চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

উঁচু হয়েছে সড়ক, ভবন গেছে তলিয়ে

আল-আমিন সিকদার

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:২৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর আগ্রাবাদ। বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে খ্যাত আগ্রাবাদ বাদামতলী থেকে একটু উত্তরে এই ওয়ার্ডের অবস্থান।
জাজিম ও তোষকের কাঁচামাল হিসেবে যখন নারিকেলের ছোবড়ার ব্যাপক ব্যবহার ছিল তখনই এই ওয়ার্ডের শান্তিবাগে গড়ে ওঠে ‘চুইচ্চ্যা পাড়া’। নারিকেলে ছোবড়াকে স্থানীয় ভাষায় চুইচ্যা বলা হয়। এছাড়া গত প্রায় এক যুগ আগে থেকে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের দুপাশে দেশি-বিদেশি ফার্নিচারের দোকান গড়ে ওঠায় বেপারি পাড়া থেকে ছোটপুল পর্যন্ত এলাকাটি ফার্নিচার পাড়া হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।

নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি জাজিম আর তোষক জাতীয় জিনিসের প্রতি বিলাসী মানুষের আকর্ষণে ভাটা পড়ায় চুইচ্চ্যা পাড়া কালের সাক্ষী হয়ে থাকলেও এখন সেখানে আর ‘চুইচ্চ্যা’ দিয়ে জাজিম ও তোষক বানানো হয় না। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন এই ওয়ার্ডের শান্তিবাগ এলাকায় অবস্থিত।
এদিকে, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডটিতে গত কয়েক বছর ধরে সংস্কার কাজ চলায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর ভোগান্তি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, সংস্কারের পর সড়কের উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে যাওয়ায় অলিগলি ও রাস্তার পাশের বহু বাড়িঘর এখন বলতে গেলে তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানি কিংবা সামান্য বৃষ্টি হলেই বহুতল এসব বাসা-বাড়ি এক গলা পানিতে নিমজ্জিত হয়। আগামী বর্ষায়ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। অভিযোগ করেছেন, শাখা রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় তাদের চলাফেরা করতে চরম ভোগান্তির বিষয়েও। এলাকার জলাবদ্ধতাসহ এমনই বেশ কিছু সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন মো. রাজু নামে এই এলাকার এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘এই ওয়ার্ড জুড়ে প্রত্যেক বছর জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকে। জোয়ারের পানি প্রায় সময়ই এলাকাকে প্লাবিত করে। তবে এলাকার রাস্তা উঁচু করা হলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। এই সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি চাই। আর এলাকার বাইলেন রাস্তাগুলো খুবই সরু। এগুলো প্রসস্ত করা হবে এমন কথা শুনছি বহুদিন ধরে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এছাড়া নর্দমা সংস্কার ও উঁচু করার যে সুবিধা তা আমরা পাচ্ছি না। নর্দমার পানিগুলো ঠিকই রাস্তায় চলে আসে। ভবিষ্যৎ কাউন্সিলরের কাছে আমার অনুরোধ তিনি যেন এইসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন।’

মো. শাহজাহান বেপারি পাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা ও দোকানদার। তিনি বলেন, ‘বিগত ১০-১২ বছর ধরে আমরা জলাবদ্ধতা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বর্ষাকালে এক কোমর পানি উঠে যায়, তাই ঠিক মত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছি না। গাড়ি চলাচল করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। আর এই সসমস্যাগুলোর কারণে অনেক ভাড়াটিয়া ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। আবর্জনা অপসারণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় ডাস্টবিনের ময়লা রাস্তা ও ড্রেনে চলে আসে। এককথায় পানি নিষ্কাশনে পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এই জলাবদ্ধতা সমস্যা। ভবিষ্যৎ কাউন্সিলরের কাছে তিনি এইসব ভোগান্তির অবসানে সহায়তা চান।’
ওয়ার্ডের বাইলেন সড়কগুলোকে সম্প্রসারণ ও এর উচ্চতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী নাজমুল হক ডিউক। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এই প্রকল্পটি জাইকা করেছে আর এলজিইডি অনুমোদন দিয়েছে। প্রধান সড়কের সাথে এই স্থানগুলো মিলিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ওই প্রজেক্টে রয়েছে এবং তা করা হবে।’

ওয়ার্ডের সরু রাস্তা সম্প্রসারণের ব্যাপারে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তা সম্প্রসারণের কাজটা আসলে সিডিএ করতে পারে। আমাদের এই কাজ করার এখতিয়ার নেই।’
গতবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দেয়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার প্রতিশ্রুতি ছিল এবং আমার কথা আমি রেখেছি। আইটি হাব তৈরি করে সেখান থেকে এক্সেস টু ইনফরমেশনের ২১টি সেবা সহজেই দিতে পারছি।’
এলাকার মাদক নির্মূলে তার পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস ইভেন্টের আয়োজন করেছি। আলোকিত চব্বিশ নামের একটি প্রজেক্ট আমি চালু করেছি। যার মাধ্যমে সৃষ্টিশীল কর্মকা-ের সাথে জড়িতদের আমরা আলোকিত মানুষ হিসেবে সম্মাননা দিয়ে থাকি।’

বিগত বছরগুলোতে তার উন্নয়ন কর্মকা- সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়াদকালে ৬৭টি প্রকল্পে আমি ৩৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করেছি ওয়ার্ডের অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিতে। এলাকার নালা এবং খালগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও রাস্তার সংস্কার কাজ করেছি। এছাড়া ওয়ার্ডের প্রতিটা মানুষের বাসায় আমি ডাস্টবিন পৌঁছে দিয়েছি যার মাধ্যমে এলাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে আমি ব্যাপক পরিবর্তন করতে পেরেছি। এছাড়াও ৬৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে সংখ্যা বাড়িয়ে বর্তমানে তা ১১২ জনে এনেছি। আর এই পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। পাশাপাশি ওয়ার্ডের সীমারেখায় পিসি রোড ও এক্সেস রোড আমরা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর রঙ্গিপাড়া ও মুহুরি পাড়া সহ এলাকার নিচু স্থানগুলোতে আগে বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা হতো এখন অতিরিক্ত বৃষ্টি না হলে সেই সমস্যা হয় না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নেও আমি বেশ কিছু কাজ করেছি। এলাকার ৯৯ শতাংশ শিশু বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা নিতে যায়।’

এই ওয়ার্ডে বিএনপির হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়তে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক এস. এম. ফরিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত ওয়ার্ড গঠন করতে কাজ করবেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে তিনি এলাকাবাসীর জন্যে এম্বুলেন্স উপহার দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া এলাকার সরু রাস্তা সম্প্রসারণ ও সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় একটি আধুনিক ওয়ার্ড কার্যালয় নির্মাণের কথাও জানিয়েছেন তিনি।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট