চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মানবপাচার : কক্সবাজারে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার সংবাদদাতা

২১ মে, ২০১৯ | ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার উপকূলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আবারও শুরু হয়েছে রমরমা মানবপাচার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরনো মানব পাচারকারীরা। শহরের আশপাশের কয়েকটি রুটকে মানব পাচারের জন্য নিরাপদ ঘাট হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ড সমিতিপাড়া এলাকার নাজিরারটেক, ২নং ওয়ার্ডের নুনিয়ারছড়া, সদরের খুরুশকুল ও চৌফলদন্ডী ব্রিজ সংলগ্ন ঘাট। এই রুটে মানবপাচারকারীরা হরদম পাচার করছে রোহিঙ্গাদের। যদিও এসব ঘাট থেকে পাচারের সময় রোহিঙ্গারা উদ্ধার হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার (২০ মে) ভোরে নুনিয়ারছড়া টুইট্টাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৭ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। টুইট্টাপাড়া এলাকার জনৈক রাজু মেম্বারের বাড়ির পাশে তাদেরকে ট্রলারের তোলার জন্য মজুদ করা হয়। এসময় তিন পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটকরা হলেন: চৌফলদন্ডী এলাকার শামসুল আলম মাঝি প্রকাশ সামশু মাঝি (৫০), উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে কামরুল ইসলাম (৩২), রোহিঙ্গা দালাল মো. ছাবের (১৯) ও আজিম উল্লাহ (২৪)।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নুনিয়ারছড়া এলাকা থেকে ১৭ জন মালয়েশিয়াগামী আটক করা হলেও আরও প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গা দালালদের সহযোগিতায় পালিয়ে যায়। মূলতঃ তাদেরকে দালালদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়। এ কারণে পুলিশ তাদের আটক করতে সক্ষম হয়নি।

সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, নুনিয়ারছড়া এলাকা থেকে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচজন দালালকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হলেও বেশ কয়েকজন দালাল পালিয়ে যায়। পরে তাদের কয়েকজনের নাম সংগ্রহ করে সোমবার রাতে অজ্ঞাত আসামীসহ ১২ জন দালালের নাম উল্লেখ করে মানবপাচার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় উল্লেখিত পলাতক আসামীরা হলেন: উত্তর নুনিয়ারছড়া এলাকার শামসু মাঝির ছেলে সৈয়দ করিম ও মোহাম্মদ করিম, ছনখোলা এলাকার জালাল আহম্মদের ছেলে ছাবের (২৫), নতুন বাহারছড়া এলাকার মৃত হোসেনের ছেলে জাফর আলম শিপন, গুরা মিয়া মাস্টারের ছেলে আবু বক্কর ও চৌফলদন্ডী বাজারপাড়া এলাকার নুরুল হকের ছেলে একরাম মেম্বার (৩২), কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তার (২১) ও আব্দুস শুক্কুর (১৯)।

সূত্রমতে, সোমবার পাচারের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের কয়েকদিন আগে নুনুনিয়ারছড়া ও চৌফলদন্ডী এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাদেরকে রাখা হয় চৌফলদন্ডী এলাকার মানব পাচারকারী একরাম মেম্বার ও শামসুল আলম মাঝির বাসায়। কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গাকে রাখা হয় নুনিয়ারছড়া এলাকার মানবপাচারকারীদের বাসায়। পরে তাদেরকে ট্রলারে তোলার জন্য নুনিয়ারছড়া এলাকায় জড়ো করা হয়।

এদিকে ১নং ওয়ার্ডের নাজিরারটেক রুট থেকে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গাদের পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে। নাজিরারটেক রুট থেকে পাচারের জন্য রোহিঙ্গাদেরকে সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার দালালদের বাসায় মজুদ করা হয়। গত দেড় মাস আগে শহরের কুতুবদিয়াপাড়া এলাকা থেকে ১৭ জন মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার মূল নায়ক কুতুবদিয়াপাড়া এলাকার শাহাদাত উল্লাহ। ওই ঘটনায় একরামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। তবে ভিকটিমের জবানবন্দিতে ৫ দালালের নাম উঠে আসে।

এরপর ওই এলাকা থেকে কয়েকদফা মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের পাচার করা হয়। কিছুদিন আগে পাচার চেষ্টার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালালেও রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মানবপাচারকারীরা স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে সহজে কেউ মুখ খোলে না। এসব মানবপাচারকারীরা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে নিজেদের বাসাবাড়িতে মজুদ রাখে। পরে রাতের অন্ধকারে ট্রলারে করে সাগরপথে পাচার করে দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে আবারও রমরমা মানবপাচার চালিয়ে যাচ্ছে একরামুল হক (৩৫), বেলাল প্রকাশ পিচ্ছি বেলাল (৩৪) সিরাজুল করিম (৩৬) পিতা জামাল উদ্দিন, কামরুল ইসলাম রুবেল প্রকাশ কামরুল হাসান রুবেল (২৮)। ইতোমধ্যে কয়েকটি মানবপাচার চেষ্টার ঘটনায় তাদের নাম উঠে এসেছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুজ্জামান জানান, পুরনো মানবপাচারকারীরা আবারও তৎপরতা শুরু করেছে বলে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পেয়েছি। খোঁজ খবর চলছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, নাজিরারটেক, নুনিয়ারছড়া, চৌফলদন্ডী ও খুরুশকুল পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেকোন অবস্থাতেই পাচার ঠেকানো হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট