চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খাতুনগঞ্জে ফের আতঙ্ক

ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা চার কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার চেক প্রতারণা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ মে, ২০১৯ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

অবিশ্বাস আর প্রতারণা যেন পিছু ছাড়ছে না চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের। গত এপ্রিলে ১২৭ কোটি টাকা নিয়ে দুই ব্যবসায়ী লাপাত্তার ঘটনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মাঝারি ব্যবসায়ী ছাড়া আমদানিকারক-বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও লেনদেনে অবিশ্বাস বেড়ে চলেছে। গতকাল বুধবার চার কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার চেক প্রতারণার মামলার ঘটনায় এখন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গমের ডিও ব্যবসার চেকের বিপরীতে এই মামলা দায়ের করেন আমদানিকারক এক ব্যবসায়ী। খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের মধ্যে লেনদেন নিয়ে আবারো শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে কে ট্রেডিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে মধ্যম হালিশহরের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান টি এন্ড টি এস এন্টারপ্রাইজ। টি এন্ড টি এস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইছাক ব্রাদার্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বনেদি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। বড় ব্যবসায়িক দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নগদ ছাড়াও বাকিতে ও চেকের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। কিন্তু দুই বছর ধরে আমদানিকৃত গমের ডিও ব্যবসার বিপরীতে দেওয়া চেক নগদায়ন হচ্ছে না। সেই অভিযোগে গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইছাক ব্রাদার্সের এমডি হাজি ইউনুছের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে। মেসার্স জে কে ট্রেডিংয়ের পক্ষে হাজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, দুইজন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। সেই সুবাদে আমদানি করা গমের ডিও ক্রয় করে চেক প্রদান করেন হাজি মো. ইউনুছ। ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখার অনুকূলে চার কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি চেক তিন মাস ধরে নগদায়ন হচ্ছে না। বার বার ব্যাংকে ধর্ণা দেওয়ার পর চেকটি ডিজঅনার হয়। এ বিষয়ে আইনি নোটিস দেওয়ার পরও টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না।
আমদানিকারক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চার কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছাড়াও তাঁর কাছে আরও পাওনা আছি। সব চেকের বিপরীতে টাকা নগদায়ন করা হচ্ছে না। সবকটি জন্য মামলা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
গত এপ্রিল মাসে খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভী বাজারে দুই ব্যবসায়ী ১২৭ কোটি নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। এরমধ্যে খাতুনগঞ্জের মেসার্স সফি ট্রেডার্সের মালিক শাহ জামাল ৫৭ কোটি টাকা ও ঢাকার মৌলভী বাজারের দেলোয়ার হোসেন ৭০ কোটি টাকা পাওনা রেখে লাপাত্তা হন। খাতুনগঞ্জের জেনারেল মার্চেন্ট কমিশন এজেন্ট ও চিনির বড় ব্যবসায়ী মেসার্স সফি ট্রেডার্সের মালিক শাহ জামাল ৫০ বছর ধরে পৈত্রিক সূত্রে ব্যবসা করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে উধাও হয়ে যান। খাতুনগঞ্জের কয়েকটি বনেদি ও বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের টাকা মেরে উধাও হয়ে যান দুই ব্যবসায়ী। রমজানের আগে ঘটে যাওয়া বড় প্রতারণার ঘটনায় প্রভাব পড়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়। দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের গোড়াপত্তন থেকে মুখের বিশ্বাসে কোটি কোটি টাকার লেন-দেন হয়ে আসছে। কিন্তু ১৯৮৩ সাল থেকে টাকা মেরে প্রতারণার ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে বিশ্বাসের লেনদেনের চিড় ধরে। প্রতারণা ও লাপাত্তার ঘটনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট