চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাহিদা গবেষণাধর্মী বইয়েরও

অনুপম চৌধুরী

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

সবুজ, পুরো নাম মোহাম্মদ সবুজ। প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত। পড়তে ভালোবাসেন। তাই অফিস শেষে বইমেলায় ঘুরতে এসেছেন এবং পছন্দের তালিকায় থাকা বইগুলো কিনবেন বলেও ঠিক করে এসেছেন। উপন্যাস আর গবেষণাধর্মী বই পছন্দের তালিকায় আগে রেখেছেন। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে চলছে অমর একুশে বইমেলায় গতকাল সবুজ পূর্বকোণকে বলেনÑ ‘প্রতিবছরই মেলায় আসি, মেলায় আসলে অনেক ভালো লাগে। বছরের বিভিন্ন সময় বই কিনি তবে বইমেলার সময় বই কেনার অন্যরকম এক অনুভূতি ঠের পাই। গবেষণাধর্মী বই বেশি পড়ি, তাই কেনার তালিকাও লম্বা থাকে।

এবারও বেশকিছু গবেষণাধর্মী বই কিনব।’ মেলায় গবেষণাধর্মী বইয়ের পাঠকও রয়েছে। তবে সঠিক গবেষণা করা লেখকের অভাব রয়েছে। গবেষণা অনেকভাবে করা যায় কিন্তু সঠিকভাবে সময় নিয়ে গবেষণা করা লেখকের সংখ্যা কম। অনেকে টেবিলে বসেও গবেষণার কাজ শেষ করেন। মেলাও প্রায় শেষের দিকে, মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এরমধ্যে বইপ্রেমী পাঠকরা এখন বই কিনছেন। কারণ মেলায় এরই মাঝে প্রায় নতুন বই এসে গেছে। অনেক লেখকের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় মুদ্রণ চলছে। বইমেলায় প্রতিদিনকার মতো বইপ্রেমীদের আনাগোনা রয়েছে। আর স্টলে স্টলে রয়েছে অন্যান্য বইয়ের সাথে গবেষণাধর্মী বইও। এবং এই বইও কেনার জন্য বেশ পাঠকও রয়েছে।

মুহাম্মদ শামসুল হক, ইতিহাসের খসড়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। সম্পদনার পাশাপাশি লেখালেখিতেও সদা মশগুল। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা নিয়ে নানা গ্রন্থও প্রকাশ পেয়েছে। এবারের অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে নিজেদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছেÑ ‘চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সাথীরা’। বইটি প্রকাশের পর থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানা যায়। এর আগেও লেখকের উল্লেখ্যযোগ্য বইয়ের মধ্যেÑ ‘স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু-প্রমাণ্য দলিল’, ‘স্বাধীনতার বিপ্লবী অধ্যায় বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্য ৪৭-৭১’, ‘আগরতলা মামলার অপ্রকাশিত জবানবন্দি’ অন্যতম।

লেখক গবেষণা নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন ‘জনপ্রিয়তাকে তেমন একটা আমলে নেই নি তাই গবেষণার কাজে হাত দেয়া। গবেষণা কাজটি সময় নিয়ে

করতে হয়, সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গবেষণায় জড়িয়ে পড়ি। আমার চাকরি জীবনের বেশকিছু টাকা গবেষণার পেছনে ব্যয় হয়েছে কেননা প্রতিটা বিষয় স্পটে গিয়ে তুলে আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আমি একটা বইয়ের কিছু বিষয় অন্য একটা বই সূত্র হিসেবে আমার লেখায় দিলাম, যদি ওই লেখা সঠিক না হয় তাহলে আমার বর্তমান লেখায়ও ভুল রয়ে যায়। তাই টেবিলে বসে গবেষণা না করে ফিল্ড ওয়ার্কিংকে বেশি গুরুত্ব দেই।’ লেখকের ইতোমধ্যে আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

এরই মধ্যে বেশকিছু গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, প্রকাশক ও লেখক জামাল উদ্দিন। বলাকা প্রকাশনার স্টলে গেলেই পাওয়া যাবে লেখকের অনেক গবেষণাধর্মী বই। তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩২। গবেষণা কর্ম নিয়ে তিনি পূর্বকোণকে জানানÑ ‘গবেষণা কঠিন কর্ম হলেও বেশ ভালো লাগার একটি কাজ। একবার গবেষণার কাজে বার্মা গিয়ে প্রায় ৪৮ দিন জেলখানায় বন্দী থাকতে হয়েছিল। টেবিলেও গবেষণা হয় কিন্তু তা সঠিক হবার চান্স কম থাকে, তাই মাঠে গিয়ে সঠিক তথ্য তুলে লেখালেখি করলে তা বেশি গুরুত্ব পায়।’

এবার বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে গবেষক শামসুল আরেফীনের গবেষণাগ্রন্থÑ ‘চট্টগ্রামের লোকগান: বিবিধ প্রবন্ধ’। বইটিও বেশ সাড়া ফেলেছে এবারের বইমেলায়। ২০০৪ সালে বলাকা থেকে প্রকাশিত হয় লেখকের প্রথম বই ‘আহমদ ছফার অন্দরমহল’। এরপর থেকে প্রায় ১৭টি বই প্রকাশ করেন তৎমধ্যে বেশির ভাগ বই-ই ছিল গবেষণাধর্মী বই। গবেষণার কাজ নিয়ে পূর্বকোণকে লেখক জানানÑ ‘নব্বই দশকের শুরুতে ছড়া ও কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলাম। শূন্য দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ও সংকলনে অনেক ছড়া ও কিশোর কবিতা লিখেছি। আমি ’৯০ দশকের প্রায় মাঝামাঝি লোকগবেষণায় যুক্ত হই এবং শুরু করি বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবি ও তাদের রচনা উদ্ধার। এ-কারণে আমি শুধু চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার আবিষ্কৃত বিলুপ্ত ও বিস্মৃতপ্রায় লোককবি শতাধিক। লোককবিদের মধ্যে আস্কর আলী প-িত, শাহ্ আবদুল জলিল সিকদার, আমানুল্লাহ, আতর আলী, আবুল খায়ের নক্সবন্দি, ঈছা আহমেদ নক্সবন্দি, খাদেম আলী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও আমি লেখালেখির অনেক ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছি; যুক্ত হয়েছি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায়ও। এসব ক্ষেত্রে আমার যা অর্জন বা অভিজ্ঞতা, আমার মনে হয়েছে, সেসব গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা জরুরি। তাই বই আকারে প্রকাশ করি।’ তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আগে ঠিক করতে হবে আমি কোন বিষয়ের উপর লিখব, তারপর যদি পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তবেই গবেষণায় আসা উচিৎ।’
বিকেলের দিকে তুলনামূলক ভিড় কম থাকলেও সন্ধ্যা হতে হতে বইপ্রেমী পাঠকে ভরে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ। তাই হাতে সময় নিয়ে শেষের দিকে ঘুরে আসুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট