চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

যে আমল প্রশান্তি আনে জীবনে

ওমর শাহ

১ নভেম্বর, ২০১৯ | ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

যে হারে সমাজে অন্যায় অবিচার বেড়ে চলছে মানুষের জীবন দিন দিন হয়ে উঠছে অশান্ত ও অনিশ্চিত! ক্ষণিকের দুনিয়ায়  প্রশান্তি মিলছে হৃদয়ে। তবে বিভিন্ন আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা ঠিকই তাদের অন্তর প্রশান্ত করছেন। সেসব আমল শুধু পরকালের জন্য সওয়াবই বৃদ্ধি করে না, দুনিয়ার জীবনও করে তোলে প্রশান্তময়। এমন কিছু আমল নিচে দেয়া হলো-

 

আল্লাহর স্মরণ করা

স্বভাবতই মানুষ বিস্মৃতিপ্রবণ। অনেক সময় বিস্মৃতির বশবর্তী হয়ে জড়িয়ে পড়ে ক্ষতিকর বিভিন্ন কাজে। জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যও ভুলে যেতে পারে। তবে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার জিকির বা আল্লাহর স্মরণ মানুষকে তার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন রাখে। একইভাবে অন্তর ভরে ওঠে অনাবিল প্রশান্তিতে আল্লাহকে স্মরণের দ্বারা। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে, ‘শুনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই প্রশান্তি লাভ করে অন্তরসমূহ।’ (সূরা রাদ : আয়াত ২৮)

 

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা

মানুষকে তার জীবনে আল্লাহ তায়ালা যেসব নেয়ামত দান করেছেন, মানুষ যদি সেসবের জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে, তবে আল্লাহ তার প্রতি আরও বৃদ্ধি করে নিয়ামত। কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মানুষের এই অনুশীলন একই সঙ্গে কারণ হতে পারে তার আত্মার প্রশান্তি বৃদ্ধির। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত আরও বৃদ্ধি করে দেব।’ (সূরা ইবরাহিম : ৭)

 

আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা

আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা হলো আত্মার প্রশান্তি অর্জনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পৃথিবীতে আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুসারে মানুষের জীবনে সবকিছুই ঘটে। মানুষ সুখ-দুঃখসহ যত অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সবই আল্লাহ তার বাস্তবায়ন করেন বৃহত্তর কল্যাণের অংশ হিসেবেই। যদি এই বিষয়কে মেনে নিয়ে মানুষ তার জীবনে সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তবে পৃথিবীর ক্ষণিক জীবনের এই দুঃখ-সুখ প্রভাবিত করতে পারবে না তার জীবনকে। নিশ্চিতরূপে সে আত্মপ্রশান্তির সক্ষম হবে জান্নাতে প্রবেশ করতে। অতএব, জান্নাতের ঠিকানা পাবে প্রশান্ত আত্মাই। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট যাও ফিরে  সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।’ (সূরা ফাজর : ২৬-৩০)

 

জিকিরে আত্মার প্রশান্তি

রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর হুকুম পালন করেছে যে ব্যক্তি, সে আল্লাহ তায়ালা জিকির করেছে। (শুয়াবুল ইমান, বায়হাকি : ৬৮৭)। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আরজ করলাম- সবচেয়ে উত্তম কোন আমলটি? তিনি এরশাদ করলেন, ‘মৃত্যুর সময় আল্লাহর পবিত্র নামের জিকির, যাতে তোমার জিহবা সিক্ত থাকে।’ হজরত আবু মুসা (সা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জিকির করে না সে যেন মৃত।’ (বুখারি : ৬০৪৪)

 

জিকিরের ফল ও ফজিলত

দুনিয়াতে যারা আল্লাহ তায়ালার জিকির করেন তাদের দান করা হবে চারটি বস্তু। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চারটি বস্তু প্রদান করা হয় জিকিরকারীদের- ১. সাকিনা নামক রহমত তাদের ওপর অবতীর্ণ হয়, অর্থাৎ তারা নিশ্চিন্ত জীবন লাভ করে; ২. তাদের পরিবেষ্টন করে রাখে আল্লাহর রহমত; ৩. তাদের ঘিরে রাখে ফেরেশতারা এবং ৪. আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে সে মজলিসে আলোচনা করেন, যে মজলিসটি তাদের (মানুষের) মজলিসের চেয়ে উত্তম, অর্থাৎ  ফেরেশতাদের আসমানে মজলিস।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)।

 

 

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট