চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পটিয়ায় মিল্কভিটার প্রকল্প

অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত!

হ জালিয়াতির মাধ্যমে জমির টাকা বিক্রেতার একাউন্টে নয়, অন্যের একাউন্টে জমা হ ‘টাকা মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দীনের স্ত্রীর মালিকাধীন মেসার্স হুমায়ারা ডেইরি ফার্মের হিসাবে স্থানান্তর হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় মিল্কভিটার প্রকল্পের জন্য কেনা ২০ শতক জমির প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন হায়দারের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত জমির মালিক স্থানীয় ব্যক্তি মো. আবদুন নুর এর ব্যাংক হিসাবে পে-অর্ডার জমা না করে আবদুল নুর নামে আরেক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমি বিক্রির ৫৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা জমা করে আত্মসাত করা হয়। ওই টাকা একই দিন স্থানান্তর হয় মিল্কভিটার স্থানীয় পরিচালক ও চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন হায়দারের স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের নামে।

জমি রেজিস্ট্রির পর টাকা চাওয়ায় মো. আবদুন নুরকে উল্টো পুলিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিকার চেয়ে জমি বিক্রেতা মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সরকারের যুগ্ম সচিব অমর চান বণিক, পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার, মো. আবদুল নুর (তাঁর হিসাবে পে-অর্ডার জমা হয়) ও মেসার্স হুমায়ারা ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী (পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দারের স্ত্রী) কাছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী মনতোষ বড়ুয়ার মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠান।
আইনজীবী মনতোষ বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুন নুর মিল্কভিটার কাছে ১০ গ-া বা ২০ শতক জমি বিক্রি করেন। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার মুহূর্তে তাঁর টাকা বা পে-অর্ডার পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ১৪ জুলাই জমি রেজিস্ট্রি নিয়ে আসল মালিক আবদুন নুরকে মিল্কভিটার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পে-অর্ডার দেয়নি।

মনতোষ বড়ুয়া আরও জানান, মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ ঢাকার সোনালী ব্যাংক তেজগাঁও শাখা থেকে জমি বিক্রেতা মো. আবদুন নুরের নামে ৫৭ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি পে-অর্ডার (নম্বর সিডি ১০০২০৭২৮৯৭) তৈরি করে। পে-অর্ডারটি মইজ্জারটেক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শাখায় জমির প্রকৃত মালিকের প্রায় কাছাকাছি নামে আরেক ব্যক্তি মো. আবদুল নুরের নামে জমা হয়। ওই টাকা একইদিন মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দীনের স্ত্রীর মালিকাধীন মেসার্স হুমায়ারা ডেইরি ফার্মের হিসাবে স্থানান্তর হয়। আসল ব্যক্তিকে পে-অর্ডার না দিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির হিসাবে জমা দিয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছে। এ জন্য দায়ী মিল্কভিটার স্থানীয় পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার। বিক্রেতা টাকা না পেলে জমির রেজিস্ট্রি বাতিল হয়ে যাবে। এ জন্য জমি বিক্রেতাকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

জালিয়াতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমর চান বণিক বলেন, তিনি এখনো আইনি নোটিশ হাতে পাননি। তবে অভিযোগ সম্পর্কে তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন।

মো. আবদুল নুর এ প্রসঙ্গে বলেন, তার ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হলে মোবাইল ফোনে একটি ম্যাসেজ (ক্ষুদে বার্তা) আসে। এরপরই মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দীন হায়দার তাকে কল দিয়ে ব্যাংকে যেতে বলেন। ব্যাংকে গেলে একই দিন তার হিসাবে জমা হওয়া ৫৭ লাখ টাকা ৪১ হাজার টাকা নাজিম উদ্দীন হায়দার তাঁর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে বাধ্য করেন। এই টাকা কোথা হতে কিভাবে এসেছে তার কিছুই তিনি জানতেন না।
জমি বিক্রেতা মো. আবদুন নুর বলেন, ‘তার কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার পর পে-অর্ডার দিতে গড়িমসি করেন নাজিম উদ্দীন হায়দার। কয়েক দিন ঘোরানোর পর তিনি পুলিশের ভয় দেখানো শুরু করেন। অসংখ্য মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এরপর তিনি আইনের আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন’।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও অভিযুক্ত নাজিম উদ্দীন হায়দার জমির প্রকৃত মালিককেই টাকাগুলি তিনি পে-অর্ডার ভাঙিয়ে তুলে দিয়েছেন দাবি করে বলেন, আবদুন নুরকে যারা আমমোক্তারনামা দিয়েছিল তারাই এখন এই টাকা পেয়েছে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি রাজনৈতিক উল্লেখ করেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার জন্যই এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। একজনের নামে আসা পে-অর্ডার আরেকজনের ব্যাংক হিসেবে কিভাবে জমা হল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের সম্মতিতেই এটা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট