চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

আগুনে পুড়ল মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন

ইমাম হোসাইন রাজু

২৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সব কিছু ঠিক থাকলেই আগামী মাসের শুরুতে মেয়ের বিয়ে। ইতোমধ্যে ছেলের বাড়ির লোকজনের সাথে কথাও প্রায় পাকা। একমাত্র মেয়ে, তাই সাধ্য অনুযায়ী খরচ করতে কিছু টাকাও সঞ্চয় করেছেন। কিন্তু আগুনেই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার নুর নাহারের। হারিয়েছেন সঞ্চয়ের নগদ বিশ হাজার টাকাসহ প্রায় লাখ টাকার মালামালও।

সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে বসে কাঁদতে থাকা নুর নাহার বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আর মাইয়ার বিয়া কেমনে দিমু এখন। মাইনষ্যের বাড়িতে কাজ করি যা কামাইছি, সব আগুনে পুড়ে গেছে ভাই। আট দিন আগে স্বর্ণকারের দোকানে কিছু স্বর্ণও বানাইতে দিছি, এগুলা এখন কি দিয়ে নিবো রে ভাই। আমি এখন মাইয়ার বিয়ে কেমনে দিমু’। শুধু নুর নাহারই নয়, অজানা আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় খেটে খাওয়া তিন’শ পরিবারের স্বপ্ন। তাদের মধ্যে একজন জেসমিন আক্তার। পাঁচ বছর আগে ছোট বোনকে নিয়ে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমায় চট্টগ্রামে। আত্মীয়ের সাথে মাত্র চার হাজার টাকায় ডেকোরেটার্স কলোনিতে থাকার রুম ভাড়া নেয় দুই বোন। দুইজনেই কাজ করেন নগরীর টেকনিক্যাল এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। দুই বোনের বেতন থেকে বাড়তি কিছু টাকা দীর্ঘদিন থেকেই জমিয়ে রেখেছেন জেসমিন। গ্রামের বাড়ি সিলেটে ঘর তৈরি করবেন বলে। কিন্তু জেসমিনেরও আর ঘর তৈরি হল না। নুর নাহারের মতো তারও স্বপ্ন পুড়ে গেল। চোখের সামনেই হারালেন জমানো সঞ্চয়টুকু।
কাঁদতে কাঁদতে জেসমিন জানালেন, ‘দিন রাত পরিশ্রম করে ত্রিশ হাজার টাকা জমিয়েছি। গ্রামের বাড়িতে ঘর দিব। কিন্তু চোখের সামনেই সব পুড়ে গেছে। এখন আর কি করবো, তা বুঝতে পারছি না’।

সব হারানো পরও শেষটুকু দেখতে ছোট বোন পারভীন আক্তার পুড়ে যাওয়া ঘরে যেতে চাইলেও যেতে দেননি বড় বোন জেসমিন। বলে ওঠলেন, ‘আর কি দেখবি, সবেইতো শেষ’।

স্থানীয়রা জানায়, পাঁচলাইশের নওশা মিয়া গলির ডেকোরেটার্স কলোনিতে নি¤œ আয়ের মানুষগুলোই বসবাস করেন। অল্প টাকায় বাসা ভাড়া হওয়ায় দূরদুরান্ত থেকে এসেই থাকেন তারা। চার মালিকের আওতাধীন প্রায় তিন’শ পরিবারের বসবাস এই কলোনিতে। যারা দিনের আলো দেখার সাথে সাথেই নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। তবে গতকাল শুক্রবারও কয়েকটি পরিবারের সদস্য ছাড়া সবাই ছিলেন তাদের কাজে। যার ফলেই ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া বড় কোন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা। যদিও যা হারিয়েছেন তাই ছিল এসব মানুষের পুরোই স্বপ্ন। তবে প্রাণ বাঁচায় অনেকেই আদায় করেছেন শুকরিয়াও।
এই যেমন রুনা আক্তার। গত ৩০ বছর ধরেই বসবাস এই কলোনিতে। এক মেয়ে আর এক ছেলের সংসার চালাতেই কাজ করেন পোশাক কারখানায়। মেয়ে স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করলেও ছেলে পড়েন একটি মাদ্রাসায়। কারখানায় যাওয়ার পথেই মাদ্রাসায় ছেলেকে দিয়ে যায় আর ফেরার সময় নিয়ে আসেন তিনি। প্রতিদিনের মতো রুনা আক্তার গতকাল ছিলেন নিজ কর্মস্থলে। তারমধ্যেই ফোনে জানতে পারেন কলোনির আগুনের খবর। নিজের ঘর রক্ষা করতে ছুটে এলেও চোখের সামনেই পুড়তে দেখেছে নিজের ছোট্ট ঘরটুকু। রুনা বলেন, ‘মেয়ে তার স্কুলের ব্যাগটি নিয়ে বের হতে পারলেও আর কিছুই নিতে পারেনি। আমি এসে দেখি, দাউ দাউ করে আগুনে সব পুড়ে যাচ্ছে। এখন পুরোটাই জীবন্ত লাশ হয়ে আছি। কিছুই নেই আমাদের। সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট