চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খোঁজ মেলেনি বান্দরবানে অপহৃত আ. লীগ নেতার

নিজস্ব সংবাদদাতা , বান্দরবান

২৪ মে, ২০১৯ | ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে অপহৃত আওয়ামী লীগ নেতা চ থোয়াই মং মারমার এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বুধবার রাতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী কুহালং ইউনিয়নের উজি মুখ পাড়ার খামার বাড়ি থেকে পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বান্দরবান পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর চ থোয়াই মং মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলা শহরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। শহরের প্রেস ক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা আওয়ামী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। জেলা আ.লীগের সহ সভাপতি আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন আ.লীগ নেতা আবদুর রহিম চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর, পৌর মেয়র ইসলাম বেবী, যুগ্ন সম্পাদক লক্ষ্মি পদ দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত দাশ প্রমুখ। অপহরণের ঘটনায় আওয়ামী লীগ জনসংহতি সমিতিকে দায়ি করেছে। একর পর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী সমর্থক হত্যার ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতৃবৃন্দ। পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বান্দরবানে অবস্থান করার সময়ে এ ধরনের ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন নেতৃবৃন্দ। এছাড়া আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ করে বান্দরবানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সরকার দলের নেতৃবৃন্দ। এদিকে অপহরণ ঘটনার পর রাজবিলা, কুহালং ও পাশ্ববর্তী এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের চিরুনী অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা

সম্ভাব্য এলাকাগুলোতে তল্লাশি চালায়। এছাড়া জনসাধারণের নিরাপত্তায় তাইংখালী এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর থানা থেকে পুলিশের একটি বিশেষ দল পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদারের নেতৃত্বে অভিযানে নামে। পুলিশ সদস্যরা রাবার বাগানের বুড়ি পাড়া, উজি মুখ পাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালায়। সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবরও নেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা শহর ও রুমা থেকে সন্দেহভাজন ২ যুবকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এদের মধ্যে শহর থেকে বাঙ্গালহালিয়ার মংক্যচিং মারমা ও রুমা থেকে ১টি গাদা বন্দুকসহ মন্টু মারমাকে আটক করা হয়। রাজবিলার কিবুকছড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে জনমনে আতংকের ছাপ। পাড়াগুলোতে পুরুষ নেই বল্লেই চলে। বুড়ি পাড়ার বাসিন্দা জুম চাষী অংহ্লা মারমা জানান কয়েকদিন আগে জলপাই রংএর পোষাক পরিহিত ১৭ জন যুবক ভারী অস্ত্র নিয়ে পাড়ার কাছ দিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। তারা খবর নিয়ে জানতে পারে দলটি মগ পার্টি। এছাড়া ঐ পাড়ায় জনসংহতি সমিতির বেশ কয়েকটি গ্রুপও মাঝে মধ্যে অবস্থান করে থাকে। এদিকে রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী, ৮ নং রাবার বাগান, ৩ নং রাবার বাগান, বাকি ছড়াসহ আশে পাশের পাড়াগুলোতে এখন থমথমে অবস্থা। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর পর জনমনে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে। পাড়ার লোকজন এমটিই বলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন সন্ধ্যা নামলেই পাড়ার পুরুষরা নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যুবকরা এখন পাড়াতে রাত কাটায় না। কোন কোন এলাকায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে পাড়ার লোকজন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার জানান চ থোয়াই মংকে উদ্ধারে পুলিশ সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। সাথে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও অভিযানসহ টহল জোরদার করেছে। তবে কোন সন্ত্রাসী দল চ থোয়াই মংকে অপহরণ করেছে তা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। কারণ এলাকায় মগ পার্টি জনসংহতি সমিতিসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ তৎপর রয়েছে। এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বলে এসপি জানিয়েছেন। বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা জানান, চ থোয়াই মং খুবই সাধারণ মানুষ। আমার যেটা জানতে পেরেছি তা হলো জনসংহতি সমিতির সন্ত্রাসী গ্রুপ তাকে অপহরণ করেছে। তাকে দ্রত মুক্তি দেয়া না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিকে আওয়ামী লীগ জনসংহতি সমিতিকে অভিযোগ দিলেও জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি উছোমং মারমা জানান, জনসংহতি কোন ভাবেই অপহরন ও সন্ত্রাসী তৎপরতার সাথে জড়িত নয়। যারা চ থোয়াই মংকে অপহরণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি। উল্লেখ্য গত ৯ মে ওই এলাকায় সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক জয় মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে গত ৭ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির কর্মী বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। অপহরণ করা হয় ফোলাধন তংচঙ্গা নামের অপর কর্মীকে। সর্বশেষ বুধবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা চ থোয়াই মং মারমাকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। একের পর এক হত্যার ঘটনায় এলাকায় চরম আতংক দেখা দিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট