চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছাত্র আটকে উত্তপ্ত চুয়েটে

বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়কে অবস্থান ষ ৩ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন

জাহেদুল আলম হ রাউজান

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েটে) র‌্যাগিংয়ের সময় ৬ জুনিয়র ছাত্রকে হাতেনাতে আটককে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে শত শত সাধারণ ছাত্র গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান নেয়। তারই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে চুয়েটের মূল ক্যাম্পাসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে তালাবদ্ধ করে অবরুদ্ধ করে। প্রায় চারঘণ্টা পর তালা খুলে দিলেও দুপুর তিনটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা চুয়েটের গোল চত্বরসহ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় তারা গাছের গুড়ি ফেলে এবং গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শাখা অফিসে তালাবদ্ধ করে সুপার গুলু লাগিয়ে দিয়েছে, বেশকিছু শিক্ষকের নামফলক ভেঙ্গে ফেলেছে। ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ এনে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে এ আন্দোলন করে ছাত্র-ছাত্রীরা। এদিকে সন্ধ্যায় ছাত্রদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চুয়েট প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে ছাত্রকল্যান পরিচালক প্রফেসর ড. মশিউল হক বলেন ‘বুধবার রাতে নবাগত (জুনিয়র) ১৯ ব্যাচের ১২-১৩ জন ছাত্র চুয়েটের ক্যাম্পাসের অদূরে কাটা পাহাড় এলাকায় র‌্যাগিং

করছিল। এসময় ডেপুটি ডিএসডাব্লউ দুইজন, একজন হলের প্রভোষ্টসহ চারজন এবং চুয়েট পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের অভিযানে ৬জন ছাত্রকে আটক করা হয়। বাকীদের ধরা সম্ভব হয়নি। আটক ছাত্রদের উদ্ধার করে নিয়ে এসে ধমক দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। তারপরও তারা রাত (বুধবার দিবাগত রাত) আড়াইটা থেকে জুনিয়র-সিনিয়র ছাত্ররা স্লোগান, মিছিল, শিক্ষকদের গালমন্দ অব্যাহত রাখে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে ছাত্ররা চুয়েটের মূল গেইট এবং একাডেমিক হলগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়। আমার মনে হয় তারা র‌্যাগিংয়ের অপরাধে শাস্তি পাবে-এটাকে প্রভাবিত করার জন্য এইসব বিক্ষোভ ও তালা লাগিয়ে দেয়ার মতো তা-ব করছে।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জাতীয়ভাবে কড়াকড়ি অবস্থান আছে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। এসব নিয়ে বুধবার দুপুরে এক সভাও হয়েছিল। ছাত্ররা সেখানে উপস্থিতও ছিল। তারপরও তারা র‌্যাগিংয়ে জড়িত হয়।’

চুয়েটের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ছাত্রকল্যান পরিচালক প্রফেসর ড. মশিউল হকের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ভোর সকাল থেকে জুনিয়র ও সিনিয়র শত শত শিক্ষার্থী চুয়েটের মুল ফটকে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন বিভাগের দরজায় সুপার গুলু এবং শিক্ষকদের নামফলক ভেঙ্গে ফেলে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে চুয়েটের মূল ফটক এবং বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের তালা খুলে দেয়া হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। এর আগে তারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনরত অনেক ছাত্র বলেন ‘বুধবার ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে ৮জন জুনিয়র ও ১০-১২ জন সিনিয়র ছাত্র হাঁটতে গিয়েছিল। এসময় ছাত্র কল্যাণ বিভাগের স্যাররা হঠাৎ গিয়ে আক্রমন করে। এসময় তারা ৬ জন সিনিয়র ছাত্রকে আটক করে জুনিয়র ছাত্রদের কাছ থেকে জবানবন্দী নেয়। এক পর্যায়ে সিনিয়র ছাত্রদের মারধর করে। এসময় ১৮ ব্যাচের পারভেজ নামের এক ছাত্রের হাত ভেঙ্গে যায়। আরো কয়েকজনকে মারধর করে স্যাররা। তাদের চিকিৎসা না দিয়ে উল্টো স্যাররা র‌্যাগিংয়ের মিথ্যা অভিযোগ আনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ছাত্র কল্যাণে সংশ্লিষ্টদের বিচার এবং পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলেন নেমেছি।’ দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা ভিসি ভবনের মূল ফটকের সামনে বসে স্লোগান দেয়। অন্য অনেক ছাত্র তার পাশে রাস্তায় এবং গোল চত্বরে গাড়ি টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুড়ি ফেলে স্লোগান দেয় চুয়েট প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে পৌণে ৮টার দিকে যোগাযোগ করা হলে চুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. রফিকুল আলম বলেন ‘ছাত্রদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠক হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তশেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট