বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাঙামাটিতে পৃথক ৩ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ জন, নিখোঁজ হয়েছে আরো ২ জন। চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি ঘুরতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না ওরা ৫ জনের। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বাংলো সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ডুবে প্রাণ হারান তারা। লাশ হয়ে ফিরতে হল ওই ৫ জনকে। গতকাল (শুক্রবার) দুপুরের দিকে মর্মান্তিক এ নৌ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত ৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রিনা আক্তার (২২), শীলা বেগম (২৭), আফরোজা আক্তার (২৪), আসমা বেগম (২৫)। আরেক জন পুরুষ। তার নাম অজ্ঞাত। এছাড়া পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরো দু’জন।
এরমধ্যে ১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে স্থলপথে ও বাকি দুটি জলপথে। গতকাল (শুক্রবার) সকাল নয়টায় রাঙামাটির সাপছড়িতে পিকনিক বাস উল্টে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে বাসটির হেল্পার ঘটনাস্থলে নিহত ও ২৬ জন আহত হয়।
জানা যায়, ৬০ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর পতেঙ্গা থেকে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে পিকনিকে আসছিল বাসটি (চট্রগ্রাম ব ০৫-০০১৫)। রাঙামাটির সাপছড়িতে এসে বাসটি উল্টে গেলে হেল্পার নিহত হয়। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারমধ্যে ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরপরই চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বাসের যাত্রীরা সবাই পতেঙ্গা এলাকার একটি গার্মেন্টসের কর্মী বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চটগ্রাম নগরীর সিইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানার ৫০ শ্রমিক রাঙামাটি বেড়াতে যান। তারা দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ভাগ হয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণে নামেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী। কিছুদূর যেতেই জেলা প্রশাসক বাংলোর সামনে একটি বোট উল্টে ডুবে যায়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট ও রোভার স্কাউট দল। হতাহতদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হওয়ার কারণে বোটটি উল্টে গেছে। এ ঘটনায় শোক আর আহাজারিতে ফেটে পড়েন সহকর্মীরা। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শওকত আকবর ৫ জন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আরেক জনের নাম পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আহত ৫ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সহযোগী পর্যটক মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম প্যাসিফিক জিন্স গার্মেন্টস থেকে প্রায় ৫০ জনের একটি দল রাঙামাটি পিকনিকে আসি। কথা ছিল সবাই এক সঙ্গে ঝুলন্ত সেতু ঘুরতে যাব। কিন্তু আর কোনো কিছুই ঘোরাঘুরি হল না। ফিরতে হচ্ছে শোক নিয়ে।
এছাড়া এক নৌ দুর্ঘটনায় রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা সদরের কর্ণফুলী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বোটে করে কর্ণফুলী নদীতে ধর্মীয় উৎসব পালনকালে বোট ডুবে তিন জন নিখোঁজ হয়, পরে শিশু দেবলিনা দে’র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ অপর দুইজন হলেন, টুম্পা মজুমদার (৩০) ও তার ছেলে বিজয় মজুমদার (৫)। গতকাল (শুক্রবার) সকালের দিকে এ নৌ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ভালোবাসা দিবসে চট্টগ্রাম থেকে ইসকনের আয়োজনে অংশ নিয়ে কাপ্তাই ভ্রমণে এসে কেপিএমের কয়লার ডিপো সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে বোট ডুবে প্রাণ হারিয়েছে শিশু দেবলীনা দে (১০)। নিখোঁজদের উদ্ধারে কাপ্তাই নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স যৌথ অভিযান চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল, চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলিব রেজা লিমন, কাপ্তাই থানার এসআই মো. খলিল, ফায়ার সার্ভিস কর্মী সাইফুলসহ আরও অনেকে।
ওয়াগ্গা ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম বলেন, চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকার রাধামাধব মন্দির থেকে প্রায় ১২৭ জন ইসকন সদস্য কাপ্তাইয়ের শীলছড়ি এলাকার বিভিন্ন মন্দিরে তীর্থ ভ্রমণে আসে। পরে তারা কর্ণফুলী নদী হয়ে ৩টি বোটে চা বাগানে যাওয়ার পথে ২টি বোট কূলে ভীড়লেও অপর ১টি বোট কূলে ভিড়ার আগেই নৌ ডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া বোটে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
বিকাল পৌনে ৫টায় ঘটনাস্থল থেকেই চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানাধিন হাজারি গলীর অধিবাসী রতন দে’র মেয়ে দেবলীনা দে (১০)’র মরদেহ কাপ্তাই নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল যৌথ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে।
এদিকে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জের হরিওপুর মজুমদারপুর বাড়ির রাজিব মজুমদারের স্ত্রী টুম্পা মজুমদার (৩০) ও তাদের শিশু পুত্র বিজয় মজুমদারের (৫) সন্ধান পাওয়া যায়নি।
চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি বলেন, ‘কাপ্তাই লেক অথবা কর্ণফুলী নদীতে ভ্রমণে আসা যাত্রীরা দুটি নৌকা একত্রিত করে অবাধে হৈহুল্লোড় করায় বরাবরই বাড়ছে নিহতের ঘটনা। প্রশাসন যদি এই বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ঝুকিপূর্ণ বোট সমূহকে আইনের আওতায় আনে তবে কমে আসবে হতাহতের ঘটনা’।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেনাবাহিনী, পুলিশ, নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ সমন্বয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। নিখোঁজের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে প্রশাসন। এদিকে ঘটনার পরপরই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি তদারক করছেন।