ঈদ মানে চাই নতুন জামা কাপড়, জুতো কসমেটিক ও গহনা। বছরজুড়ে এটা সেটা কিনলেও রমজান এলেই ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয় কেনা কাটার উৎসব। ঈদের সময় কেনাকাটার মজাই আলাদা। সবাই চায় একটু ফ্যাশনাবেল ও সুন্দর পোশাকটি কিনতে। কিন্তু বর্তমানে পোশাক, জুতা, কসমেটিকস ও গহনার সাথে নারীদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে যোগ হয়েছে নানা রকম ফ্যাশনাবেল হিজাব। প্রথম রমজান বা তারও এক সপ্তাহ আগে থেকেই মেয়েরা ঈদের পোশাক সেলাই করতে কাপড় কেনায় ব্যস্ত ছিলেন। ইতোমধ্যে পোশাক তৈরি অনেকটা শেষ হলেও অনেকে রেডিমেট পোশাক কেনায় ব্যস্ত । কিন্তু এইসব পোশাকের পাশাপাশি ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন হিজাব ও ওড়না ক্রয়ে। বাহারি এসব হিজাব-ওড়নায় ফ্যাশনের ছোঁয়ায় নারী হয়ে উঠে আরো সুন্দর। এক সময় শুধু পর্দানশীন নারীরা হিজাব ব্যবহার করতেন। কিন্তু বর্তমানে এটি মেয়েদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বয়স্ক নারীদের পাশাপাশি তরুণীরাও এখন হিজাব ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও নকশা করা ওড়নাও হিজাবের মতো করে ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে হিজাব ও ওড়না দুটিই এখন ধর্মীয় ও পরিবেশগত বিষয়কে ছাড়িয়ে ফ্যাশনের জগতে স্থান করে নিয়েছে। শাড়ি, থ্রিপিস, গাউন ও বিভিন্ন আধুনিক পোশাক যেমন শার্ট, জিন্স প্যান্ট, টপ্স, স্কার্ট ও ফতুয়ার সাথেও ফ্যাশন সচেতন মেয়েরা হিজাব ও ওড়না ব্যবহার করছে। গতকাল নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায় হিজাব ও ওড়নার
দোকানগুলোতে নারীদের ভিড় বেশ লক্ষনীয়। ঈদ উপলক্ষে শপিংমলগুলোতে বিভিন্ন নাম ও ডিজাইনের হিজাব, ওড়না এসেছে। নজর কাড়া এসব হিজাব বিভিন্ন নামে পরিচিত। টিসু জর্জেট, নেট এম্ব্রোয়ডারি, নেটের উপর পাথর কাজের হিজাব, ডলার হিজাব, গ্লাস হিজাব, টিসু কারচুপি কাজের হিজাব, প্লেন চুমকি, লেস পিউর জর্জেট, জরি, পুতি ও সুতার হিজাবের চাহিদা বেশি। এসব হিজাবের দাম আড়াই‘শ টাকা থেকে আট‘শ টাকা । পাশাপাশি এবার ঈদ উপলক্ষে মলগুলোতে এসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের ওড়না। নতুন যোগ হয়েছে পাকিস্তানি কাতান, ইন্ডিয়ান কাতান, গুজরাটি কাজের ওড়না, টিসুর উপর জরি কাজ, নেটের উপর পাথর, চুমকি, এম্ব্রোয়ডারি ও পিউর জর্জেটের মধ্যে বিভিন্ন কাজ। এসব ওড়না দুই‘শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। হিজাবের সবগুলো দোকানেই ছিল নারীদের ভিড়। কিনে নিচ্ছে তাদের পছন্দমত হিজাব ও ওড়না। নগরীর টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিপনী বিতান (নিউ মার্কেট), মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, শপিংকমপ্লেক্স, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওশান সিটি, গুলজার, মতি টাওয়ার, চকভিউ, ফিনলে, কনকর্ড, আখতারুর জামান, সিংগাপুর, ব্যাংক্ক ও কেয়ারিসহ নগরীর প্রতিটি শপিংমলে আছে মেয়েদের আধুনিক এ হিজাবের দোকান। সবগুলো মলেই হিজাবে দোকানগুলোতে ছিল মেয়েদের ভিড়। তবে টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিপনী বিতান (নিউ মার্কেট) ও কেয়ারিতে হিজাবের দোকানগুলোতে তুলানামুলক বেশি ভিড় দেখা যায়। কেয়ারিতে হিজাব ও ওড়না কিনতে আসেন হেপি, পিংকি ও চৈতি। তারা বলেন, ঈদের পোশাক কেনা শেষ। এখন পোশাকের সাথে হিজাব ও ওড়না কিনতে এসেছি। এখানে হিজাব ও ওড়নার বিপুল সমাহার রয়েছে। আমরা চারটি হিজাব ও পাঁচটি ওড়না কিনেছি। সবগুলো পোশাকের সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। কথা হয় মতি টাওয়ারে এক্সক্লুসিভ ওড়না হাউসের মালিক মো. ইকবাল হোসেন রনির সাথে। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন ডিজাইনের হিজাব ও ওড়না এনেছি। এসব হিজাব আড়াই‘শ টাকা থেকে আট‘শ টাকা পর্যন্ত আছে। ওড়না দুই‘শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।
মুলত ‘হিজাব’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘ঢেকে রাখা’ বা ‘বন্ধ করে রাখা’। আরব ভাষাতত্ত্ববিদরা বলছেন, ‘আল-হিজাব’ হলো এক ধরনের বাধা, যার মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি আবরণ দিয়ে নিজেকে ঢাকা। বর্তমানে মেয়েরা হিজাব হিসেবে যা পরে সেটি হলো এক ধরনের মস্তক-আবরণী বা এক ধরনের মুখাবরণ বা নেকাব যার সঙ্গে মস্তক-আবরণী সংযুক্ত থাকতেও পারে অথবা না-ও পারে। এটির সঙ্গে দেহাবরণীরও প্রচলন আছে। এটি ধর্মীয় দিক থেকে যেমন ব্যবহারের সুফল আছে তেমনি নিজের চুল ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় হিজাব ব্যবহারে উপকারিতা আছে। বর্তমানে বাহিরে ধূলাবালির কারণে মেয়েদের চুলের স্বাস্থ খুব খারাপ। যা এক মাত্র হিজাব ব্যবহারে অনেক আংশে সমাধান করা যাবে।