চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কত কাল জোয়ারে ভাসবে দ. আগ্রাবাদ

আয়তন : ১.৪৩ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : ২ লাখ ৭০ হাজার ভোটার : ৪৯ হাজার ৩৮ জন

আল-আমিন সিকদার

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সচিবালয় খ্যাত সরকারি বহুতল অফিসপাড়ার অবস্থান চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ আগ্রাবাদ এলাকায়। এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড। সচিবালয় বলার কারণ, দক্ষিণ আগ্রাবাদের এই ওয়ার্ডটির দুইটি ভবনে রয়েছে বেশিরভাগ সরকারি দপ্তরগুলো।

চট্টগ্রামের একমাত্র বিশেষায়িত মা ও শিশু হাসপাতালটির অবস্থানও এই ওয়ার্ডে। শিক্ষার জন্য সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যেমন- আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয়, আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় ও হাতেখড়ি স্কুল এন্ড কলেজ। শুধু কি স্বাস্থ্য আর শিক্ষা। এখানে বিনোদনের জন্য আছে জাম্বুরি পার্ক ও শিশু পার্ক।

এতসব সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখানে গড়ে ওঠেছে বেশ কয়েকটি আবাসিক কলোনি। যেমন : সিডিএ আবাসিক এলাকা, সিজিএস কলোনি ও ব্যাংক কলোনি। এতকিছু থাকার পরেও এই ওয়ার্ডটিতে সমস্যার অন্ত নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জোয়ারের পানিতে এই ওয়ার্ডের একটি বড় অংশ কোথাও হাঁটু আবার কোথাও গলা পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষার সময়তো অবস্থা আরও করুণ রূপ নেয়। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাকে একসময় অভিজাত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হলেও জোয়ারের পানিতে সেই জৌলুস হারিয়ে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পানিতে তলিয়ে থাকতে হয় বলে অনেকেই নিজস্ব বাসাবাড়ি থাকার পরও ভাড়া দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বন্দরকেন্দ্রিক যাদের পেশা সেসব বিদেশি কিছু লোকজনও একসময় সিডিএ আবাসিক এলাকায় থাকতেন। কিন্তু একমাত্র পানির সমস্যার কারণে বিদেশিরা এলাকাটি ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন। জোয়ারের পানি থেকে এলাকাবাসীকে রেহাই দিতে রাস্তা উঁচু করায় অনেক ভবনের নিচতলা বলা চলে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
জোয়ারের সময় যখন জলাবদ্ধতা দেখা দেয় চলাচলের জন্য তখন দক্ষিণ আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিকে রিকশাও পাওয়া যায় না। গত দুই বছর ধরে জলাবদ্ধতার সময়টুকুতে চলাচলের জন্য নৌকার ব্যবহার শুরু হয়েছে। বর্ষার বেশিরভাগ দিনই বন্ধ থাকে এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় চিকিৎসা ব্যাহত হয় মা ও শিশু হাসপাতালের।

এই ওয়ার্ডের আরও একটি সমস্যা মাদক। অভিযোগ রয়েছে, আবিদার পাড়া এলাকাটিতে খোলামেলা বসে মাদকের হাট। অসহনীয় এই সমস্যার কথা তুলে ধরে তার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই এলাকার বাসিন্দা মো. নাসির। কর্মরত আছেন মা ও শিশু হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার মহেশখালটি বিগত ৩-৪ বছর ধরে ড্রেজিং করা হয়নি। জোয়ারের পানি আগে রাস্তায় জমে থাকতো আর অপরিকল্পিতভাবে সড়ক উঁচু করার জন্য সেই পানি এখন ঘরে উঠবে। তবে আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মাদক। ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন চলে এলাকার প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে। আমি চাই এইসব সমস্যা যেন ভবিষ্যত কাউন্সিলর অবশ্যই সমাধান করেন।’
আবিদর পাড়া এলাকার বাসিন্দা শান্ত হাসান মাদকের প্রভাবের কথা জানিয়ে বলেন, ‘এলাকায় দিনের বেলার পরিবেশ ভালো থাকে। কিন্তু রাত হলেই মাদকের ছড়াছড়ি বেড়ে যায়। পরিবেশ এত খারাপ হয়ে যায় যে, ভাড়াটিয়ারা প্রত্যেকদিন আমাদের অভিযোগ দেয়। ইয়াবার টাকার জন্য মারামারি পর্যন্ত হয়। মাদক সেবীদের মাঝে মধ্যে আটক করা হলেও কয়েকদিন পর তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এলাকার একজন যুবক হিসেবে আমি চাই আমাদের এলাকা থেকে মাদক যাতে চিরতরে নির্মূল করা হয়।’

আবিদর পাড়ার নারীরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মাদকের প্রভাব খুবই বেশি। আমাদের ঘরের আশে-পাশে এসে তারা বিরক্ত করে। আমার যদি তাদের বাধা দেই তাহলে তারা আমাদের হুমকি দেয়। আমরা অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছি না। এদের কাউকে পুলিশ আটক করলেও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। আমরা মাদক নামের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’
স্থানীয়দের এসব দুর্ভোগ লাঘবে গত ৫ বছর কি করেছেন তা জানতে চেয়েছিলাম বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম সোহেলের কাছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সর্বমোট ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি, যার মধ্যে ১৭৭ কোটি টাকার কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছি। আর বাকি রয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ। আমি সিডিএতে ৩৭টি, বেপারি পাড়াতে ১০টি, ছোটপুলে ১৫টি, বিল্লা পাড়াতে ২০টিসহ মোট ১৫০টি সড়কের কাজ সম্পন্ন করেছি। এছাড়া আমি এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। রাস্তা অনুযায়ী ড্রেনের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১০ গুণ বাড়ানো হয়েছে।’
মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সময়ে মাদক নির্মূলে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত বাস্তহারা বস্তি আমি উচ্ছেদ করেছি এবং সেখানে আরেকটি আইটি পার্ক করার ইচ্ছা আমার আছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সাথে মিলে আমি চেষ্টা করেছি মাদককে গোড়া থেকে নির্মূল করার, যার ফলে ওয়ার্ড থেকে ৮০শতাংশ মাদক আমি নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। তবে কিছু রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে অসাধু ব্যক্তিরা।’

জোয়ার থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার যে মেগাপ্রজেক্টের কাজ চলছে তা বাস্তবায়ন হলে এবং স্লুইচ গেইট নির্মাণের কাজ শুরু হলে আমাদের এই জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে আমি মনে করি। বছরখানিক এলাকাবাসীকে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হলেও আগামী বছর থেকে আশা করি এলাকাবাসীকে এই সমস্যায় পড়তে হবে না।’
এদিকে সমর্থিত দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আর নির্বাচিত হলে আইসিটি সেক্টর সমৃদ্ধ হাইটেক পার্ক নির্মাণ এবং নির্মাণাধীন ভবন ডিএমডিএফ-এ একটি কমিউনিটি সেন্টার, এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এদিকে বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম সোহেলের সাথে মনোনয়নের দৌড়ে পাল্লা দিয়ে দলের সমর্থন বাগিয়ে নিয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ

সম্পাদক মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী সবুজ। দলীয়ভাবে মনোনয়ন পাওয়ায় তিনি এবার প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। নির্বাচিত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন, আবর্জনা অপসারণ ব্যবস্থাকে গতিশীল করা এবং অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি। কিশোর গ্যাং, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে খেলার মাঠ এবং সাংস্কৃতিক কাজ বাড়ানোর আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।’
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে লড়বেন এই ওয়ার্ডের সাবেক দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং ডবলমুরিং থানা বিএনপির সভাপতি মো. সেকান্দর। নির্বাচিত হলে এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসন ও মাদক নির্মূলসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। এছাড়া নিজ উদ্যোগে এলাকার এতিমদের সহায়তা করার জন্য এতিমখানা নির্মাণের পাশাপাশি এলাকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত মোহাম্মদ ইসকান্দর মির্জা। নির্বাচিত হলে মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল করা, ওয়ার্ডের স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য কবরস্থানের ব্যবস্থা করা, এলাকাবাসীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, ওয়ার্ডবাসীর নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণ ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা, কর্মজীবি ও পথ শিশুদের জন্য সান্ধ্যকালীন স্কুল নির্মাণ ও এলাকার বেকার যুবক ও নারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট