চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক ছাত্রলীগ একাংশের

নিজস্ব সংবাদদাতা হ চবি

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর পদত্যাগের দাবিতে অবরোধের ডাক দিয়েছে বগিভিত্তিক গ্রুপ রেড সিগনাল (আরএস)। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় গ্রুপটি।
জানা যায়, পূর্ব ঘটনার জেরে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ঝুপড়িতে আরএসের দুই কর্মী ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আরমান ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমরান আশিককে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। পরে সাড়ে ৪টার দিকে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা এক নম্বর রেলক্রসিংয়ে এলাকাবাসীর ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করে আরএস গ্রুপ। এ ঘটনায় দোষীদের বিচার ও ঘটনার দায়ভার গ্রহণ করে সাধারণ সম্পাদক টিপুর পদত্যাগের দাবিতে এ অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় আরএস।

এদিকে দুই কর্মীকে মারধরের পর পৌনে তিনটার দিকে ফতেয়াবাদ স্টেশনে ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যাওয়া শাটলের হোসপাইপ কেটে নেয় আরএসের কর্মীরা। ফলে বিশ^বিদ্যালয় রুটে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে গেল বুধবার ছাত্রলীগ সভাপতি অনুসারী সিএফসি ও মোহাম্মাদ ইলিয়াসের অনুসারী বিজয় গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলার জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে দায়ী করে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিজয় গ্রুপ। অবরোধের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে অবরোধ শিথিল করে গ্রুপটি। এর রেশ কাটতে না কাটতে গতকাল সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ চেয়ে আবারও অবরোধের ডাক দেয় আরএস গ্রুপ।
অবরোধের বিষয়ে আরএস গ্রুপের নেতা ও সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল হাসান দিনার বলেন, ‘গত কয়েকদিন অহেতুক আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল টিপুর অনুসারী সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। প্রশাসনকে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা আজও আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে। তাই আমরা ইকবাল টিপুর পদত্যাগ, ছাত্রলীগ কর্মী ও এলাকাবাসীর উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছি।’
ট্রেনের হোসপাইপ কেটে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। কারা ট্রেন আটকিয়েছে তা বলতে পারব না।’
সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘গত বুধবার আরএসের কয়েকজন ছেলে সিক্সটি নাইনের দুইজনকে মুখোশ পরে মারধর করে। এ ঘটনায় সিক্সটি নাইনের কর্মীরা প্রক্টর অফিসে বিচার চেয়েও সমাধান পায়নি। আজকে ওদের একটা ছেলে সমাজবিজ্ঞান ঝুপড়িতে এসেছিল, তাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। এখানে আমার কি দোষ? আমি তো চাই না কোন ঝামেলা হোক।’

তিনি বলেন, ‘এখন ট্রেন্ড হয়ে গেছে কিছু হলেই অবরোধ। অবরোধ তো মামার বাড়ির মোয়া না। নিজেরা নিজেরা ঝামেলা করবেন। এখন দোষ কার? সেক্রেটারির, এরকম? প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যারা গ-গোল করছে কেন্দ্রের সাথে কথা বলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধের বিষয়ে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার তন্ময় চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ঝামেলার কারনে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, ‘অবরোধের বিষয়টা আমরা জেনেছি। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ছাত্ররা বারবার নিজের মধ্যে মারামারি করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তবে আমরা কাউকে ছাড় দিব না।’
প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি প্রক্টর অফিসে চেয়ারে বসা নিয়ে আরএসের এক কর্মীবে মারধর করে সিক্সটি নাইনের এক কর্মী। এ ঘটনার জের ধরে ২২ জানুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন একটি খাবারের দোকানে সিক্সটি নাইন গ্রুপের তিন কর্মীকে মারধর করে আরএসের কর্মীরা। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে দোষীদের আটকের দাবিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটক ও শহরগামী শাটল ট্রেন প্রায় দুই ঘন্টা আটকে রাখেন সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। পরে বিশ^বিদ্যালয় প্রক্টর বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে দোষীদের আটকের আশ^াস দিলে তারা শাটল ও মূল ফটক ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল আরএসের দুই কর্মীকে মারধের করে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট