চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফেনসিডিল ‘রাজ্য’ ডেবার পাড়

আয়তন: ১.৪২ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা: ১ লাখ ৯০ হাজার ভোটার: ৪০ হাজার ৭শ জন

আল-আমিন সিকদার

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদকে অনেকে ব্যাংক পাড়াও বলে থাকেন। কারণ, এখানে দেশের সকল ব্যাংকের শাখা রয়েছে। বাণিজ্যিক এ এলাকার বড় একটি অংশই পড়েছে চট্টগ্রাম শহরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে। এখানেই রয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইস্ট্রাস্ট্রির মালিকানাধীন বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত দেশের একমাত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটিও। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো এ ওয়ার্ডের চারদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরও প্রচুর বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। চট্টগ্রামের বিশেষায়িত সরকারি কমার্স কলেজটিও এই ওয়ার্ডে অবস্থিত। আছে চট্টগ্রামের প্রথম তারকা মানের হোটেল আগ্রাবাদও। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর। রয়েছে ব্রিটিশ আমলের আগ্রাবাদ ডেবা। নিয়মিত পরিচর্যার সুবাদে জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরটি তার অস্তিত্ব ধরে রাখলেও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত আগ্রাবাদ ডেবাটি। একসময় রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বসবাসের জন্য এ ডেবার পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বেশ কিছু ঘর। তবে সেগুলো এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। সন্ধ্যা নামলেই এ ডেবার পাড়ে বসে ফেনসিডিলের আসর। যার প্রমাণ এখানকার নালা ও ডেবায় ভাসতে দেখা যায় অসংখ্য ফেনসিডিলের খালি বোতল।

বাণিজ্যিক এলাকার একটু পিছনেই যে প্রশাসনের নজর নেই তা নয়, খোদ বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোতেও নজর নেই। কারণ, এসব ভবনের সামনে বিকাল গড়াতেই জমে ওঠে অস্থায়ী দোকান-পাট। দেশি-বিদেশি জুতার জন্য নগরীতে বেশ নাম ডাক রয়েছে এখানকার ফুটপাতের। অভিযোগ রয়েছে কথিত রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি পুলিশকে ম্যানেজ করে ফুটপাত দখল করে বাণিজ্য চালিয়ে আসছে একটি চক্র।

স্থানীয়রাও দোকান বসিয়ে ফুটপাত ও সড়ক সংকুচিত করার অভিযোগ তুলে ধরার পাশাপাশি পূর্বকোণকে জানিয়েছেন এই এলাকায় মাদকের ভয়াবহতার কথা।

মাদকের সহজলভ্যতা এবং এর বিস্তারের কথা জানিয়ে পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে মাদক সেবন ও ব্যবসা করে থাকে। আমরা বাধা দিলে তারা ঝামেলা করে। এছাড়া আর আমাদের এলাকা নিচু হওয়ায় জলাবদ্ধতার সমস্যাও এখানে আছে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে পানি উঠে। এছাড়া এখানকার নামকরা আগ্রাবাদ হোটেলের সামনেও পানি থাকে প্রত্যেক বর্ষায়। ভবিষ্যত কাউন্সিলরের কাছে আমরা এই সমস্যার সমাধান চাই’।

৩০ বছর ধরে ২৮ নং পাঠানটুলি ওয়ার্ডে বসবাসকারী এক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় বখাটেদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এছাড়া কিশোর গ্যাং এর সমস্যাও এই ওয়ার্ডে রয়েছে। তাদেরকে কিছু বললে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করে, ফলে তেমন কেউ বাধা দেয়ার সাহস পায় না। প্রশাসনের তদারকি থাকলে এই সমস্যাগুলো থেকে আমরা রক্ষা পাবো আশা করছি। আর বর্ষাকালে জোয়ারের পানির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এখানে।
১৯৯৩ সাল থেকে এই ওয়ার্ডে বসবাস করছেন আশিষ দাশ গুপ্ত। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বহিরাগতরা এসে মাদক সেবন করে, স্থানীয়রা এই মাদকের সাথে জড়িত নয়। আর ব্যাংক পাড়াতে ফুটপাত দখলের কারণে মানুষ হাঁটার জায়গা পায় না, বিকেল হলেই হকাররা ফুটপাতে বসে পড়ে। আমি নিজেও এই সমস্যার সম্মুখিন হই। আমি চাই ভবিষ্যত কাউন্সিলর এবং প্রশাসন যাতে এই বিষয়টি খেয়াল রাখেন’।
পাঠানটুলি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. আব্দুল কাদেরের কাছে জানতে চেয়েছি মাদকের ভয়াবহতা ও ফুটপাতের দখল বাণিজ্যের বিষয়ে। তিনি অবশ্য এজন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন তাঁর বক্তব্যে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা প্রশাসনের, আমি তো জনগণের সেবক। সেবক হিসেবে আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করি মাদক দমনে প্রশাসনকে সহায়তা করতে। এই ওয়ার্ডে মিনি টেকনাফ নামে একটি এলাকা ছিল, যেখানে ইয়াবার সেবন ও বিক্রয় চলত। সেখানেও আমি বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি এবং বেশ কয়েকজনকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি। বর্তমানে সেখানে আর মাদক নেই বললে চলে। তবে আমাদের অভিযান চলবে’।

ফুটপাত দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে বাদামতলী পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন মেজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। অভিযানের সময় তারা উঠে গেলেও পরে ঠিকই আবার বসে যায়। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনের সময় যখন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে এসেছিলেন তখনও আমি টানা ২৯ দিন এই ফুটপাত দখলমুক্ত রেখেছিলাম। তবে হকার নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় তারা আবার ফুটপাতে বসেছে। প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতাও তারা পায়। কারণ এদেরকে চাঁদা দিয়ে থাকে এই হকাররা’।

ওয়ার্ডের উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য আমি প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাজ সমাপ্ত করেছি এবং প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এই বরাদ্দের মধ্যে সাইক্লোন সেন্টারসহ আধুনিক একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করেছি, এর পাশাপাশি একটি কালভার্ট এবং বিভিন্ন নালা-নর্দমার কাজ করেছি। এছাড়া মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমি আমার ওয়ার্ডে বিভিন্ন কাজ করেছি। আর এলাকার সৌন্দর্য বর্ধণের কিছু কাজ চলমান রয়েছে। তবে আমার একটি কাজ এখনও বাকি রয়েছে। সেটা হল, হোস্টেলের পাশে মাদারবাড়ি বাইপাস থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত যে রোডটি আছে সেটি প্রশস্ত করা। জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে এবং ডিসি সাহেব ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের একটি তালিকা আমাদের দিয়েছেন। তাদের এই ক্ষতিপূরণ আমরা দিয়ে দিতে পারলে এই রোডের কাজ শুরু করতে পারবো’।

এদিকে নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেলেও স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কাউন্সিলর মো. আব্দুল কাদের।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এই ওয়ার্ডে নির্বাচন করবেন তিনবারের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজুরুল ইসলাম বাহাদুর। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় শিক্ষার প্রসার ও মান উন্নয়নে আবেদিয়া স্কুল, জমির উদ্দীন স্কুল, আব্দুর রশিদ স্কুলের পুনঃনির্মাণ ও নিজের জায়গায় খাজা আজমীর কেজি স্কুল, গ্রামার স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছি। এছাড়া প্রায় ৬০ টি সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ এবং সড়কের আলোকবাতির ব্যবস্থা করেছি’।

এবার নির্বাচিত হলে এলাকার মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নির্মূলে প্রশাসনের সহায়তায় এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা
নিশ্চিতকরণ এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন সাবেক এই কাউন্সিলর। এছাড়া নিজ উদ্যোগে এলাকায় একটি মহিলা কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণের আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়বেন এই ওয়ার্ডের সভাপতি জামাল উদ্দিন জসিম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা ও মাদকদ্রব্য। আমি এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কাজ করে যাবো’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট