকেট তাজুল ইসলাম জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমরা এখানে কোন দল ভাঙতে বা কোন দলে আগুন লাগাতে আসিনি। অধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্যও আসিনি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আইনের শাসন নেই। জনগণের ভাষা তারা বোঝেন না। তারা ব্যর্থ। অপরদিকে বিএনপিও গণমানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেন না। তারা কিছুদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি আর কিছুদিন তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেন। গণমানুষের আকাঙ্খা বুঝার কেউ নেই। যার কারণে জন আকাঙ্খা বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কাশেম বলেন, ‘৮৬ সালের দিকে ছাত্রশিবির করেছি। এরপর কোন দল করিনি। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের হয়ে সরকারি কলেজে সংগঠন প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি বানানোসহ নানা কাজ করেছি। যার কারণে আমাদের পিঠে জামায়াতের সীল পড়ে গেছে। অথচ এই জামায়াত আমরা চাইনি। জামায়াতের সিস্টেমও আমার পছন্দ নয়।
জামায়াতের ক্ষোভের কথা বক্তব্যে তুলে ধরেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেবর মুল্লুক, আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খান কায়সারও। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জন আকাক্সক্ষা অন্যতম উদ্যোক্তা মেজর (অব:) ডা. আবদুল ওহাব মিনার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম ছিদ্দিকী, এডভোকেট এনামুল হক সিকদার, মাওলানা আবদুল আওয়াল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক শামসুল হক শারেক ও এডভোকেট নুরুল ইসলাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট