চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

‘একটি হাসপাতাল চাই’

৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মে, ২০১৯ | ২:২০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর একেবারে শেষ প্রান্তে যাদের বসবাস তাদের যেন ভোগান্তির কোন কমতি নেই। নগর উন্নয়নে যত উন্নয়নমূলক কর্মকা- চলছে তার বেশিরভাগই হচ্ছে এ এলাকাজুড়ে। তৈরি হচ্ছে রিং রোড, বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ কর্ণফুলী টানেল। তবে এতসব উন্নয়নের ভিড়ে একটি মৌলিক চাহিদার অভাবে দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাচ্ছে এই অঞ্চলের প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দা। ‘একটি হাসপাতাল চাই’ তিন শব্দের এই আবেদনটি দিয়ে স্থানীয়রা জানিয়েছেন তাদের নানান ভোগান্তির কথা।
নগরীর দক্ষিণ হালিশহর এলাকা থেকে দক্ষিণ পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ লোকের বসবাস। কেননা, এই অঞ্চলে রয়েছে ২ টি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল। যেখানে প্রায় ৩ লাখেরও অধিক কর্মচারী কাজ করেন। আর কর্মের সুবিধার্থে তাদের বেশির ভাগ লোকেরই বাসস্থান এই অঞ্চলে। তাছাড়া নগরীর সব থেকে জনবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে সব মিলিয়ে ৫ লাখ মানুষের বসবাস। অন্যদিকে পতেঙ্গা এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের সংখ্যা ৩ লাখের বেশি। তবে এই ৮ লাখ লোকের জন্য এখানে নেই কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা।
শাকিল নামে স্থানীয় এক যুবক এ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, এই অঞ্চলে প্রায় আট লাখ মানুষের বসবাস হলেও নেই কোন চিকিৎসা সেবা নেয়ার ব্যবস্থা। কারণ এখানে নেই কোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল। অন্যদিকে নগরীর হাসপাতাল পাড়া হিসেবে খ্যাত চকবাজার এলাকায় একটি সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি ভালো মানের বেসরকারি হাসপাতাল। তাই পতেঙ্গা অঞ্চলের মানুষরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অঞ্চলে একটি হাসপাতাল নির্মাণ এখন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র দাবি।
মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এ ১৭ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে আমাদের সময় লাগে দুই ঘণ্টারও বেশি। কেননা, এই রাস্তার মধ্যেই রয়েছে দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল ও বন্দর এলাকা। ফলে ইপিজেড মোড় ও কাস্টমস মোড়ে মালবাহী গাড়ির কারণে লেগে থাকে যানজট। যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। যার কারণে চমেক হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে পথেই প্রাণ দিতে হয়েছে। যার সমাধান এই এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ। কিন্তু শহরের শেষ প্রান্তে বসবাসকারী এই ৮ লাখ মানুষের এই ভোগান্তির কারণটি নিয়ে যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। চিকিৎসা আমাদের মৌলিক চাহিদা, তাই আমরা এই এলাকায় ‘একটি হাসপাতাল চাই’।
৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, এই এলাকায় একটি সরকারি হাসপাতালের খুবই প্রয়োজন। কেননা, এখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া এই পথে দীর্ঘক্ষণ যানজট থাকায় রোগীদের নিয়ে সময় মত হাসপাতালে পৌঁছাতে বেগ পোহাতে হয়। ফলে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীরা যাত্রা পথেই মারা যায়। সাধারণ মানুষের এ ভোগান্তি লাঘবে এই অঞ্চলে একটি হাসপাতাল নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ মহোদয়ের সাথে এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছি। তবে জায়গার অভাবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।
৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজি মো. জয়নাল আবেদীন পূর্বকোণকে বলেন, এই অঞ্চলে একাধিক উন্নয়ন হয়েছে। তবে একটি হাসপাতালের অভাবে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকার বাসিন্দারা। আমাদের স্টিল মিল বাজারের বর্মা কলোনির পাশে হোসেন আহম্মদ পাড়ার জামে মসজিদ এলাকায় প্রায় এক একর সরকারি খালি জায়গা রয়েছে। যেখানে একটি হাসপাতাল তৈরির জন্য আমি বাজেটে প্রস্তাবনা করেছি। তবে এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট