চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জনসংখ্যার চাপ, রয়েছে হাজারো সমস্যা

আল-আমিন সিকদার

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বাকলিয়া থানার সর্ব দক্ষিণে যে ওয়ার্ডের অবস্থান তার নাম দক্ষিণ বাকলিয়া। প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস মাত্র ১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ওয়ার্ডে। আয়তনের তুলনায় যেমনি জনসংখ্যা বেশি, তেমনি বেশি এই ওয়ার্ডে সমস্যার পরিমাণও। খাল দখল, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ, অনুন্নত রাস্তার সমস্যার পাশাপাশি এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের হাঁটাচলার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ টমটম স্ট্যান্ড। এতে জনগণের যেমন বেড়েছে ভোগান্তি, তেমনি পূরণ হয়নি কাঙ্খিত চাহিদা।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ঘুরে এমনই সব তথ্য ও চিত্র তুলে এনেছে টিম পূর্বকোণ। ওয়ার্ডটিতে খাল দখল যেন অনেকটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু কি তাই, এখানে অভিনব পদ্ধতিতে দখল করা হয় খাল। অভিযোগ রয়েছে, প্রথমে খালের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে এবং পরে সেখানে মাটি ফেলে দখল নিয়ে নেওয়া হয়। আর এই দখলদারদের কারণে ১ কি. মি. দৈর্ঘ্যরে চাক্তাই তুলাতলী খালটি এখন ৫০ শতাংশ বেদখলে চলে গেছে। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ ময়লা আবর্জনার স্তূপ। খালের এই করুণ অবস্থার কারণে বর্ষায় ডুবে যায় এখানকার বেশ কয়েকটি এলাকা।
এছাড়াও এখানকার সরু সড়কজুড়ে রয়েছে অবৈধ টমটম স্ট্যান্ড। এই সড়কগুলোর পাশে ফেলে রাখা হয়েছে ডাস্টবিন। যা জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে বলে অভিযোগ পথচারীদের।

এই ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা মো লাফাত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এখানে সব থেকে বড় সমস্যা মাদক ও জলাবদ্ধতা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে যেই কাউন্সিলর হয়, তিনি শুধু কার্যালয়ে বসে সই করাতেই সীমাবদ্ধ থাকেন। যা করার দরকার তা করেন না। এছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা এমন একজন কাউন্সিলর চাই যিনি আমাদের জন্য কাজ করবেন, আমাদের হয়ে কাজ করবেন’।
রিক্শা চালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এই ওয়ার্ডে বসবাস করছি। এই এলাকার সবচেয় বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা’। এছাড়া তিনি চান এলাকার মাদক ও সন্ত্রাস যাতে নির্মূল হয়। তিনি এমন কাউকে চান যিনি এই সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি, সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করবেন।

এসব সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইয়াসিন চৌধুরী আছু। সরু রাস্তায় অবৈধ টমটম স্ট্যান্ডসহ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি ড্রেনের ওপর আমি স্ল্যাপ বসিয়েছি। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থায় আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিছু ড্রেনের উন্নয়ন কাজ চলছে, এগুলো শেষ হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আর চাক্তাই খাল সিটি কর্পোরেশনের আওতায় থাকাকালীন আমরা প্রত্যেক বছর খনন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছি। তবে বর্তমানে তা সিডিএ’র আওতাধীন। তাই আমাদের কিছু করার থাকে না’।
অবৈধ টমটম স্ট্যান্ড নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার এই টমটম স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করেছি। উচ্ছেদ করার পর এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে যে, এই টমটমের মাধ্যমে তারা ৫০ টাকার ভাড়া ৫ টাকায় যেতে পারে, তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে এই টমটম চালু আছে। তবে টমটম স্ট্যান্ড এর জন্যে আমরা নতুন জায়গা দেখছি, জায়গা পেলে এই সমস্যা থাকবে না। আর চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই’।

আবর্জনা অপসারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। তাই আবর্জনা খুবই বেশি জমে। তবে ডোর টু ডোর কার্যক্রমের মাধ্যমে আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। আশাকরি এই ধরনের সমস্যা ভবিষ্যতে অনেকাংশেই কমে আসবে’।
উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে ২৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকার বরাদ্দ পেয়েছে ওয়ার্ড। যার মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ১৫ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার টাকার কাজ এবং ১০ কোটি ৫৬ লক্ষ ৫১ হাজার টাকার কাজ চলমান রয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪ টি রাস্তার কাজ শেষ করা হয়েছে, চলমান রয়েছে আরও ১৯টি রাস্তার কাজ’। নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদক নির্মূলসহ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

বর্তমান কাউন্সিলর ইয়াসিন চৌধুরী আছু এখানে একমাত্র বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। তবে এই ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করতে চাচ্ছেন ৪ প্রার্থী। তাঁরা হলেন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল আজিম নুরু, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, সাবেক ছাত্রনেতা এম. মাহামুদ রনি ও যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত মো. মাশরুর হোসেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা কে, কি বললেন :
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল আজিম নুরু নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান, মাদক নির্মূল, অনুন্নত রাস্তার সংস্কার, পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া নিজ উদ্যোগে ওয়ার্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য কলেজ নির্মাণ এবং বয়স্কভাতা সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথাও জানান পূর্বকোণকে।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান নির্বাচিত হলে এলাকার আবর্জনা অপসারণ, বাইলেন রোডের সংস্কার, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছোট খাল ড্রেজিং, মাদক নির্মূল এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চান।

সাবেক ছাত্রনেতা এম. মাহামুদ রনি নির্বাচিত হলে অনুন্নত রাস্তার সংস্কার, অন্ধকার সড়কে আলোকবাতি সংযোজন, ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া মাস্টার পুল, মিয়া খান নগর ব্রিজ, তুলাতলি ব্রিজ ও ইছহাকের পুলসহ অন্যান্য ছোট-বড় ব্রিজের সংস্কার এবং ডোর টু ডোর এর মাধ্যমে এলাকার অবর্জনা সঠিকভাবে অপসরণে তদারকি করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
স্থানীয় যুবলীগ মো. মাশরুর হোসেন নির্বাচিত হলে নাগরিকদের জন্যে ৭ দফায় উন্নয়ন কার্যক্রম করার আশা ব্যক্ত করেছেন। যার মধ্যে মাদক ও চাঁদাবাজি নির্মূল করা, টমটম বাণিজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ, মাতৃসদন হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়ন, এলাকার খেলার মাঠের সংস্কারের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে অবহেলিতদের জন্য স্কুল নির্মাণ এবং বয়স্কদের জন্যে নৈশকালীন স্কুল নির্মাণের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট