চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সত্যের মশালবাহী দৈনিক পূর্বকোণ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

গণমানুষের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণ চট্টগ্রামবাসীর অহংকার। এখন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে পত্রিকাটি। দৈনিক পূর্বকোণ এখন খেটে খাওয়া মানুষের কণ্ঠস্বর। হৃদয়ের মণিকোটায় এই পত্রিকার স্থান সর্বোচ্চ শিখরে। পত্রিকাটির গেট-আপ, মুদ্রণ, শিরোনাম, নিউজ ট্রিটমেন্ট- সবক্ষেত্রেই অনন্য বৈশিষ্ট্য বহন করে। পত্রিকাটি শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের অধিকার ও চট্টগ্রামের ন্যায্য স্বার্থের প্রশ্নে আপোষহীন। আমার সৌভাগ্য যে পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় ১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই আমার সম্পৃক্ততা ছিল। আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র। সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা চর্চার প্রতি ছিল অন্য ধরনের জোঁক।

সে সুবাদে এটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চাচা মরহুম ইউসুফ চৌধুরী (মহান আল্লাহতায়ালা তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন) এর সাথে যোগাযোগ করে মেডিকেল প্রতিবেদক হিসাবে যোগদান করি। পাশাপাশি আমার সিনিয়র বড় ভাই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৈয়দ মোহাম্মদ এরফানও মেডিকেল প্রতিবেদক হিসাবে নিউজ পাঠাতে থাকেন।
প্রতিদিন বিকেলবেলা আমার ডিউটি ছিল ইমার্জেন্সি বিভাগে। কর্তব্যরত চিকিৎসক কিংবা রেজিস্ট্রার খাতায় কতজন রোগী সড়কদুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে কোন্ ওয়ার্ডে ভর্তি আছে তা অনুসন্ধান করা। সেটি সংগ্রহ করে জুবিলী রোডস্থ পূর্বকোণ কার্যালয়ে পৌঁছে দিতাম। তখন তো আর মোবাইল, ইন্টারনেট ও আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা ছিল না।

কম দামি কাগজে হাতে লিখে তৎকালীন চীফ রিপোর্টার মোহাম্মদ বেলাল ভাইয়ের হাতে তুলে দিতাম। তখন ছিলো না কোনো উন্নতমানের অফসেট প্রিন্টিং। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হন্যে হয়ে খুঁজতাম আমার প্রিয় পত্রিকা পূর্বকোণ। নিজের পাঠানো নিউজটি স্বচক্ষে দেখে ভীষণ আনন্দ পেতাম। এভাবে প্রতিদিন আসতে থাকে প্রিয় পত্রিকার পাতায় ঘটনা-দুর্ঘটনাসমূহ। সচিত্র প্রতিবেদনসহ চোখ ধাঁধানো নিউজ আসতে থাকে প্রতিদিনকার পূর্বকোণের পাতায়। ওদিকে বড় ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ এরফানও পাঠাতে থাকে নিউজ। অনেক সময় সাংঘর্ষিক হয়ে যায় কিছু কিছু নিউজ। তা নিয়ে অনেক সময় অফিসে হাসির রোল পড়ে যেত।
পুরোনো সংবাদকর্মীদের মধ্যে এখন শুধুমাত্র ডেইজি মউদুদ আপা ছাড়া কাউকে দেখি না। মোহাম্মদ বেলাল, যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক আতাউল হাকিম চলে গেছেন পরপারে।

দীর্ঘ ৩৫ বছরের এই অগ্রযাত্রা এখনো অদম্য, দুর্নিবার। সাহসী যৌবন নিয়ে ছুটে চল্ছে মেহনতি মানুষের মুখপত্র দৈনিক পূর্বকোণ। দৈনিক পূর্বকোণ শুরু থেকেই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে আছে। আশা করি আগামি দিনগুলোতেও থাকবে।

প্রাধান্য দেবে পাঠকে চাওয়াকে। আমার সৌভাগ্য যে, এই পত্রিকার সাথে মেডিকেল প্রতিবেদক হিসেবে পাঠ চুকিয়ে গেলেও একজন কলাম লেখক হিসেবে যুক্ত আছি। সমাজের নানা অসঙ্গতি, নাগরিক অধিকার, চট্টগ্রামের ন্যায্য উন্নয়ন-অধিকার প্রভৃতি বিষয় লেখায় উঠে আসে। এতে জনসাড়াও পাওয়া যায়।
আমাকে লেখার সুযোগ দেয়ার জন্যে দৈনিক পূর্বকোণের কাছে ঋণী। আশা করি আমার ভালোবাসার এই পত্রিকার সাথে আমার যোগ থাকবে আজীবন। প্রিয় দৈনিক পূর্বকোণ তার নৈর্ব্যক্তিক ও সাহসী ভূমিকার জন্যে শুরু থেকেই পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। নানা জরীপে দেশের সেরা আঞ্চলিক পত্রিকার স্বীকৃতি, সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছে।
আমার দৃঢ় বিশ^াস আগামিতেও পূর্বকোণের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। চিরকাল পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত থাকুক আমার প্রাণের পূর্ণস্পন্দন দৈনিক পূর্বকোণ। জয় হোক সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার।

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক সভাপতি,
রাউজান ক্লাব জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট