চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বোরো মৌসুম

৩ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি

দিঘিনালা ২০০০ সাল থেকে স্লুইস গেট অকেজো, সেচ সংকটে আমন ছাড়া অন্যকোন ফসল চাষাবাদ সম্ভব হয় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা, দিঘিনালা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দিঘিনালায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে বলে জানা গেছে।
সেচ সুবিধা না থাকায় এসব জমিতে একমাত্র আমন ছাড়া অন্যকোন ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না বলে জানিয়ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নের বোর্ডের অর্থায়নে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে কয়েকটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলেও সেগুলো দীর্ঘদিন যাবত অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় কৃষকদের কোনো প্রয়োজনে আসছে না। যে কারণে চলতি বোরো মৌসুমে তীব্র সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। সেচ সুবিধা নিশ্চিতে স্লুইচগেট কার্যকর করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সেচ ড্রেন নির্মাণের দাবি ভুক্তভোগী কৃষকদের। উপজেলার বাবুছড়া, দিঘিনালা, কবাখালী, বোয়ালখালী ও মেরুং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে শতশত হেক্টর জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে বোরো চাষ দূরের কথা, এসব জমিতে কোনো প্রকার রবিশষ্যের চাষাবাদ করাও সম্ভব হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে এসব জমিতে আমন চাষাবাদ করা গেলেও বোরো মৌসুমে একমাত্র সেচ সংকটের কারণে কোনো প্রকার চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। পাবলাখালী বিলের কৃষক চন্দ্রকান্ত চাকমা, সুশীল কান্তি চাকমা ও সুভাষ চাকমা জানান, প্রয়োজনীয় পানির অভাবে বিশাল আয়তনের এই বিলে আমরা একমাত্র আমন ছাড়া আর কোনো চাষাবাদ করতে পারছি না। তাই সারা বছরই এই বিলের জমিগুলো অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। তারা আরও জানান, ১৯৯৮ সালে পাবলাখালী ছড়ার ওপর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলেও ২০০০ সাল থেকে স্লুইস গেটটি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাই প্রতি বছর বোরো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আমরা চাষাবাদ করতে পারছি না। শুধু তাই নয় আশপাশের কোথায় পানির উৎস না থাকায় এসব জমিতে রবিশষ্যের চাষাবাদ করাও সম্ভব হয় না। তাই পাবলাখালী ছড়াটি খনন করে স্থায়ীভাবে জলাশয় সৃষ্টি কিংবা নতুন করে স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেচ ড্রেন নির্মাণ করা হলে বিশাল আয়তনের এই বিলের জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে জানান তারা। কবাখালী ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিতি চাকমা জানান, সেচ সুবিধা না থাকার কারণে পাবলাখালীসহ কবাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলের চাষিরা বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারছেন না। পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় এ বছর সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। একমাত্র সেচ সংকটের কারণে এই এলাকার কৃষকরা আমন ছাড়া আর কোনো ফসলের চাষাবাদ করতে পারছে না। তাই এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে কৃষকদের পারিবারিক খাদ্য সংকটের পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও কমে আসবে বলে জানান তিনি।

সেচ সংকটের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, আমন মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হলেও বোরো মৌসুমে সেচ সংকটের কারণে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। অনাবাদি জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে হলে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ি ছড়াগুলোকে খনন করে জলাশয় সৃষ্টি, স্লুইস গেট নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় সেচ ড্রেন নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাশেম জানান, কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে মাইনি নদীতে আন্তর্জাতিক মানের হাইড্রলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়াও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে সেচ ড্রেন নির্মাণ করার জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট