চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ধান সংগ্রহে গতি নেই চন্দনাইশে

লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০ টন ক্রয় মাত্র ১৫০ টন

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

২৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

উপজেলায় সরকারি ধান কেনার শুরুতে প্রথম ধাপে খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ মাত্র ১৫০ টন ধান কিনতে পেরেছে। এ বছর ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০ টন। ধান কিনা কম হওয়ার পেছনে কৃষিবিভাগের গাফেলতি, কৃষকদের নিকট থেকে মাত্র ১ টন করে ধান ক্রয় করাসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, চন্দনাইশ উপজেলায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। লটারির মাধ্যমে উপজেলার তালিকাভুক্ত ৮৩৪ জন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারিভাবে ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধান ১ হাজার ৪০ টাকা মূল্য দরে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংগ্রহ কার্যক্রম ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু দেড় মাস আগে চন্দনাইশের কৃষকদের গোলায় ধান উঠলেও সরকারি খাদ্য গুদামগুলো কৃষকদের কাছ হতে ধান কিনতে পারছেন না। ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধানের মধ্যে ৪৩ দিনে মাত্র ১৫০ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করেছে খাদ্য বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে কেন তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা অনিয়মের চিত্র। অনেক কৃষক জানে না তাদের নাম কৃষকদের তালিকায় রয়েছে। আবার অনেক কৃষকদের ধান দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই। প্রতিজন কৃষক থেকে মাত্র ১ টন করে ধান সংগ্রহ করছে খাদ্য বিভাগ। এ কারণে যানবাহন খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ না দেখার কারণে অনেক কৃষক সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছে না। তাছাড়া ৮৩৪ জন কৃষকের তালিকার মধ্যে ১৫১ জন মহিলা কৃষক রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ২ জন কৃষক সরকারের খাদ্য গুদামে ধান দিয়েছে। গ্রামের বাজারে কৃষকরা সহজে ধান বিক্রি করতে পারলেও ধানের অর্ধেক হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

দোহাজারী খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, গুদামে ধান আসার মাত্রা খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কেনার গতি না বাড়লে নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ধান বিক্রিতে অনাগ্রহের কারণ সম্পর্কে কৃষক মাসুদ পারভেজ জানান, তিনি একজন তালিকাভুক্ত কৃষক। চন্দনাইশ সদর পূর্ব-জোয়ারা থেকে দোহাজারী খাদ্য গুদামে ১

টন ধান আনতে যে পরিমাণ যানবাহন খরচ লাগে, তাতে ধান বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা সম্ভব নয়। তাই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেকে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছে।
হাশিমপুর গ্রামের তালিকাভুক্ত কৃষক আহমদ হোসেন বলেন, সরকার চন্দনাইশের ৩৩ হাজার কৃষকদের মধ্য থেকে মাত্র ৮৩৪ জনকে লটারির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করেছেন। এদের মধ্যে ১৫১ জন মহিলা কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করলেও মাত্র ২ জন সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করেছেন।

এ ব্যাপারে দোহাজারী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, সোমবার পর্যন্ত তার গুদামে মাত্র ১৫০ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহের সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে বোরো ধান সংগ্রহের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। অপরদিকে খাদ্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে লটারির মাধ্যমে চন্দনাইশে ৮৩৪ জন কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের কথা থাকলেও ধান কম নেয়ার কারণে কৃষকেরা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করছে না। তাই চলতি সপ্তাহে প্রতিজন কৃষক থেকে ২ টন, পরবর্তী সপ্তাহে ৩ টন করে ধান সংগ্রহের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন।

উল্লেখ্য, ১ একর ৪৮ শতক জমির ওপর ব্রিটিশ শাসন আমলে চন্দনাইশ দোহাজারীতে ৫’শ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট ৩টি গুদাম নির্মাণ করা হয়। সেসময় দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ বান্দরবান পর্যন্ত ১০টি থানার জন্য এই গুদামটি ব্যবহার করা হতো। এই সকল গুদামে সর্বোচ্চ ১৮’শ মেট্রিক টন পর্যন্ত খাদ্য রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, ইউনিয়ন ওয়ারী দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে ধান বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। যাতে করে কৃষকরা দ্রুত ধান গুদামে বিক্রি করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ধান সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি আ.ন.ম বদরুদ্দোজা বলেন, সংশি¬ষ্টদের বলে দিয়েছি কৃষকদের সঙ্গে যোগযোগ করে দ্রুত ক্রয়ের জন্য। ধান সংগ্রহ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহী করতে প্রতিজন কৃষকের কাছ থেকে চলতি সপ্তাহে ২ টন আগামী সপ্তাহে ৩ টন করে ধান সংগ্রহের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, কৃষকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ১ টন করে ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট