চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ ২৪ জনকে দুদকে তলব

পূর্বাঞ্চল রেলে ৮৬৩ খালাসি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি

ইমাম হোসাইন রাজু

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ নিয়োগপ্রাপ্ত ২৪ জনকে তলব করেছে দুদক। এদের মধ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সৈয়দ ফারুক আহম্মদসহ ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। যাদের স্ত্রী-সন্তানদের বিভিন্ন নথি-পত্রসহ নির্ধারিত সময়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। একই সাথে তাদের নামে থাকা ব্যাংক হিসেবও চাওয়া হয়েছে। তলবকৃতদের মধ্যে রেলের এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ প্রার্থীও রয়েছে। যাদেরকেও বিভিন্ন নথিপত্রসহ দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলেছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল রবিবার দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের তলবে সাবেক জিএম ফারুক আহম্মদ ছাড়া অন্য কর্মকর্তারা হলেন, নিয়োগ কমিটির তিন সদস্য রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) জোবেদা আক্তার ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেক সাপ্লাইয়ার অফিসার রফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে জিএম ফারুক আহম্মদকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি, রফিকুল ইসলামকে ৫ ফেব্রুয়ারি এবং মিজানুর রহমান ও জোবেদা আক্তারকে ৬ ফেব্রুয়ারি হাজির হতে বলা হয়েছে। এছাড়া জুনিয়ার ওয়েলফেয়ার অফিসার (পূর্ব) মো. আব্বাস উদ্দিন, অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট খন্দকার সাইফুল ইসলাম, অফিস সহকারী শামসুল আরেফীন, শাহিদ হোসেন, জিয়াউর রহমান, জিএম’র ড্রাইভার হারাধন দত্ত, অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট মমিনুল ইসলাম মামুন ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঐশী এন্টাপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাউসার আলমকে পৃথক পৃথক সময়ে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত পৃথক নোটিশে বলা হয়, ‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চললে ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। নি¤œবর্ণিত রেডকর্ডপত্র/কাগজপত্রসহ নির্ধারিত সময়ে দুদক কার্যালয়ে হাজির হওয়ার অনুরোধ করা হলো। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার কোন বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে’।

এর আগে গত ২৪ জুন দৈনিক পূর্বকোণ ৮৬৩ জন খালাসি পদে নিয়োগের নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি, আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অনুসন্ধানে অর্থের বিনিময়ে একব্যক্তিকে একাধিক জায়গা থেকে নিয়োগ, কোটা না মানা, বয়স্ক ব্যক্তিদের চাকরি দেয়াসহ নানান অসঙ্গতি উঠে এসেছে।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নিয়োগ ৮৬৩ পদে খালাসি নিয়োগে কমিটির সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কাছ থেকে চার থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে এমন প্রমাণও পেয়েছে দুদক। তাছাড়া কোটা মানার কথা থাকলেও এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। বরং নিয়োগ কমিটির সদস্যরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও তাদের গাড়ির ড্রাইভার এবং অফিস সহকারীদের দিয়ে এসব অবৈধ কাজ করেছেন বলেও জানায় দুদক সূত্র। দুদকের দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের পরই এ বিষয়ে জানতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদরে তলব করা হয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ ২০১৩ সালের ৪ জুলাইয়ে ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে। সদস্য সচিব ছিলেন আরটিএ’র সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার জোবেদা আক্তার। সদস্য হিসেবে রাখা হয় রেলওয়ের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, এম এ জিন্নাহ ও শেখ খলিলুর রহমানকে। ২০১৩ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের নাম দিয়ে দুই বছর পর সে নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। পরীক্ষার পর পরই নিয়োগ কমিটির সদস্য এম এ জিন্নাহ মারা যান এবং শেখ খলিলুর রহমান অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হন। তবে তাদের স্থলে কাউকে সংযুক্তি না করেই ২০১৯ সালের ১১ মে ফলাফল ঘোষনা করেন কমিটির তিন সদস্য। এরপর থেকেই এ নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট