|
জীবন ধারণের অন্যতম উপায় খাবার গ্রহণ করা। প্রাণীকুলকে প্রাণে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই খাবার খেতে হবে। দুনিয়ার জীবনে খাদ্য-আহার ছাড়া কোনো প্রাণীর পক্ষে টিকে থাকা ভীষণ কঠিন। তবে প্রাণীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবজাতি। তাদের রয়েছে খাবার গ্রহণের বিশেষ পদ্ধতি। আর অন্যান্য প্রাণীদের খাবার গ্রহণে বিশেষ কোনো নিয়মের অনুসরণ করতে হয় না। কারণ মানবজাতির খাবার গ্রহণ একটি ইবাদত। তাই খাবার গ্রহণে মানবজাতিকে বিশেষ নিয়মের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। এ নিয়ম মেনে না চললে অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের মাঝে বাকি থাকে না কোনো পার্থক্য। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহম্মদ (সা.) অতি সুন্দর পদ্ধতির শিক্ষা দিয়েছেন মানবজাতির জন্য খাবার গ্রহণের। মুসলিম উম্মাহর জন্য তা মেনে চলা ঈমানী দায়িত্ব ও ধর্মীয় অধিকার। সুতরাং খাদ্য গ্রহণকালে এ পদ্ধতির অনুসরণ করলে মুমিনের প্রতিটি খাদ্যাংশ শুধু খাবার নয়, বরং গণ্য হবে ইবাদত হিসেবে। শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা : রাসুল (সা.) খাবার আগে সবসময় খাবার শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। এবং তার অন্য সাথীদের খাবার শুরুতে তা বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন স্মরণ করো আল্লাহর নাম। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ।’ (রিয়াজুস সালেহিন : ৭২৯)। দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া : খাওয়ার সময় রাসুল (সা.)দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। এটা অনেক বড় সুন্নত। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যত্নশীল ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খালাম্মা একবার রাসুল (সা.)-এর দরবারে গুইসাপ, কাঁধের গোশত ও দুধ হাদিয়া পাঠালেন। তিনি গুইসাপকে দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। তিনি এটা খাননি। তিনি দুধ পান করলেন। এবং ছাগলের গোশত খেলেন। এই হাদিস দ্বারা বুঝে আসে, রাসুল (সা.) দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। অন্য এক হাদিসে আছে, তিনি খাবারগুলো দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। (তুহফাতুল কারি ১০/৩৫৬) লোকমা তুলে খাওয়া : অনেক সময় দেখা যায় খাবার গ্রহণের সময় অনেকের থালা-বাসন থেকে খাবারের লোকমা বা এক-দুই টুকরা ভাত, রুটি কিংবা অন্য সব খাবার পড়ে যায়। তাহলে তা তুলে খেতে হবে। রাসুল (সা.)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লোকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না। (তিরমিজি : ১৯১৫, ইবনে মাজাহ : ৩৪০৩) দোষ-ত্রুটি না ধরা : খাবারের মধ্যে নানারূপ দোষ-ত্রুটি ধরতে আমাদের অনেককে দেখা যায়। এ নিয়ে আমাদের পরিবারে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে দেদার। ঘটছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও। অথচ রাসুল (সা.)-এর তাঁর পূর্ণ জিন্দেগিতে কখনও খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনও খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৮২) খাবারের শেষে দোয়া পড়া : সভ্য মানুষের কাজ অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা। আল্লাহ আমাদের প্রতি খাবারের মাধ্যমে অনেক বড় দয়া অনুগ্রহ করছেন। সভ্যতার লক্ষণ হলো এ দয়ার শুকরিয়াস্বরূপ তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি মাঝে মাঝে এই দোয়াও পড়তেন : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)।
লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
পূর্বকোণ/রাশেদ |