চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘বিদ্রোহী’র মাথাচাড়ায় যতো মাথাব্যথা

চসিক নির্বাচন হ চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা হ ‘দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা মানে দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে অবমাননা করার সামিল’ হ ৮ মার্চের আগে মান-অভিমান সব ঠিক হয়ে যাবে : কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সমর্থিত দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের পদবি জালিয়াতির অভিযোগে চলছে বিষোদ্গার ও কাদা ছোড়াছুড়ি। দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের অনেকেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করাকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে ‘অবমাননা’ বলে দাবি করেছেন দলীয় প্রার্থীরা। এরফলে আ. লীগ ও দলীয় মেয়র প্রার্থীর ভোটেও প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মান-অভিমান থাকতে পারে। আশা করছি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা প্রশমিত হয়ে যাবে।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ডে বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের দুই অংশের দুই সভাপতি মোহাম্মদ মহসীন ও হাবিবুর রহমান তারেক। ছাত্রলীগের আবুল হাসান সুমন। মহসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ মহসীন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা তৃণমূল থেকে ২২ বছর রাজনীতি করে ওঠে এসেছি। দল তৃণমূলকে প্রাধান্য না দেওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তৃণমূলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন করবো আমি।’ এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে প্রিয়নেত্রী আ.লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালবেসে আওয়ামী লীগ করি। তাই দলের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান রেখে দলের মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দিয়েছি। আওয়ামী লীগ আমার প্রতি আস্থা রেখে মনোনয়ন দিয়েছে। কেউ যদি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, তাহলে তারা নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছাড়াও প্রথমবারের মতো সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৯ জন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সংগ্রহ করেছিলেন ৪০৬ জন। দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণায় সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪ জন বর্তমান কাউন্সিলর দলীয় মনোনয়ন পাননি। বিএনপি জামায়াতের ৬টি ওয়ার্ডে এসেছে নতুন মুখ। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডেও এবার দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

সিটি কপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ। এবারই প্রথম কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলের প্রধান শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
৩৪নং পাথরঘাটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে পুলক খাস্তগীরকে। মনোনয়নপত্র নিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দেবাশীষ গুহ (বুলবুল), যুবলীগের মো. দিদারুল আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী পুলক খাস্তগীর বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে ৬ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু। দলের পদবির তথ্য গোপন ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি বলে দাবি করে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে দলের একাংশ। মিন্টুর দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে পুনর্বিবেচনার দাবি করেছেন তারা। এরমধ্যে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত একাধিক নেতা রয়েছেন।
কাউন্সিলর গোলাম হায়দার মিন্টু বলেন, ‘দলের মনোনয়ন না পেলে আমি তাই করতাম। তবে অহেতুক-অবাস্তব বক্তব্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি অসদাচরণ। যা অনেকটা বেয়াদপির সামিল।’
৩৫ নং ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর নুরুল হকের বিরুদ্ধেও উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতদের কয়েকজন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নয় বলে দাবি করেছে তারা। গত প্রেসক্লাবের সামনে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে। তবে এখনো মনোনয়ন সংগ্রহ করেনি দলীয় কোন সম্ভাব্য প্রার্থী।

হাজি নুরুল হক বলেন, ‘আমার পরিবার আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত। আমার দুই ভাই বাকলিয়া ও বক্সিরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছেলে বক্সিরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। দলের সুবিধাভোগীচক্র নির্বাচন আসলে প্রতিবারই এই ধরনের হীন যড়ষন্ত্রে লিপ্ত হয়। এবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে, সেই বিশ্বাস জনগণের উপর রয়েছে আমার।’
১৪নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আবুল হাসনাত মো. বেলালকে। বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা এএফ কবির আহমেদ মানিক দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে বেলালের বিরুদ্ধেও স্বেচ্ছাসেবক দলের পদ-পদবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রতিপক্ষরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমদ। নগরীর অন্যান্য ওয়ার্ডের চেয়ে এই ওয়ার্ডে রাজনীতির চিত্র অনেকটা ভিন্ন। পাহাড় দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে।
কাউন্সিলর এএফ কবির আহমেদ মানিক বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত মুখ্য বিষয় নয়। এটা স্থানীয় সরকারের নির্দলীয় নির্বাচন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। জনগণ যাবে ভোট দেবে, তিনি জয়ী হবেন।’ দলীয় প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার তো দলের পদ-পদবি নেই। আমি কঠিন সমর্থক। দলের সমর্থনে নৌকা প্রতীক থাকলে স্বাগত জানাতাম। এখন তো ব্যক্তি প্রতীক।’

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাসনাত মো. বেলাল বলেন, ‘দল মনোনয়ন না দিলে নির্বাচন করবেন না বলে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন নেত্রীর সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করা তো নেত্রীর সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করা। দলের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই, তারা তো দায়িত্ব পেলে দলের ক্ষতি করবে।’

এছাড়াও ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ড, ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড, ৩৮নং দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডসহ আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা। বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।
১৩ নং ওয়ার্ডে বাদ পড়েছেন বতর্মান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নগর যুবলীগের সদস্য মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, ‘নেত্রী আমাদের মনোনয়ন দিয়েছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করবেন তাদের বিরুদ্ধে নেত্রী আর সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট