চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাড়ৈপাড়া খালের কাজ শুরু হচ্ছে অর্ধযুগ পর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ অর্ধযুগ পর অবশেষে কাজের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহদ্দারহাট বাড়ৈপাড়া খালের। আজ মঙ্গলবার প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং চসিকের অদক্ষতার কারণে প্রকল্পটি অনুমোদনের পরও ছয় বছরের অধিক সময় ঝুলে ছিল। চসিক সূত্র জানায়, প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে। প্রথমবার প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু করা যায়নি। ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণেই কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলে সিটি কর্পোরেশনের অজুহাত। একসময় প্রকল্পটির এমন অবস্থা হয়েছিল যে খোদ সিটি কর্পোরেশনও আশা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতি বছর চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা একটু একটু বাড়ছে। বাড়ছে জনদুর্ভোগ। তাই নানামুখী চাপে পড়ে সিটি কর্পোরেশন শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সময়ক্ষেপনের কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় চারগুন বেড়েছে।

এই বিষয়ে প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন হচ্ছে। দুইটি এলএ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে আমরা ৬টি দরপত্রের বিপরীতে কার্যাদেশ দিয়েছি। এসব ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই কাজ শুরু করবে। মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, আমাদের তৃতীয় দফা মেয়াদ বাড়াতে হবে। তাই তিনমাস আগে মার্চেই আমরা আবেদন করবো। এখন যদি কাজই শুরু না হয় তাহলে আমাদের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে ঝামেলা পড়তে হতে পারে।

সিডিএ’র ১৯৯৫ সালে যে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছিল তাতে তিনটি খাল নতুন খননের প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে একটি বাড়ৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত। অপর দুটি হলো নয়াখাল থেকে শীতলঝর্ণা এবং মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট। পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে ওই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে নগরের বহদ্দারহাটসহ আশপাশে প্রধান সড়ক-উপসড়ক ও এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে চসিক বাড়ৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্ষন্ত একটি নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেয়। এরজন্য সরকার (ভূমি অধিগ্রহণের ২২৪ কোটি টাকাসহ) ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পে ২৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা সরকার এবং ৮১ কোটি টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। তবে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট। ওই সময় প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নতুন খালটি নগরীর বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ্ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পার্শ্বে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রশস্থ ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২ টি রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার কথা রয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রধান অংশ ভূমি অধিগ্রহণ। এই অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে। ওইদিন সিডিএ বরাবর ভূমি অধিগ্রহণের অনাপত্তি ছাড়পত্রের আবেদন করেছিল চসিক। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের কাছে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের জন্য পত্র দিয়েছিল চসিক। ওই সময় জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করলে ‘এলাইনমেন্ট’ জটিলতায় পরে। ডিপিপিতে যেসব জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে অধিগ্রহণ অযোগ্য স্থাপনা ছিল (মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ইত্যাদি)। যার কারনে গৃহায়ণ লিমিটেড নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্টান নিয়োগ করে ‘এলাইনমেন্ট’ ঠিক করে সংস্থাটি। যে কাজ প্রকল্পের অনুমোদের আগে করার কথা ছিল, প্রকল্প পরিচালকের গাফিলত ও অদূরদর্শীতার কারণে সে কাজ করতে হয়েছে প্রকল্প অনুমোদনের পর। এই কারণেই ভূমি অধিগ্রহণের পুরোপুরি অর্থ ছাড় হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই সময় সর্বমোট প্রকল্পের বিপরীতে মাত্র ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়। যার পুরোটায় জেলা প্রশাসনকে দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। পুরো অর্থ দিতে না পারায় ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের ব্যয় চারগুণ বাড়িয়ে সংশোধনীয় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। অবশেষে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লক্ষ্য ৫৬ হাজার টাকা। যা প্রথমবারের তুলনায় চারগুণের বেশি। দ্বিতীয় দফা প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। আর মাত্র ৫ মাস বাকি থাকলেও প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি বলতে যে দুইটি এলএ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, সেই অংশে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করেছে সিটি করপোরেশন। তাই সেখানে কাজ শুরু করবে সংস্থাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট