চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হামলায় গ্রেপ্তার ১১, গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ

সীতাকু-ে জেলে পাড়ায় অর্ধশত ঘরে হামলা, ভাঙচুর শ্লীলতাহানি

সৌমিত্র চক্রবর্তী , সীতাকু-

২২ মে, ২০১৯ | ২:২৭ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ের কুমিরায় জেলে পাড়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে ১১ জন জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামলাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে সোমবার গভীর রাতে এ সংঘর্ষের সময় জেলে পাড়ায় রীতিমত তা-ব চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে ৩০টির মত ঘর-বাড়ি ও এমনকি মন্দিরের দেব-দেবীর মূর্তিও। তবে পুলিশ এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে।
সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বড়কুমিরা ঘাটঘর এলাকায় অসংখ্য ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। সেমিপাকা ঘরগুলোতে ধারালো অস্ত্রের কোপ হামলার সাক্ষ্য বহন করছে। পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানিয়েছেন সোমবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে সীতাকু-ের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা ঘাটঘর

জেলেপাড়ায় সীতাকু- থানার এস.আই মো. জাহেদুল ইসলাম জসীমের নেতৃত্বে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা রবীন্দ্র জলদাসের ছেলে রুবেল জলদাশ (৩০) কে নিজ ঘর ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে আটক করেন। পুলিশের পোশাক না থাকায় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। কারণ, ইতিপূর্বে অনেককে গ্রেপ্তারের পর বাণিজ্যে করেছে কিছু কিছু পুলিশ অফিসার। এ কারণে রুবেলকে নিতে বাধা দেয় অন্য জেলেরা। এ নিয়ে দুই পক্ষে ধাক্কা ধাক্কি শুরু হলে পুলিশের ভাড়া গাড়ি ভাঙচুর হয়। এ নিয়ে রাতে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হামলা-পাল্টা হামলা হয়। জেলেরা পুলিশের উপর ইট পাটকেল ছোঁড়ে আর পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি চালায়। এরই ফাঁকে পুলিশের লোকজন জেলেদের ঘরে ঘরে ঢুকে বিভিন্ন সরঞ্জাম ভাঙচুর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। এসময় জেলে পাড়ার অনেক নারীর শ্লীলতাহানিও করেছে এবং একটি বাড়ির নিজস্ব মন্দিরের দেব-দেবীর মূর্তিও ভাঙচুর করা হয়।
জেলে সর্দার বাচারাম জলদাস ও নতুন জলদাস সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ সাদা পোশাকে প্রায়ই জেলেদের ধরে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে রেখে মোটা অংকের বাণিজ্য করে। এই রুবেলের বিরুদ্ধে আগের কোনও অভিযোগ নেই। তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী জানিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ বাণিজ্য করার চেষ্টা করছিলো। এ কারণে সবাই বাধা দেয়। এতে পুলিশ জেলেদের উপর হামলা চালালে জেলেরাও পাল্টা হামলা চালায়। কিন্তু ৩০-৩৫টি ঘরে রীতিমত তা-ব চালিয়েছে পুলিশ। এছাড়া নীরিহ মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে ঘটনার পর থেকে এলাকা পূরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। কুমিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, সাদা পোশাকে পুলিশ অনেক ঘটনা ঘটায় একথা ঠিক। আবার জেলে পাড়ার কেউ কেউ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত একথাও মিথ্যা নয়। তাই একজনকে আটক করা নিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটানো ঠিক হয়নি। সেসময় জেলে পাড়ায় ভাঙচুর বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন তখন অনেক লোক ছিলো। কে বা কারা এসব করেছে তা নিশ্চিত করা মুস্কিল।
সীতাকু- থানার ওসি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইয়াবাসহ রুবেলকে গ্রেপ্তারকালে জেলেরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরে অন্য পুলিশ সদস্যরা সমাধানের জন্য গেলে তাদের উপরেও ভয়ংকর হামলা চালায়। শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম উত্তর) মছিউদ্দৌলা রেজার নেতৃত্বে বিভিন্ন থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়ও সেখানে উপস্থিত হন।
ওসি দাবি করেন অভিযানে সিভিল পোশাকের সাথে ইউনিফর্মধারী পুলিশও ছিলো। কিন্তু তারা এক মহিলার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ঘটনা বড় করে ফেলে। আর জেলেদের বাড়ি ঘরে পুলিশ কোন হামলা চালায়নি। পুলিশ অবরুদ্ধ থাকা অন্য পুলিশদের উদ্ধারের উদ্দেশ্যে যায় এবং তা করে ফিরে আসে। সেসময় অসংখ্য লোক সেখানে ছিলো তারা কেউ সুযোগ নিয়ে এসব করেছে কিনা বলা যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্য আহত ও ১১ জেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জেলেরা হলো পরিমল দাস (২৫), কৃষাণ চন্দ্র দাস (১৮), সৌরভ দাস (১৮), সাজু দাস (২৪), রুপন দাস (২৮), বাসন দাস (১৮), সঞ্জয় দাস (১৮), স্বপন দাস (৩৫), সমীর শীল (৩০), হৃদয় দাস (১৯) ও রাজীব দাস (৩০)। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সীতাকু- সার্কেলের এডিশনাল এসপি শম্পা রানী সাহা বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি এই জেলে পাড়ার ইতিহাস মোটেও ভালো নয়। যখনই সেখানে কোন আসামি গ্রেপ্তারে যাওয়া হয় তখনই সেখানে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে । তিনি বলেন, এখানে সন্দ্বীপ-রুটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। রুবেলের কাছেও মাদক ছিলো। ৩০ হাজার ইয়াবার দাম অনেক। এর সাথে অনেকেই জড়িত ছিলো। এ কারণে তারা রুবেলকে ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনা বড় করে ফেলে বলে জানান তিনি। জেলেদের বাড়ি ঘরে পুলিশ সদস্যরা কোন হামলা চালায়নি বলে দাবি করেন তিনিও।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট