চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সবার নজর আজ চট্টগ্রামে: মেয়র রেজাউল নাকি শাহাদাত?

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ জানুয়ারি, ২০২১ | ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে উৎসবমুখর নির্বাচন। কিন্তু চসিক নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই ছিল সংঘাত আর সহিংসতা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন, সংঘাত আর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত ছিল ভোটের মাঠ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের ঘিরে উত্তেজনা-উত্তাপ বেশি ছড়িয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলা, ভাঙচুর আর দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ বিএনপির। সবমিলে আজকের ভোট নিয়ে শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনারও সেই আশঙ্কা করেছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন সিইসি।

 

আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটি নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল দুপুর থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।

 

এদিকে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভোটগ্রহণে নিশ্চিন্দ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ ১৪ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

 

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মাঠে রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রয়েছেন সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থাও।’ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। নির্ভয়ে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।

 

চসিক নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও।

 

তবে নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

 

ভোটে সবার নজর থাকবে ফলাফল ঘোষণার উপর। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও আলাদাভাবে ১৪টি বুথ থেকে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

 

এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সবকটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ইভিএম মেশিন ও ভোটগ্রহণ সামগ্রী নিয়ে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।

 

ভোটগ্রহণে ৭৩৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪৩৯ টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩০৬ ভোটকেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নজর বেশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও বিজিবি ২৫ প্লাটুন, র‌্যাবের ৪১টি টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ১৪০টি, মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। সবমিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য।

 

মাঠে থাকবেন ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে, বিজিবি প্লাটুন প্রতি একজন, র‌্যাব সিপিসির সঙ্গে তিনজন করে ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।

 

গত ৮ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রচারণার শুরু থেকে ৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। অভিযোগের মধ্যে পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়া, মারামারি, ভয়ভীতি দেখানো, ভাঙচুরের অভিযোগ ছিল। বেশি অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বেশি অভিযোগ ছিল। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ বেশি ছিল। তবে বেশিরভাগ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

 

প্রার্থী : নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। এরমধ্যে রয়েছেন প্রধান দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মাওলানা এমএ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।

 

১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৫৭ জন মহিলা প্রার্থী। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ জন প্রার্থী। ২৩২ প্রার্থীর লড়াই হচ্ছে আজ।

 

ভোটকেন্দ্র ও ভোটার : নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ হচ্ছে ৪ হাজার ৮৮৬টি। প্রতি ভোটকক্ষে ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন।

 

গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পুরোনো তফসিলে আজ ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

 

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : ভোটগ্রহণে দায়িত্বে থাকবেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে রয়েছে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং অফিসার ১০ হাজার ২৬৮ জন।

 

ইভিএম : চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯টি ভোটকক্ষের জন্য থাকবে একটি করে ইভিএম মেশিন। এছাড়াও দুইটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম মেশিন অতিরিক্ত রাখা হবে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্যও বিশেষ ব্যাকআপ রাখা হয়েছে।

 

বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে টেনশন : স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় নির্বাচন হলেও এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একক প্রার্থীদের ঘোষণা করেছে। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩২টিতেই বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন আওয়ামী লীগে। এর মধ্যে ১৫ ওয়ার্ডে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। প্রচারণার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীতে মাঠ গরম ছিল। ছিল সংঘাত-সহিংসতা। ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আজগর আলী বাবুল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ভোটের মাঠেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কায় রয়েছেন ভোটাররা। বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে টেনশনে আছে আওয়ামী লীগ।

 

দুই ওয়ার্ডে হচ্ছে না কাউন্সিলর নির্বাচন : নগরীর ৪১ সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮ ও ৩১ নং ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে না। ১৮ নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর হারুন উর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুর কারণে ওই ওযার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট