চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বইমেলায় ফাগুনের আবহ

অনুপম চৌধুরী

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ২:৩০ পূর্বাহ্ণ

‘বসন্ত বাতাসে সইগো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে’ শাহ আব্দুল করিমের গানের মতো বলতে হয় বসন্ত এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার চতুর্থদিন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম চত্বরে বইমেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতেই দেখা গেলো, মেলায় যেন বসন্ত এসেছে। একদল মেয়ে মাথায় খোঁপা, হাতে ফুল ও হলুদ শাড়ি পড়ে মেলায় ঘুরছে। তাদের দেখেই মনে পড়ল গতকাল ছিল শীতের শেষ দিন। আজ হল পয়েলা ফাল্গুন ও বিশ^ ভালোবাসা দিবস তাই এই নবীন-কিশোরীদের সাথে সাথে বইমেলায়ও লেগেছে বসন্তের রঙ। বিকেলের দিকেই অন্যদিনের তুলনায় ভিড় কিছুটা বেশি যা সন্ধ্যা হতে হতে বেড়ে যায়। একে হচ্ছে সপ্তাহের শেষদিন তাই অফিস শেষে বইপ্রেমীরা ঢুঁ মারছে বইমেলায়। আজ বন্ধের দিনে ভিড় বাড়তে পারে বলে মনে করছে আয়োজক ও প্রকাশকরা। কেননা আজ শুক্রবার, পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস এক সাথে এবং প্রথম সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তাই আজ সকাল থেকেই বইমেলার দরজা খোলা।

মেলায় ঢুকতেই দেখা গেলো নানা রঙে সেজেছে বইমেলার স্টলগুলো। নজরকাড়া ডিজাইন আর নিজেদের পছন্দের ব্যানার ফেস্টুনে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন প্রকাশকরা। ঢুকতেই চোখে পড়ে পেন্সিল’র স্টল। তার সামনেও নানা বয়সী নারীরা হলুদ শাড়ি পড়ে ছবি তুলছে আবার কেউ কেউ সেলফি তোলায়ও মগ্ন। পেন্সিল স্টলের পাশেই বাতিঘরের স্টল। কথা হয় বাতিঘরের কর্মকতা রহিমের সাথে। তিনি জানায়Ñ ‘বইমেলা যতদিন যাচ্ছে, ভিড় এবং বিক্রি বাড়ছে আর শুক্রবার ভিড় অনেকটা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। গত তিনদিন মোটামুটি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু লেখক স্টলে থাকলে বিক্রি এবং ভিড় বেড়ে যায়।’ বাতিঘর এবার তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কবিতাভবন থেকে দেশ-বিদেশের অনেক লেখকের বই বের করেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম দু বইমেলায় তাদের স্টল রয়েছে। মেলায় হাঁটতে হাঁটতেই পেয়ে গেলাম কবি শুক্লা ইফতেখারকে। তিনি একটি স্টল খুঁজছিলেন কারণ ওখানে হয়তো কবির কোন প্রিয় লেখকের বই রয়েছে। সদা নির্মোহ এই মানুষটির সাথে বইমেলা বিষয়ে কথা হয়। মেলায় এবার তাঁরও একটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বাতিঘর থেকে ‘সম্পর্কের স্বরলিপি’। তিনি জানানÑ ‘বইমেলা হচ্ছে আমাদের প্রাণের মেলা। মেলায় আসলে সবার বই একসাথে পাই এবং দেখে দেখে বই কেনা যায়। আগে থেকেই বইকেনার লিস্ট মাথায় থাকে, কেননা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার কি বই এসেছে সব জানা যায় এবং সে হিসেবে বই কিনি। মাঝে-মধ্যে ভালো লাগলে অন্য লেখকদের বই কিনতেও দ্বিধা করি না। আরেকটা কথা, মেলার পরিবেশ আগের চেয়ে ভালো, সুন্দর ও পরিপাটি।’

নানা স্টলে ঘুরতে ঘুরতে কয়েকটা স্টলের ছবিও তুললাম। দেখা গেলো অনেকে বই কিনে প্রকাশনার সামনে বই ধরে ছবি তুলছেন কেননা নিজের পছন্দের লেখকদের জানাতে হবে তার প্রিয় লেখকের বই সে সংগ্রহ করেছে। গলুই প্রকাশনার সামনে দেখা হলো কবি অভিলাষ মাহমুদের সাথে। বইমেলার বেছা-বিক্রি নিয়ে তিনি জানানÑ ‘গত বুধবার তেমন বিক্রি না হলেও আজ এরই মধ্যে বিক্রি হয়েছে, রাত হতে হতে আরও বাড়তে পারে। এবার গলুই প্রকাশনীও বেশকিছু ভালো ভালো বই এনেছে।’

সবমিলিয়ে মেলায় আজ বসন্ত আমেজ। সারাদিনের বন্ধের সাথে সাথে উৎসবমুখর থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ।
বইমেলা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। ছুটির দিন বইমেলা শুরু হবে সকাল ১০টা থেকে চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

গতবছর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে প্রথম সম্মিলিত বইমেলার আয়োজন করা হয়। যা দ্বিতীয় বৃহত্তর বইমেলা হিসেবে দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। এবারের বইমেলা আরও জমজমাট হবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে লালখানবাজার এদিকে লাভলেইন থেকে নানা রঙের বইমেলার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে আশপাশের রাস্তা। সিসিটিভির আওতায় থাকবে পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণ।
বইমেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা, রবীন্দ্র, নজরুল, বসন্ত, কবিতা, ছড়া, তারুণ্য, আবৃত্তি, বিতর্ক ও শিশু উৎসব, আন্তর্জাতিক লেখক সম্মিলন ও পাঠক সমাবেশ, পেশাজীবী ও সাংবাদিক সমাবেশ, সাহিত্য আড্ডা, কুইজ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠানে ভরপুর থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট