চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভালো নেই হেলদি ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও

অবৈধ দখলে ফুটপাত ও সড়ক হ আসকার দিঘি ঘিরে বিশাল বস্তি

আল-আমিন সিকদার

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ

৩শ বছর আগে মোগল ফৌজদার নবাব আস্কর খাঁ আরাকানদের পরাজিত করে চাটিগাঁ দুর্গ দখল করেন। দখলের পর দুর্গে মোগলদের প্রায় ১০ হাজার সৈন্য থাকতে শুরু করেন। আর এই সৈন্যদের পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে নবাব আস্কর খাঁ একটি দিঘি খনন করেন। যেটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং জামালখান ওয়ার্ডে এখন ‘আসকার দিঘি’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক এই দিঘিই নয়, এই ওয়ার্ডে রয়েছে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও সৃজনশীল চর্চার অন্যতম ক্ষেত্র চেরাগী মোড়। এছাড়াও তৎকালীন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার করার জন্য এবং শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে তৎকালীন কলকাতার মেয়র যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত তার পিতা যাত্রামোহন সেনের নামে যে হল প্রতিষ্ঠা করেন সেই জেএম সেন হলটির অবস্থানও এই ওয়ার্ডে। বর্তমানে এই ওয়ার্ডটির চারদিকে করা হয়েছে সৌন্দর্য বর্ধন। আছে চট্টগ্রামের নামকরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

২১ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে জামালখানের এই ঐতিহাসিক ইতিহাস যেমন আমরা তুলে এনেছি তেমনি উঠে এসেছে এখনকার সমস্যাগুলোও। যে আসকার দিঘি ৩শ বছরের ইতিহাস বয়ে বেড়াচ্ছে সেই দিঘি এখন অবৈধ বস্তির দখলে। একসময়কার হাজারো সৈন্যের পানির চাহিদা মেটানো এই দিঘিতে এখন গোসল করাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে জামালখান মোড়ে সৌন্দর্য বর্ধন করে পথচারীদের জন্য বসার যে স্থান তৈরি করা হয়েছে সেখানে অবাধে চলে মাদক ব্যবসা। সুযোগ পেলে এই মোড়ে পথচারীদের পথ আটকে সবকিছু কেড়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এছাড়াও এই ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। আর ফুটপাত দখলে নিয়ে দোকান বসানোর অভিযোগতো রয়েছেই।

ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিটন বড়ুয়া বলেন, ‘এলাকার যে সমস্যাটি আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় তা হলো অবৈধভাবে সড়ক ও ফুটপাত দখল। সন্ধ্যার সময় ফুটপাতগুলো কাঁচাবাজারে পরিণত হয়। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণেরও গাফিলতি আছে। আমি চাই প্রশাসন ও ভবিষ্যত কাউন্সিলর যেন এই বিষয়ে কাজ করেন।
হেমসেন লেনের বাসিন্দা ও দোকানদার সুকান্ত দত্ত বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায়। ঘর-বাড়ি আর দোকানে পানি ঢুকে যায়। এছাড়া সরু রাস্তা এবং যানজটের সমস্যাও আমাদের এলাকায় আছে। আমি চাই ভবিষ্যত কাউন্সিলর যেন আমাদের এই সব সমস্যার সমাধান করে দেয়।’
এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনকে ‘জনতার কাঠগড়ায়’ এনে জানতে চেয়েছি সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কারণ, জানতে চেয়েছি জলাবদ্ধতা ও ছিনতাই রোধে তার পরিকল্পনা কি?

উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ্যাকুরিয়ামটি ওয়ার্ডের সৌন্দর্য বর্ধন এবং মানুষের মাঝে নতুনত্ব আনার জন্য করেছি। এখানে ফুটপাত দখলের কিছুই নেই। যে ফুটপাত আগে ৪ ফুট ছিল তা বরং ৫ ফুট হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন হয়েছে।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল ছিনতাই সমস্যা নিয়ে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় ছিনতাই নেই। আর আপনারা যে স্থানে ছিনতাইয়ের কথা বলছেন সেটা চকবাজার ওয়ার্ডে পড়ে। তারপরও আমি সেই নালাতে নেট দিয়ে ঘেরাও করে দিয়েছি। আমি অনুরোধ করবো ভবিষ্যতে যেই নির্বাচিত হবেন তিনি যেন এই বিষয়টি খেয়াল রাখেন, আর আমি নির্বাচিত হলে ওই স্থানকে নিরাপদ রাখার কাজ করবো।’
জামালখান মোড়ে বসার বেঞ্চে বসে মাদকের হাত বদল হয়। এই অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসে নি। তবে আমার ওয়ার্ডের প্রায় স্থানে সিসি ক্যামেরা আছে, সেখানে আমাদের কাছে এরকম কিছু ধরা পড়েনি। আর মাদকের হাতবদল তো সিনেমা হলে, বাসায় বসে বা রেস্টুরেন্টেও হতে পারে। আমি মনে করি আমার মত মাদক বিরোধী মানুষ খুব কমই আছে। মাদক সম্পর্কে সবার আগে পরিবার থেকে সচেতন করতে হবে। তবে, আমি ওয়ার্ডে মাদক বিরোধী অনেক কাজ করেছি। আমার মত করে আমি চেষ্টা করছি মাদক নির্মূলে কাজ করার।’

কী অবদান গত পাঁচ বছরে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে আমি প্রায় ২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। যার মধ্যে ২০ কোটি টাকার কাজ সমাপ্ত হয়েছে, আর চলমান রয়েছে ৫ কোটি টাকার কাজ। এই বরাদ্দ থেকে প্রায় ৩৫ টি রাস্তার সংস্কার কাজ আমি করেছি। জামালখান ঝাউতলা আরবান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীরা যাতে সকল সুযোগ-সুবিধা পায় সেই বিষয়টি আমি নিশ্চিত করেছি। এছাড়া বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে এলাকার গরিব ও সুবিধাবঞ্চিতদের ৭০-৮০ ভাগ ছাড়ের ব্যবস্থা এবং লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে কী করবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসা সেবা সমৃদ্ধ, ফুটপাত ও হকার দখলমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড জনগণকে উপহার দেয়ায় হবে আমার একমাত্র লক্ষ্য।’
বর্তমান কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ছাড়াও এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করতে চাচ্ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও ৩ বারের সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট মো. আবু নাসের, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম চৌধুরী রিন্টু ও জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সুচিত্রা গুহ টুম্পা।

অন্যদিকে বিএনপির হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়বেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু মো. মহসীন চৌধুরী।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা কে, কী বললেন?
জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ৩ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এডভোকেট আবু নাসের দলের মনোনয়ন পেলে এলাকার প্রধান চার সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা, বৈদ্যুতিক আলো, ডোর টু ডোর বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা আরও উন্নত করবো। এছাড়া যুব সমাজকে সুরক্ষা দিতে কাজ করে যাবো।। আমি জয়লাভ করলে এলাকার সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব সমস্যার শতভাগ সমাধানের চেষ্টা করবো।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম চৌধুরী রিন্টু দল থেকে মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে, আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি মানুষের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও অপরাধপ্রবণতা, মাদক, সন্ত্রাসের বিস্তার রোধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

মহানগর যুবদলের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু মো. মহসীন চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডবাসীর কাছে কাউন্সিলরের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবো। ই-সেবা ও জরুরি চিকিৎসা সেবা চালু করার পাশাপাশি সামাজিক তহবিল গঠন করে গরিব বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা ও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করবো। এছাড়াও ওয়ার্ডের সরু রাস্তা প্রশস্ত করার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা-নর্দমায় সংস্কার কাজ করবো।’

সুচিত্রা গুহ টুম্পা জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি প্রথমবারের মত নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচিত হলে নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে ৫ দফা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা জানিয়েছেন। এগুলো হল- আসকার দিঘির পাড়, হেমসেন লেন, শরীফ কলোনি, দেওয়ানজি পুকুরপাড় এলাকার উন্নয়ন। এলাকা থেকে ছিনতাই ও মাদক নির্মূল, রাস্তার উপর অবৈধ গাড়ি পার্কিং বন্ধ ও আবর্জনা অপসারণে সচেষ্ট ভূমিকা পালন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট