চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ন্যূনতম সেবা না দিয়ে কেন ট্যাক্সের জন্য হয়রানি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:৪১ পূর্বাহ্ণ

স্মার্ট সিটি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় উঠে এসেছে নানা সীমাবদ্ধতা ও সমস্যার কথা। আলোচকবৃন্দ তাদের আলোচনায় উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি করতে হলে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

এম এ লতিফ এমপি: দুঃখজনক হলেও সত্য চট্টগ্রাম শহরের যে তিনজন সংসদ সদস্য আছেন তাদের সাথে কোন সেবা সংস্থা চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজে কোন আলোচনায় বসেননি। এছাড়া নগরবাসীর সাথেও বৈঠক হয়েছে এমন নজিরও নেই। তারা তাদের নিজ গতিতে ইচ্ছেমত কাজ করবেন, আর সেভাবে আমাদেরও চলতে হবে। যাদের ট্যাক্স দিয়ে এই শহর স্মার্ট সিটিতে রূপ নেবে তাদের সাথেও আলোচনা করতে সেবাসংস্থাগুলো নারাজ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও জনগণের মুখোমুখি না হওয়ার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মেয়র হিসেবে পেয়েছি। আমরা দেখেছি তিনি চট্টগ্রামের জন্য শেষ জীবনটুকু দিয়ে গেছেন। তিনি চট্টগ্রামের মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন। এই সিটির জন্য জন্য আমি একজন ব্যক্তিকে দায়ী না করে তার মন মানসিকতাকে দায়ী করবো। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বলছি ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা না দিয়ে কেন আমাদের পেছনে ট্যাক্স এর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে হয়রানি করাচ্ছেন। আগে আমাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। যে পদেই আপনি থাকেন না কেন। আপনি জবাবদিহিতার বাইরে নন।

স্থপতি ইকবাল হাবিব: তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নগর শক্তি অর্থাৎ পরিবহন পরিসেবার গুণগত মান নিশ্চিত করলে সেই নগরীকে স্মার্ট সিটি বলা যায়। উন্নয়নের পেছনে দোঁড়াদোঁড়ি করলেই উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন শব্দটাই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে আরো চল্লিশ বছর আগে। এখন সারা বিশ্বে চলছে টেকশই উন্নয়ন। সেদিক থেকে আমরা স্মার্ট সিটির অনেক পেছনে আছি।

এই নগরীতে একটা স্মার্ট গণপরিবহন নাই। শহরের মধ্যে ফ্লাইওভরের বন্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শহরের মত আহম্মক শহর পুরো বাংলাদেশে নাই। চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের বন্যায় ভাসিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে হত্যা করা হয়েছে। নগরবাসী জানে চট্টগ্রাম হলো খালের শহর। সেই জলের ধারা গণপরিবহনের একটা পথ হতে পারতো। স্মার্ট সিটির গল্প বলে ফ্লাইওভারে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
অনেক প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু একটা প্রকল্পওতো স্মার্ট প্রকল্প নয়। কোন প্রকল্প ডিজিটাল তথ্য নির্ভরতায় তার অগ্রগতি জনবান্ধব কিনা, জনসম্পৃক্ত কিনা সেটি দেখা হয়েছে! বলা হয় উন্নয়নের এক তৃতীয়াংশ বরাদ্দ চট্টগ্রামের জন্য দেয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ট্রাক যদি মালামাল নিয়ে বন্দর থেকে রাস্তা দিয়ে যেতেই না পারে তাহলে ওই বন্দর আমার না।

প্রকল্পের অগ্রগতি, প্রকল্পের কার্যকারিতা, প্রকল্পের জনসম্পৃক্ততা এবং প্রকল্প জনদুর্ভোগ সহনশীল না হলে ওই প্রকল্প জনগণের জন্য না। একবারও কি জানার চেষ্টার করা হয়েছে ওই প্রকল্প জনগণের দরকার আছে কিনা! সারা পৃথিবীতে আমরা বন্যার শহর হিসেবে পরিচিত হয়ে গেছি। কারণ ফ্লাইওভারের নিচেও বন্যা এবং ফ্লাইওভারের ওপরেও বন্যা। এই ভিডিও সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে। এই ফ্লাইওভার কার জন্যে? এই নগরী পাহাড় কাটার জন্য বিখ্যাত। আর আমরা এখন স্মার্ট সিটির কথা বলছি। আমাদের প্রথম কাজ হওয়া দরকার স্মার্টলি চোখ কান খোলা রেখে জনগণের কথা হৃদয় দিয়ে শুনে স্মার্ট প্রকল্পের কাজের উদ্যোগ নেয়া। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ততায় না এনে প্রকল্পের পর প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করলে অনেক ব্রিফকেস নির্ভর প্রকল্প হবে ঠিক। কিন্তু তাতে জনগণ স্মার্ট হবে না। রাস্তা পরিচালনা স্মার্ট হবে না, গভর্মেন্ট ও দেশ স্মার্ট হবে না।
ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ : আমাদের অনেক রিসোর্স আছে। এগুলো বিবেচনায় এনে কাজ করা উচিত। প্রাথমিক কাজগুলোকে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। ১শ ৬৮বর্গ কিলোমিটারের শহরে ৬০ লাখ মানুষের জন্য আগে শহরটাকে বাসযোগ্য করতে হবে। রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড়ানো কোন রকেট সায়েন্স নয়। সড়কের সিগনাল বাতি অকেজো ফেলে রাখা রকেট সায়েন্স নয়। ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হলো রকেট সায়েন্স। আমাদের আগে এগুলো ভাবতে হবে। নিঃস্বন্দেহে আমাদের মেগা প্রকল্পগুলো আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যদি রাস্তায় চলাচলই করতে না পারি তাহলে মেগা প্রজেক্ট দিয়ে কি করবো। বিমানবন্দর থেকে শহরে আসতে আড়াই তিন ঘণ্টা লাগে, এটাতো রকেট সায়েন্স নয়। এয়ারপোর্ট রোডে তিনটি ব্রিজ করতে এগারো মাস সময় লেগে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করায় সেকাজ দু’মাসের রাতারাতি হয়ে যায়। অর্থাৎ আমরা চাইলে পারি। শুধু সদিচ্ছার অভাব।

মোহাম্মদ আমিরুল হক : দশ বছর আগেও আমরা চট্টগ্রামবাসী একটা বাস চাইতাম সরকারে কাছে। আর এখন বাজেটের এক তৃতীয়াংশ চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এতোদিনেও আমরা পোর্ট কানেক্টিং রোডটি ঠিক করতে পারিনি। বন্দর চেয়ারম্যান মাতারবাড়ি করেন, বে টার্মিনাল করেন কিন্তু তিন বছরেও পোর্ট কানেকটিং রোড সংস্কার করতে পারেন নি। আমরা আসলে ঘুমিয়ে আছি। বন্দর থেকে যে ট্রাক সারা বাংলাদেশে যাবে তার জন্য রাস্তা নেই। একের পর এক ফ্লাইওভার করছি। কিন্তু কতটুকু মুক্তি মিলবে যদি রাস্তা ঠিক না থাকে। কিছুদিন পর টানেলের কাজ শেষ হবে, বছর খানেকের মধ্যে বে টর্মিনালও যদি শেষ হয় তখন ট্রাক কোন পথে যাবে? সেটা কি আমরা ভাবছি?
আমাদের ব্যবাসায়ীদের বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিশ্চায়তা দিতে হবে। বে টার্মিনাল না করে বন্দরের মুক্তি নাই। আমাদের এখানে পাবলিক হিয়ারিং নাই। পাঁচটি সেবা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংসদ সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা স্ব স্ব এলাকার মানুষের মতামত নিতে পারে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা হয় না। সমস্ত ডেভালেপমেন্ট নসাৎ হয়ে যাবে যদি আপনারা আপনাদের হোমওয়ার্ক না করেন।

প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম: স্মার্ট সিটি বলতে আমরা যেটা বুঝি সেটি হলো আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের জন্য কোয়ালিটিফুল লাইফ নিশ্চিত করা। এজন্য শুধু স্মার্ট সিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সারা দেশের কথা ভাবতে হবে। গ্রামের মানুষ এখনো শহরমুখী হচ্ছে। তাই গ্রামীণ উন্নয়নের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। একটা সময় আমরা কৃষি নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু দিন দিন আমরা কৃষি থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। যার ফলে কর্মসংস্থানের উপরেও চাপ বাড়ছে। সব উন্নয়ন বিভাগীয় শহরের দিকে হচ্ছে। ফলে শহরগুলোতে মানুষের চাপ বাড়ছে। সেজন্য স্মার্ট সিটি করতে হলে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে আমাদেরকে। সবার আগে আমাদের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। তাদের একত্রে কাজ করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট