চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহাসড়কের চকরিয়া অংশে মৃত্যুর মিছিল

চকরিয়ায় ফের ট্রাক-বাস সংঘর্ষে দুই চালক নিহত, আহত ১৫

চকরিয়া সংবাদদাতা

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় চলছে মৃত্যুর মিছিল। আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়ির দুই চালক নিহত ও বাসের অন্তত ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন।

বুধবার দুর্ঘটনায় নিহত এক বাস চালক মো.লিটন (৩৫) ভোলার চরফ্যাশন এলাকার মো.শাহজাহানের ছেলে। আরেকজন ট্রাক চালকের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের স্থানীয় ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিন-চারজনের অবস্থা শংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের কতিপয় সদস্যের ধাওয়া খেয়ে পালানো ট্রাকের সাথে বিপরীতমুখী হানিফ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাস ও ট্রাকের দুই চালকেই নিহত এবং বাসের অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ধাওয়া ঘটনাটি গুজব বলে দাবি করা হয়েছে।

মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোরশেদুল আলম চৌধুরী দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করলেও ট্রাককে কেউ ধাওয়া করেনি বলে জানিয়ে বলেন, এটি অপপ্রচার ও গুজব। একইমুখী নদী নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে হানিফ নামের যাত্রীবাহি বাসের সাথে ট্রাকের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। হানিফ, নদী ও ট্রাক গাড়ি তিনটি জব্দ করা হয়েছে। নদী গাড়িটি দেখতে অনেকটা হাইওয়ে পুলিশের গাড়ির মতো হওয়ায় পথচারীরা ওই গাড়িকে হাইওয়ে পুলিশের গাড়ি মনে করে গুজব রটিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চকরিয়া থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহণের একটি যাত্রীবাহি বাস (ঢাকামেট্টো ব- ১৪- ০৭৯১) কক্সবাজার যাচ্ছিল। বাসটি খুটাখালীর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতি ট্রাকের (নারায়নগঞ্জ ট ০২-০৩২৮) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় বাস ও ট্রাকের চালক ঘটনাস্থলে মারা যায়। আহত হয় বাসের ১৫ জন যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের লাশ পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে।

এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি বানিয়ারছড়া এলাকায় একটি বাস উল্টে ৪ যাত্রী নিহত  ও ২৫ যাত্রী আহত হয়েছিলো। এছাড়া ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে খুটাখালীর মেধাকচ্ছপিয়া এলাকায় পিতা-পুত্র নিহত হয়। এতে পঙ্গুত্ব বরণ করে এক নারী।     

বারবার দূর্ঘটনার নেপথ্যে:

বিভিন্ন সুত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও লবণ পরিবহণে ট্রাকে ওয়াটার প্রুপের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়না। ফলে লবণ গাড়ি থেকে সড়কে গলে পড়ে লবণ পানি। ওই পানি প্রথমে সড়কে জমলেও কুয়িাশা পড়ার পর সড়ক হয়ে পড়ে পিচ্ছিল। ওই অবস্থায় যেকোন গাড়ি ব্রেক কষলে বা বাঁকে গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছলে যায় অথবা অন্য গাড়ির সাথে সংঘর্ষ হয়।

এছাড়া মহাসড়কের চকরিয়ার ৩৯ কিলোমিটার অংশে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। ওই বাঁকগুলোর প্রতিটি অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের ভেতর রয়েছে। ফলে, পর্যটন শহর কক্সবাজারমুখী নতুন কোন চালক গাড়ি নিয়ে আসলেই আগাম সতর্কবার্তা না বুঝে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এছাড়া ফাঁসিয়াখালী থেকে খুটাখালী পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ জনগণের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে চলতে বাধ্য হয়। হাইওয়ে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের অজুহাতে ওই গাড়িগুলোকে জব্দ করতে ধাওয়া দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের পাশ ঘেষেই কতিপয় ব্যক্তি ইট-বালি মজুদ করে ব্যবসা করায় ওই অংশে মহাসড়ক সরু হওয়ায় দ্বি-মুখি গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সড়কের বিভিন্ন অংশের যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্টান ও হাটবাজার রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত গতিরোধক না থাকায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছে পথচারীরা।

এসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও এখনো কোন সুরহা হয়নি বলে জানান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল মাহমুদ।

তিনি বলেন, সড়কে মৃত্যুও মিছিল থামাতে নানা দাবি-ধাওয়া ইতোপূর্বে নিসচা চকরিয়ার পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার স্মরকলিপি দেয়া হয়েছে। করা হয়েছে র‌্যালী ও মানববন্ধন। আমাদের দাবিগুলোর অর্ধেকটা পূরণ হলেও সড়কে দূর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। 

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট