চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সংকট সুপেয় পানির, ছড়াছড়ি মাদকের

আল-আমিন সিকদার

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্র উপকূলীয় চট্টগ্রামকে মাদকের প্রবেশদ্বার বলা হয়। কারণ, ইয়াবা অঞ্চলখ্যাত টেকনাফ এই চট্টগ্রাম বিভাগেরই একটি উপজেলা। কিন্তু মরণ নেশা ইয়াবা নামক মাদকটি শুধু টেকনাফেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে গেছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কোথাও কম, কোথাও বেশি। পুরো চট্টগ্রাম শহরজুড়ে এই মাদকটি তার নেশার জাল বিস্তার করেছে। কিন্তু এটি ভয়াবহভাবে তার বিস্তার ঘটিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড রামপুরে। অনেকে আক্ষেপের সুরে এই রামপুরকে বলে থাকেন মাদকের ওয়ার্ড। অভিযোগ রয়েছে, এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলে মাদক কেনা-বেচা ও সেবন। এতো গেলো রামপুর ওয়ার্ডে মাদকের ভয়াল থাবার গল্প। ওয়ার্ডটি ঘুরে এখনাকার এমন আরও অনেক সমস্যা তুলে এনেছে টিম পূর্বকোণ। প্রতি বর্ষায় নাকি, এই ওয়ার্ডটির নকশা পাল্টে যায়। আবর্জনা অপসারণে গাফিলতি ও অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বর্ষার পানিতে থই থই করে পুরো ওয়ার্ড। শুধু তাই নয়, এই এলাকায় বসবাসরতদের দীর্ঘদিনের চাহিদা বিশুদ্ধ পানি। সেটাতো পূরণ হয়নি বরং পানির চাহিদা মেটাতে এখানে একসময় বেশকিছু জলাশয় থাকলেও এখন তার বেশিরভাগই অস্তিত্ব হারিয়েছে দখলদারদের থাবায়। এছাড়াও এই সমস্যার সাথে লড়াই করা এই ওয়ার্ডবাসীর সাধারণ জীবন-যাপনকে আরও বিষিয়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত। দিলোয়ারা বেগম ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের স্থায়ী একজন বাসিন্দা। পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ওয়ার্ডে চলাচলের জন্য ভালো রাস্তা-ঘাট নেই, প্রায় রাস্তার বেহাল দশা। আর বিশুদ্ধ পানির ঘাটতিতো রয়েছে। পানির জন্য আমাদের খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়, অনেক সময় রান্নার জন্যও পানি পাই না। এছাড়া এই এলাকায় একটি খেলার মাঠের খুবই প্রয়োজন। আমি চাই ভবিষ্যত কাউন্সিলর যেন এসকল সমস্যার

সমাধান করে দেন’। তারেক আজিজ রুবেল। তিনিও এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। এলাকাবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির খুবই অভাব রয়েছে। আগে এই এলাকায় বেশ কিছু পুকুর ছিল কিন্তু এখন সেগুলো ভরাট হওয়ার কারণে আমাদের খাওয়ার পানির অভাব বেড়েছে। এর বিকল্প হিসেবে অন্তত একটি ডিপ টিউবওয়েল যদি থাকতো তাহলে এই পানির অভাব পূরণ হতো। এছাড়া জলাবদ্ধতা সমস্যা ও একটি খেলার মাঠের অভাব আমাদের এলাকায় আছে। ভবিষ্যত কাউন্সিলরের কাছে আমারা এই সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান চাই’।
মাদকসহ এলাকায় সুপেয় পানির সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বর্তমান কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহ বলেন, প্রভাবশালীদের সহায়তায় এলাকায় চলছে মাদক ব্যবসা।

তিনি বলেন, ‘আসলে মাদক তো চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। তবে আমাদের এলাকায় মাদকের সহজলভ্যতার পিছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের ছায়া। আর এরাই মাদক সেবন ও ব্যবসায় সহযোগিতা করে। ফলে আমাদের প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূল করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। আর কিশোর গ্যাং আমার এলাকায় নেই, এই ধরনের কোনো সমস্যা আছে বলেও আমি শুনিনি’।
পুকুর ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে হাজার দিঘি নামে একটি দিঘি ভরাট হয়েছিল বলে আমি জানি। বর্তমানে এলাকায় তেমন কোনো পুকুর নেই যে তা ভরাট হবে। আমার সময়কালে তেমন পুকুর ভরাট হয়নি। তবে বড় পকুরের পাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় এর গাইডওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে’।

এলাকায় বিশুদ্ধ পানির ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে এলাকায় ওয়াসার সংযোগ ছিল না, যার কারণে বিশুদ্ধ পানির একটা ঘাটতি ছিল। তবে বর্তমানে প্রায় ঘরে ওয়াসার সংযোগ থাকায় এই সমস্যা অনেকটাই কমে এসেছে’।
বিগত বছরগুলোতে কি কি উন্নয়ন করেছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য আমি প্রায় ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি, যার মধ্যে প্রায় ২৭ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। আর বাকিগুলোর কাজ সমাপ্ত করেছি। আমি হালিশহর রোডসহ এলাকার প্রায় সব কাঁচা সড়ক পাকা করেছি এবং অনুন্নত সড়কও সংস্কার করেছি। এছাড়া সড়কে আলোক বাতির ব্যবস্থাও করেছি’।
দলীয় মনোনয়ন না পেলেও আগামী সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন এই কাউন্সিলর। পাশাপাশি মেয়র প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর লিটন।

সাবেক এই কাউন্সিলর নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে অত্র ওয়ার্ড থেকে মাদক নির্মূল ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া নির্বাচিত হলে অত্র ওয়ার্ডে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভূমি দখলকারীদের দমনেও কাজ করতে চান। এলাকার অবকাঠামোগত ও যুগোপযোগী উন্নয়নে কাজ করার বিষয়েও জানিয়েছেন পূর্বকোণকে।

অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আব্দুর গফুর বাবুল। নির্বাচিত হলে এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং নির্মূল, বিশুদ্ধ পানির অভাব পূরণ, পরিকল্পিতভাবে আবর্জনা অপসারণে কাজ করতে চান তিনি। তার মতে ওয়ার্ডের সুন্দরীপাড়া থেকে মুন্সিপাড়া পর্যন্ত মাদকের ছড়াছড়ি খুবই বেশি। তাই এই সকল স্থান থেকে মাদক নির্মূল এবং সম্পূর্ণ ওয়ার্ডকে সড়কবাতির আওতায় আনার বিষয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে তিনি এলাকার শিক্ষার প্রসারে কলেজ নির্মাণের আশাও ব্যক্ত করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট