চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কয়েকটি সন্ত্রাসী দল স্থানীয়দের মাধ্যমে চাষাবাদে জড়িত

বান্দরবানে বন্ধ হচ্ছে না আফিম চাষ

৪টি আফিম ক্ষেত ধ্বংস করল র‌্যাব ৬০ কেজি আফিম রস উদ্ধার

মিনারুল হক, বান্দরবান

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

সীমান্ত পথে পাচার লাভজনক হওয়ায় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এখনো পপি চাষ (আফিম) বন্ধ করা যাচ্ছে না। দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে সীমান্তে বসবাসকারী বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায় ও দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী গ্রুপ আফিম চাষে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঝিড়ি ঝর্নার পাশে এই আফিম চাষ হয়ে আসছে। সহজেই সীমান্ত দিয়ে সব আফিম মায়ানমার ও ভারতে চলে যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে আফিমের ভাল ক্রেতা থাকায় সহজেই স্থানীয় পাহাড়িরা আফিম চাষ থেকে সরে আসতে পারছে না বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে। শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি সকালে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম কেওক্রাডং পাহাড় এলাকায় এ ধরনের বেশ কয়েকটি আফিম ক্ষেতের সন্ধান পায় র‌্যাব ৭ এর সদস্যরা। সকাল থেকে টানা অভিযান চালিয়ে ওই এলাকায় বিস্তীর্ণ আফিম ক্ষেত ধ্বংস করা হয়।

গোপন সংবাদের মাধ্যমে র‌্যাবের সদস্যরা ওই এলাকায় আফিম ক্ষেতের সন্ধান পায়। র‌্যাব জানিয়েছে, রুমা উপজেলার দুর্গম কেওক্রাডং এলাকায় র‌্যাব-৭ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে ৪টি পপি ক্ষেত ধ্বংস করেছে। সেখান থেকে উদ্ধার করা করা হয়েছে প্রায় ৬০ কেজির মত পপির রস (আফিম)। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয় বলে জানায় র‌্যাব। অভিযানে নেতৃত্বে থাকা র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল জানান, রুমার একটি দুর্গম এলাকায় নিষিদ্ধ পপি চাষ হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রুমা সদর থেকে ২০ কিলোমটার দূরে কেওক্রাডং-এর আশপাশে কয়েকটি গভীর জঙ্গল ও পাহাড়ি ঝিরি ঝরনায় অভিযান চালানো হয়। প্রায় ৫ একরেরও বেশি এলাকাজুড়ে ৪টি পপি ক্ষেত ধ্বংস করা হয়। ‘নিষিদ্ধ এসব পপি বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়। প্রায় ৭ একর এলাকাজুড়ে এসব ক্ষেত থেকে ৬০ কেজির পপির রস উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানের সময় ওই এলাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি। অধিনায়ক মশিউর রহমান আরও জানান, ক্ষেতের মালিককে খোঁজা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হবে।

উল্লেখ্য, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রুমা থানছি ও আলীকদমের দুর্গম এলাকায় স্থানীয় পাহাড়ি ও বেশ কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী লাভজনক এই পপি চাষ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। পপি বাগান থেকে উৎপাদিত আফিম সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার ও ভারতে পাচার হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গত বছরের মার্চে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আলীকদমের এ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ আফিম বাগান ধ্বংস করে। এছাড়া বিজিবি সদস্যরা থানছি উপজেলার লেইক্রে এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু আফিম বাগান ধ্বংস করে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় অবস্থানকারী মিয়ানমারের আরাকান আর্মি, আরাকান লিবারেশন পার্টিসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী দল স্থানীয়দের মাধ্যমে আফিম চাষ করে থাকে। এছাড়া লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় পাহাড়িও এই আফিম চাষের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তবে সরকারিভাবে আফিম চাষিদের পুনর্বাসনের একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট