চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

উত্তর পাঠানটুলির সমস্যার উত্তর নেই

মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা আয়তন : ১.৪২ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : ১ লাখ ৫ হাজার ভোটার : ২৪ হাজার ৯শ জন

আল-আমিন সিকদার

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পাঠানটুলি। জনশ্রুতি রয়েছে, এই ওয়ার্ডে একসময় পাঠান-বিহারিসহ বেশকিছু পাকিস্তানি বংশের মানুষ বসবাস করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান যখন একত্রে ছিল তখন পাঠানরা এই ওয়ার্ডের চৌমুহনী মোড়ে যে খান বাড়ি রয়েছে সেখানে বসবাস করতো। এখন অবশ্যও এখানে পাঠানদের কেউ না থাকলেও, তাদের নাম থেকে যাবে আজীবন। কারণ, তাদের নামেই এই ওয়ার্ডের নাম এখন পাঠানটুলি।

ওয়ার্ড ঘুরে এই ওয়ার্ডের নামকরণের এই ইতিহাস যেমন আমরা জানতে পেরেছি তেমনি জানতে পেরেছি সমস্যা সম্পর্কে। ১.৪২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ওয়ার্ডটি পুরোটাই সিসিটিভি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। তবুও এই ওয়ার্ডটিতে অবাদে চলছে মাদক ব্যবসা। মাদকের ছড়াছড়ির কারণে যুব সমাজ সহজে জড়িয়ে

পড়ছে নেশার সাথে। নেশার টাকার যোগান দিতে বাড়ছে ছিনতাই-চুরির মত ঘটনা। এ সমস্যার পাশাপাশি ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়েও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অভিযোগ ছিল সড়ক দখল করে পশুর বাজার বসানোরও।

উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বসিন্দা মো. নাসির উদ্দীন। নিজ ওয়ার্ডের সমস্যার কথা জানিয়েছেন পূর্বকোণকে। তবে বর্তমানে তার কাছে এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালে পূর্ব ও পশ্চিম সুপারিওয়ালা পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। এর ফলে জনগণের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এছাড়া মাদকের একটি নেতিবাচক প্রভাব আমাদের এই ওয়ার্ডে আছে, যার ফলে যুবসমাজ ধ্বংশের পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই আমরা এমন কাউকে চাই যিনি আমাদের এই সকল সমস্যার সমাধান করে ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করবেন।’
একই এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান। তার মতেও এলাকার প্রধান সমস্যা মাদক ও জলাবদ্ধতা। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় মাদকের প্রভাব খুবই বেশি। এর কারণে আমাদের যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে চলে যাচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক বর্ষায় আমাদের ওয়ার্ডের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়। আমি চাই আমার এলাকায় এমন একজন কাউন্সিলর হবেন যিনি এইসব সমস্যার দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান দিবেন।’
ওয়ার্ডে মহামারি আকার ধারণ করা মাদক সমস্যার কথা স্বীকার করলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. জাবেদ। তবে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা ছাগলের বাজারটি পরবর্তীতে নির্বাচিত হলে উচ্ছেদ করবেন বলে জানান তিনি।

তিনি পূর্বকোণকে বলেন,‘আমি সিটি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া বরাদ্দের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগেও ওয়ার্ডে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলাম সিটি কর্পোরেশন থেকে, ইতিমধ্যে ৩২ কেটি টাকার কাজ শেষ করেছি। বাকি রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার কাজ। আর এই বরাদ্দ দিয়ে এলাকার সড়ক সংস্কার, ড্রেনের উপর স্ল্যাব নির্মাণ, কলেজ ভবন নির্মাণ, ৫ তলা স্কুল ভবন নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আর সিটি কর্পোরেশন থেকে আমার প্রাপ্ত সম্মানি দিয়ে এলাকাবাসীর জন্য একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যা আমার গতবারের নির্বাচনী ইশতিহার ছিল।’
জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় ‘নাছির খান ছড়া’ ও ‘লাল মিয়া ছড়া’ দিয়ে বাটালী পাহাড় হয়ে পানি প্রবাহিত হয় এবং বর্ষা মৌসুমে এর কারণে এলাকা প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে এর সমাধানে আমরা আগে কাজ করতে পারলেও বর্তমানে তা সিডিএর আয়তায় চলে যাওয়ায় আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে আমার প্রস্তাব থাকবে বাটালী পাহাড়টি ঢালাই বা গাইড ওয়াল দিয়ে সংরক্ষণ করা হলে আর জলাবদ্ধতা হবে না। কারণ, এই পাহাড় থেকে ঝড়ে পড়া মাটির কারণে খাল ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’

এলাকায় মাদকের দৌরাত্ম্য নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য প্রত্যেকটি পাড়ায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। যা দ্বারা অত্র ওয়ার্ড থানা থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। তবুও মাদক কারবারীদের দমানো যাচ্ছে না। তবে ইতিমধ্যে আমরা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত এমন বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এছাড়া এর আপডেট জানার জন্য আমি থানার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করি। মাদক নির্মূলে আমার এই কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। জনগণের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন এই বিষয়ে একটু সচেতন হয় এবং প্রশাসনকে সহায়তা করে।’

পোস্তার পাড়ের একপাশের রাস্তা ও ফুটপাত দখলের বিষয়েও আমরা প্রশ্ন করেছিলাম। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখানে যে ছাগলের বাজারটা বসে সেটা এই এলাকার ঐতিহ্যের বিষয়। তবে এটা সিটি কর্পোরেশন ১ বছর আগে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা দেয়। এখন তাঁরা বৈধভাবে ব্যবসা করছে। তবে এই বিষয়ে মাননীয় মেয়র মহোদয়কে আমি বলেছি। সামনেরবার থেকে এখানে হাট ডাকা তিনি বন্ধ করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
বর্তমান কাউন্সিলর মো. জাবেদ আগামী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত মুহাম্মদ রিয়াদ খান। এদিকে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আহামদ জাহেদ।

বিএনপি থেকে কাউন্সিলর পদের প্রার্থী হতে চান মুহাম্মদ রিয়াদ খান। বর্তমানে তিনি জড়িত আছেন বিএনপির রাজনীতির সাথে। এর আগে তিনি ২০১৫ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। নির্বাচিত হলে এলাকা থেকে মাদক ও জলাবদ্ধতা নির্মূলসহ তিনটি বিষয়ের উপর জোড় দিয়েছেন তিনি। যেগুলো হলো- অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কিশোর গ্যাং ও ভূমিদস্যু দমন। এছাড়াও নিজ উদ্যোগে এলাকায় খেলার মাঠ নির্মাণ করার ইচ্ছার বিষয়টিও জানান তিনি।
ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আহামদ জাহেদ পূর্বকোণকে বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পাইনি। তবে স্বতন্ত্র হয়ে লড়বো। এবং নির্বাচনে জয়লাভ করলে এলাকার পয়ঃনিষ্কাসন ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করার পাশাপাশি সরু রাস্তা প্রসস্ত করণে কাজ করবো। এছাড়াও অত্র ওয়ার্ডের সুলতান কলোনি, চানমিয়া বিল ও সুপারিওয়ালা পাড়া থেকে মাদক এবং কিশোর গ্যাং নির্মূলের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট