চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই অপহরণকারী গ্রেপ্তার শিশুসহ ৩ ব্যবসায়ী উদ্ধার

সাতকানিয়ায় ৮০ হাজার টাকা ও ইয়াবা উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা , সাতকানিয়া

২৩ মে, ২০১৯ | ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় ৩ মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী ও ১ শিশু কন্যাকে অপহরণ করে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টাকালে ২ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে একজনকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের মোনাফ চেয়ারম্যানপাড়াস্থ মো. নাজিমের ভাড়াটিয়া বাসা থেকে আরেকজনকে একই ইউনিয়নের তেমুহানী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। ৩ মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী ও ১ শিশু কন্যাকে অপহরণকারীদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয় বলে থানা পুলিশ জানিয়েছেন। অপহরণকারী ফারুকের হেফাজত থেকে ৮০হাজার নগদ টাকা ও ২৮টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সামিয়ার পাড়ার মো. সোলাইমান ড্রাইভারের ছেলে মো. ফারুক আজিজ ওরফে টাইগার ফারুক (২৭) এবং একই ইউনিয়নের তেমুহানী এলাকার আহমেদ ছফার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৮)। উদ্ধারকৃতরা হলো, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার হাসানপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মো. শিপন (২৬), একই জেলা ও থানার বায়রা গ্রামের মো. বেলাল হোসেনের ছেলে মো. ফরিদ (১৮), বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মৃত মো. জাফরের ছেলে আলী আকবর (৩৩) ও আলী আকবরের বড় ভাই মো. তৈয়বের শিশু কন্যা শাহেদা আক্তার (১১)। এ ঘটনায় থানায় অপহরণ ও মাদক আইনে ২টি মামলা হয়েছে বলে সাতকানিয়া থানার ও.সি (তদন্ত) মো. ওবাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
অপহরণ মামলার বাদি বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সিকদার পাড়ার মৃত মো. জাফরের ছেলে মো. তৈয়ব (৩৭) ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার তৈয়বের শ্বশুড় বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকা থেকে তার ছোট ভাই আলী আকবর, মামাত ভাতিজা মো. ফরিদ ও শিশু কন্যা শাহেদা আক্তার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং রাতে চট্টগ্রামস্থ হামজারবাগ এলাকায় মামাত ভাই মো. শিপনের বাসায় ৩দিন পর্যন্ত অবস্থান করে । উল্লেখ্য, ফরিদ ও শিপন হামজারবাগ এলাকায় মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে। তৈয়বের ছোট ভাই আলী আকবর তাদের বলে-বান্দরবানে আম ও লিচুসহ মৌসুমী ফলগুলো সস্তা পাওয়া যায়। একথা বললে, ফরিদ ও শিপন ১লাখ ১০হাজার টাকা জোগাড় করে। গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিপন, শিশু কন্যা শাহেদা আক্তার, ফরিদ ও আলী আকবর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে শিপনের বাসা থেকে বের হয়ে বাসযোগে কেরানীহাট পুলিশ বক্সের সামনে নামে।
উদ্ধারকৃত মো. ফরিদ বলেন, কেরানীহাট যখন নামি তখন ইফতার শেষ হয়েছে। পরে দোকান থেকে সিগারেট ও পান কিনতে গিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করলে সম্ভবত অপহরণকারীরা তা দেখে ফেলে। পরে আমরা সিএনজি চালিত ট্যাক্সিযোগে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক দিয়ে মনতলা এলাকায় পৌঁছলে আমাদের ট্যাক্সিটি গতিরোধ করে। এসময় ৭/৮জন অজ্ঞাতনামা যুবক আমাদের ট্যাক্সিটি ঘুরিয়ে কেরানীহাটের দিকে যেতে বলে। পরে ট্যাক্সিটি থেকে আমাদের কেঁওচিয়ার মোনাফ চেয়ারম্যান পাড়াস্থ মো. নাজিমের পরিত্যক্ত ঘরের সামনে নামিয়ে দিয়ে ট্যাক্সিটি চলে যায়। পরে ওই ঘরটিতে আটকে রেখে ফারুক আমাদের বলে, তোরা ইয়াবা ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ফারুক ও তার সহযোগীরা ফরিদের কাছে থাকা ১লাখ ও শিপন থেকে ১০হাজার টাকা জোরপূর্বক কেড়ে নেয় এবং বলে তোরা যদি টাকা ও মোবাইলগুলো আমাদের দিয়ে চলে যাস, তাহলে তোদের কোন ক্ষতি হবে না। না-হয় তোদের পুলিশে দিব। এই কথা বললে-আমরা পুলিশ হেফাজতে যেতে রাজি হই। পরে পুলিশ এসে হাতকড়া পরিয়ে আমাদের থানায় নিয়ে যায়। পরে থানার ওসি (তদন্ত) উদ্ধারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি সন্দেহ হয়।
এ ব্যাপারে সাতকানিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. ওবাইদুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকৃতদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খটকা লাগে। পরে আমার নেতৃত্বে অফিসার এস.আই নাছির উদ্দীন রাসেল, মাহমুদুল করিম ও এ.এস.আই জিহাদ আলীসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ও মোবাইল ট্র্যাকিং করে প্রথমে অপহরণের মূল হোতা ফারুককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ফারুকের জিজ্ঞাসাবাদে তার সহযোগী সাইফুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, অপহরণকারী ফারুকের হেফাজত থেকে ৮০হাজার টাকা ও ২৮পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উদ্ধারকৃতদের নিকটাত্মীয় মো. তৈয়ব বাদি হয়ে ফারুক ও সাইফুলসহ তাদের অন্যান্য পলাতক সহযোগীদের আসামি করে অপহরণ ও এস.আই মাহমুদুল করিম বাদি হয়ে মাদক মামলা দায়ের করে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা বলেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে মৌসুমী ফল কেনার জন্য ৩ ব্যবসায়ী বান্দরবান যাচ্ছিল। তাদের সাথে এক শিশু কন্যাও ছিল। কেরানীহাট থেকে ট্যাক্সিযোগে বান্দরবান যাওয়ার পথে অপহরণ করে ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল অপহরণকারী ফারুকসহ তার সহযোগীরা। জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগে বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, পুলিশের উপর হামলা ও মাদক মামলা ছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট