চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বান্দরবানে আ.লীগ নেতার ছোট ভাইকে গুলি করে হত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা হ বান্দরবান

২০ মে, ২০১৯ | ২:৫০ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে আওয়ামী লীগের নেতাকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে অপহরণের পর গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গত শনিবার রাত দুইটার দিকে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের ৮ নং রাবার বাগান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম ক্য চিং থোয়াই মারমা (২৮)। সে ওই এলাকার তাউ থোয়াই মারমার ছেলে। নিহত ক্য চিং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রাতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাজবিলার ৮নং রাবার বাগান পুর্নবাসন মারমা পাড়ায় হানা দেয়। সেখানে ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নিহতের বড় ভাই চাইসা অং মারমাকে বাসায় না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ছোট ভাই ক্য চিং থোয়াই মারমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে পাড়া থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ৫ নং রাবার বাগান এলাকায় রাস্তায় হাত বেঁধে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ভোরে স্থানীয়রা খোঁজতে গিয়ে ক্য চিং থোয়াই এর লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। নিহত ক্য চিং এলাকায় মুদি দোকান করতো। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা কে অং প্রু মারমা জানান, সন্ত্রাসীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা চাইসা অংকে না পেয়ে তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগের সমর্থক ক্য চিংকে ধরে নিয়ে যায় ও পরে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করেছে। এদিকে রাজবিলা ও পাশ্ববর্তী এলাকায় একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সমর্থক ও স্থানীয় পাড়াবাসীর মধ্যে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। ঘটনার পর ঐ এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। রাজবিলা পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা এস আই আবদু জলিল জানান, সন্ত্রাসীরা ক্য চিংকে ৪টি গুলি করে পরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ক্য চিং এর হাত গামছা দিয়ে বাধা অবস্থায় ছিল। সন্ত্রাসীরা ৮ নং রাবার বাগান পুর্নবাসন মারমা পাড়ার পাড়া প্রধানসহ ৭ জনকে হুমকি দিয়ে গেছে বলে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানিয়েছেন। হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করলেও পুলিশ এখনো এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না। তবে জনসংহতি সমিতি আওয়ামী লীগের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি উছোসিং মারমা জানিয়েছেন, এর আগেও আমাদের নেতাকর্মী সমর্থককে হত্যা করা হয়েছে। এখন হঠাৎ করেই অন্যের দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
এদিকে মগ লিবারেশন পাটি (স্থানীয় ভাবে মগ পার্টি বা এ এল পি নামে পরিচিতি) তাদের ওয়েব সাইটে রাজবিলা হত্যাকা-ে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তবে সেখানে তারা নিহতের নাম উল্লেখ করেনি। পুলিশ জানায় বিকেলে নিহত ক্য চিং থোয়াই মারমার বড় ভাই চাইসা অং মারমা বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, ৮ নং পুর্নবাসন মারমা পাড়ার পাড়া প্রধান লা সা পু মারমা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা রাতে ক্য চিং থোয়াইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পাড়া কারবারি ও অপর ৭ জনকে দেখে নেয়ার কথা বলে যায়। তাদের যে কোন ভাবে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর পাড়া কারবারি এখন পলাতক রয়েছেন। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পাড়ার লোকজন। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে রাজবিলা রাবার বাগান এলাকার অধিকাংশ পাড়া।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে ওই এলাকায় সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক জয় মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে গত ৭ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির কর্মী বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। অপহরণ করা হয় ফোলাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের অপর কর্মীকে। এখনো তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। একের পর এক হত্যার ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ঐ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট