চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চসিক নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের থানা কমিটি হচ্ছে না

ইফতেখারুল ইসলাম

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আগে নগর ছাত্রলীগ থানা পর্যায়ে আর কোন নতুন কমিটি হচ্ছে না। সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুইটি থানা কমিটি ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনায় গত বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি চট্টগ্রাম ঘুরে গেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত আর কোন কমিটি ঘোষণা না দিতে নগর ছাত্রলীগকে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছে তদন্ত কমিটি।

জানতে চাইলে তদন্ত দলের প্রধান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে এসে সরেজমিন তদন্ত এবং বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলে সব তথ্য-উপাত্ত তারা সংগ্রহ করেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা ঢাকার বাইরে থাকায় এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তিনি ঢাকায় ফেরার পরপরই বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কোন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর জায়গা ছাত্রলীগের হবে না। কেউ কমিটিতে এসে গেলেও তাকে বাদ দেয়া হবে। অন্যান্য থানা কমিটি ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা কমিটি ঘোষণা করতে নিষেধ করা হয়নি। তবে আপাতত শৃঙ্খলা এবং সংগঠনের স্বার্থে নতুন কোন থানা কমিটি ঘোষণা না করাই উচিত বলে তাদেরকে বলা হয়েছে। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে ফরহাদ সায়েম সভাপতি ও রাকিব হায়দার সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও ডবলমুরিং এলাকা থেকে জহুরুল কাইয়ুম ফয়সাল ও শুভ ঘোষকে নগর কমিটির সহ-সম্পাদক করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ এতো বছর পর নগর কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ম বহির্ভূত দাবি করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নগর ছাত্রলীগের নেতাদের উপেক্ষা করে বিতর্কিত এই কমিটি গুলো গঠন করা হয়। কারো সাথে আলোচনা বা পরামর্শ নেননি নগর সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সদ্যঘোষিত কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিতর্কিতদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ায় তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। বিরোধী দলে থাকাকালীন সময় ধরে যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সরব ছিল, তাদের কাউকে মূল্যায়ন করা হয়নি।

ছাত্রলীগ করার বয়সসীমা অনেকের শেষের দিকে, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করা দুর্দিনের কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে। কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশ রাজনীতিতে যুক্ত আছে মাত্র কয়েক বছর এবং স্থানীয় রাজনীতিতে এরা কেউ সম্পৃক্ত নয়। ফলশ্রুতিতে বিরোধ ও বিক্ষোভ শুরু হয়।
চান্দগাঁও থানা কমিটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সভাপতি নুরুন্নবী সাহেদ এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নন। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চান্দগাঁও আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার প্রধান অভিযুক্ত সাহেদ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল আলমের আপন বড় ভাই তৌহিদুল আলম চান্দগাঁও ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। শহীদের বয়স খুবই কম এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত মাত্র কয়েকবছর। এছাড়া, দলীয় নেতাদের সাথে অশোভনীয় আচরণ, মারামারি ও কিশোর গ্যাং পরিচালনা, প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনসহ এলাকায় নানা অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। চান্দগাঁও থানা এলাকায় নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এবং চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক নুরুল ইসলামসহ নগর ছাত্রলীগ নেতাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের কারো সাথে আলোচনা বা সুপারিশ নেয়া হয়নি কমিটি গঠনে। এছাড়া অস্ত্রবাজ, অনুপ্রবেশকারী, ছিনতাইকারী ও বিতর্কিত কর্মীদের কমিটির বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে।

ডবলমুরিং থানা কমিটির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হল সভাপতি ফরহাদ সায়েম বিবাহিত এবং অছাত্র। সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অস্ত্র হাতে গোলাগুলির ছবি গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। কমিটি গঠনের পর তা পুনরায় বিভিন্ন পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি ঘটে যাওয়া খুলশীাতে চাঞ্চল্যকর সানি হত্যা মামলায় রাকিব হায়দার এজাহার নামীয় আসামি। এখানেও অস্ত্রবাজ, অনুপ্রবেশকারী, ছিনতাইকারী ও বিতর্কিত কর্মীদের কমিটির বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে।

অনাস্থা দেয়া নেতারা কেন্দ্রের কাছে সংগঠনের শৃঙ্খলা, গঠনতন্ত্র ও ঐতিহ্য রক্ষায় চান্দগাঁও ও ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের সুপারিশ করে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্ব স্ব ইউনিটে নগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন।

এসব কারণে নগর কমিটির অভ্যন্তরে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। ইমু দস্তগীরের অনুমোদিত কমিটি বাতিলের দাবিতে ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে কর্মীরা। এসময় তারা ইমু দস্তগীরের কুশপুত্তলিকাও দাহ করে। এই ঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তদন্ত দল চট্টগ্রামে এলে কেন্দ্রীয় তদন্ত দলের সাথে নগর কমিটির সহ-সভাপতি থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যন্ত ১৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার সাক্ষাৎ করে অভিযোগের তথ্য উপাত্ত জমা দেন। তাদের অভিযোগ, বিরোধী দলে থাকাকালীন সময় ধরে যারা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সরব ছিল, তাদের কাউকে মূল্যায়ন করা হয়নি। ছাত্রলীগ করার বয়সসীমা অনেকের শেষের দিকে, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে শ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করা দুর্দিনের কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট