চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে প্রশ্ন

টপসয়েল বিক্রি ও পুকুর খননে আবাদি জমির সর্বনাশ

বোয়ালখালী জড়িত, রাজনৈতিক পরিচয়ে একশ্রেণির সুবিধাভোগী, অভিযোগ স্থানীয়দের।

সেকান্দর আলম বাবর, বোয়ালখালী

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কেরাণিবাজার, তুম্ব্র বিল, জ্যৈষ্ঠপুরা, সূর্য্যখোলা, শ্রীপুর প্রভৃতি এলাকায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে আবাদি জমির টপসয়েল। কোথাও কোথাও খনন করা হচ্ছে পুকুর। কোথাও কোথাও ভিটেবাড়ি তৈরি করতে ভরাট করা হচ্ছে আবাদি জমি। জমির টপসয়েল বিক্রি হচ্ছে ভিটে, খাই ভরাট কিংবা ওয়াসার ভা-ালজুরি প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে। রাজনৈতিক পরিচয়ে একশ্রেণির সুবিধাভোগী অবাধে এ কাজ করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে এমন দাম্ভিকতাও দেখাচ্ছে অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নীরবতায় স্থানীয়দের মনে সন্দেহ বেড়ে উঠেছে।

স্থানীয় কৃষকের অনেকের দাবি, আবাদি জমির টপসয়েল নিয়ে যাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী জমিগুলো উঁচু হয়ে যায়। এতে ওই জমিগুলোও নিচু করতে বাধ্য হয় তারা। এতে জমির উর্বরতা বলতে কিছুই থাকে না। তারা জমির মাটি দিতে না চাইলে নানান হুমকির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান। এছাড়া আবাদি জমির মাঝখানে পুুকুর খননের কারণে পানি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে ইরি মৌসুমে। এতে অনেক জমিতে চাষ করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেরাণিবাজার, তুম্ব্র বিল, জ্যৈষ্ঠপুরা, সূর্য্যখোলা, শ্রীপুর প্রভৃতি এলাকার বড় বড় ধানি বিলে চলছে স্কেভেটর দিয়ে টপসয়েল কাটার মহোৎসব। গত কিছুদিন আগে থানা প্রশাসন কয়েকটি স্কেভেটর আটক করে থানায় নিয়ে গেলেও গত শুক্রবার দেখা যায় আবারও দিনে-দুপুরে অবাধে কাটছে মাটি। আর ছোট মিনি ট্রাকে তুলে নিয়ে তা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খরণদ্বীপে মাটি কাটায় ব্যবহৃত ট্রাকের ড্রাইভার জানান, প্রতি গাড়ি মাটি দূরত্ব অনুসারে বিক্রি করা হচ্ছে। দাম ১ হাজার থেকে ১২শ পর্যন্ত। খরণদ্বীপ কেরাণি বাজারে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তার ধারে সেই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে ভিটে। আবাদি জমির শ্রেণি পরিবর্তন বিষয়ে পাশের কৃষকরা আপত্তি দিলে প্রশাসন ম্যানেজ আছে বলে জানান স্কেভেটরের মালিক জনৈক খোকন। তুম্ব্র বিলের মতো খরণদ্বীপের শস্যভা-ারে ইতোমধ্যে করা হয়েছে ১০টিরও বেশি পুকুর। অন্যদিকে জ্যৈষ্ঠপুরায় টপসয়েল যাচ্ছে ওয়াসার পাইপ লাইনের জন্য করা গর্তের পেটে। এতে এক শ্রেণি লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক।

জানতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মোকারম বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন বেআইনি। আমার এলাকায় এটি প্রকাশ্যে হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছি। থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহ পিপিএম বলেন, কাজটা বেআইনি। আমরা চেষ্টা করি এটি রোধ করার জন্য, তবে নিয়মিত মামলা দিতে পারি না। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত যদি এ কাজটি করে, তবে পুলিশের শতভাগ সহযোগিতা দিতে অসুবিধে হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আছিয়া খাতুন বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। কয়েক জায়গায় আমিও দেখেছি, তবে ওইসময় স্কেভেটর কিংবা ট্রাক কিছুই ছিল না। স্থানীয়রা খননের সময় জানালে সহজে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তবে স্থানীয় অনেকেই দাবি করেন, তারা বিষয়টি একাধিকবার মৌখিকভাবে থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কোন লাভ হয়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট