চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

হৃদরোগ ইনস্টিটিউট জরুরি
হৃদরোগ ইনস্টিটিউট জরুরি

হৃদরোগ ইনস্টিটিউট জরুরি

চমেক হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইউনিটে রোগী ৪ গুণ ঢাকায় ১৪ বিশেষায়িত হাসপাতাল, চট্টগ্রামে নেই

ইমাম হোসাইন রাজু

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চার থেকে পাঁচ ভাগ মানুষই হৃদরোগে আক্রান্ত। এছাড়া এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৩০ ভাগ মানুষ। দেশে রোগজনিত মৃত্যুর শতকরা ১৭ ভাগই হচ্ছে হৃদরোগের কারণে। বাংলাদেশের হৃদরোগজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে হৃদরোগের সংখ্যাও। যার মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলেই আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক বলে জানান চিকিৎসকরা।

কিন্তু এসব রোগীদের চিকিৎসায় চট্টগ্রামে নেই কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল। তাই এ অঞ্চলের হৃদরোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদানে চট্টগ্রামে পৃথক হৃদরোগ ইনস্টিটিউট বা বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন জরুরি বলে মনে করেন এখানকার চিকিৎসকরা। তাদের মতে, রাজধানী ঢাকায় পৃথক পৃথক ১৪টি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। তারমধ্যে শুধুমাত্র হৃদরোগীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি দু’টি হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় বিভাগ চট্টগ্রামে নেই কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল। তাই এ বিষয়ে সরকার দৃষ্টিপাত করবে বলে আশা এখানকার চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের। যদিও এ অঞ্চলের হৃদরোগে আক্রান্তদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই ভরসা রাখতে হচ্ছে। সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়েই রোগীদের সেবা প্রদান করছেন এ বিভাগের চিকিৎসকরা। তবে তাদের মতেও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হৃদরোগ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা সময়ের দাবি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগ ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লার দক্ষিণাংশ বিশেষ করে লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একাংশসহ প্রায় চার কোটি জনগোষ্ঠী সরকারি পর্যায়ে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য এই বিভাগের উপর নির্ভরশীল। এই বিশাল ভূখণ্ডে এটাই একমাত্র টারশিয়ারি কেয়ার সরকারি হৃদরোগ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে ১৬ শয্যার করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), পোস্ট সিসিইউ, ছয়টা ব্লকে সাধারণ ওয়ার্ড, একটা হার্ট ফেইলিউর ক্লিনিক, দুইটি ক্যাথল্যাব, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইটিটি, হল্টার ও অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা বিদ্যমান। হৃদরোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবাদানে প্রতিষ্ঠিত ‘ডা. ফজলে রাব্বি মুক্তিযোদ্ধা ব্লক’ এই বিভাগে অবস্থিত। যা এদেশে প্রথম। নিয়মিত করোনারি এনজিওগ্রাফি, বেলুন এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেনটিং, পেসমেকার প্রতিস্থাপন সরকার নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে যুগোপযোগী হৃদরোগ চিকিৎসা প্রদানের জন্য এই বিভাগ ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

এ বিভাগে সর্বমোট একশ শয্যার বিপরীতে প্রতিনিয়ত ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি তাকে। প্রায় ২০০ জন রোগী প্রতিদিন হৃদরোগ বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে। প্রতিনিয়ত এই বিভাগে নির্ধারিত শয্যা সংখ্যার চারগুণ রোগী ভর্তি থাকে। নিতান্ত বাধ্য হয়ে শয্যার বাইরে ভর্তি এসব অতিরিক্ত রোগী ওয়ার্ডের বারান্দায়, করিডোর ও অন্যান্য স্থানের ফ্লোরে থাকতে বাধ্য হয়। এতে হার্ট এটাক ও অন্যান্য গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত এসব হৃদরোগীদের চিকিৎসা ও বিশ্রাম ব্যাহত হয় বলে মনে করেন এখানকার চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালের বেডের পরিবর্তে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসাদান চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত তো নয়ই, তা অমানবিকও বটে।

চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রবীর কুমার দাশ পূর্বকোণকে বলেন, ঢাকার বাইরে কেবল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ চালু রয়েছে। এখানে নিয়মিত হার্টের অপারেশন হচ্ছে। এছাড়া এখানে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগ, ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগও চালু আছে। এখানে শিশু হৃদরোগ বিষয়ে একজন সহযোগী অধ্যাপক ও একজন সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে। এই বিভাগের কর্মকা- শুরু করতে গত ২০১৮ সালের ২৬ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাগাদা দেওয়া হয়। এসব বিভাগ সমূহের কর্মকা- সচল রাখতে ও তা প্রত্যাশামাফিক বজায় রাখতে হৃদরোগ বিভাগের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই। হৃদরোগ বিভাগের সাথে এই বিভাগুলোকে প্রস্তাবিত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অধীনে এনে সমন্বিত হৃদরোগ সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

এছাড়া বর্তমানে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুইজন সহকারী অধ্যাপক, একজন রেজিস্ট্রার ও চারজন সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ বিদ্যমান। পরিতাপের বিষয় এই বিভাগে সাংগঠনিক কাঠামোগত কোন অধ্যাপকের পদ নেই। অথচ এমডি (কার্ডিওলজি) ডিগ্রির সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এমডি (কার্ডিওলজি) থিসিস গাইড করতে নূন্যতম একজন অধ্যাপক থাকা আবশ্যক বলেও মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এ প্রসঙ্গে পূর্বকোণকে বলেন, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এখনও চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হৃদরোগী বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। একটা পৃথক হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এই প্রবণতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে আগামী বৈঠকে মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করব। যাতে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট