চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জীবনে বাদ পড়া নামাজ আদায়

মাওলানা আবদুল হাকীম ওমর

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১০:১৫ অপরাহ্ণ

দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ইসলামের অন্যতম ফরজ ইবাদত। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন তা আদায় করা আবশ্যক একজন মুসলমানের ওপর। আর নির্ধারিত সময়ে প্রতিটি নামাজই আদায় করতে হবে। কেউ যদি কোনো কারণবশত নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে কিংবা না বুঝে অলসতা করে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাহলে ছেড়ে দেয়া সব নামাজ তাকে কাজা পড়তে হবে। অন্যথায় পরকালে মুখোমুখি হতে হবে কঠিন শাস্তির।

ইসলামের পরিভাষায় ইচ্ছে করে, অলসতা করে কিংবা কোনো কারণবশত ছুটে যাওয়া নামাজকে ‘উমরি কাজা’ বলে। আরবি ‘উমর’ অর্থ জীবন, আর ‘কাজা’ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের পরে আদায়কৃত নামাজ। অর্থাৎ উমরি কাজা হচ্ছে জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজগুলো পরবর্তীতে আদায় করে নেয়া।

উমরি কাজা নামাজের বিধান : ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় জীবনে কখনও কোনো নামাজ ছুটে গেলে তা অবশ্যই আদায় করতে হবে। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নামাজ আদায় করতে ভুলে যায়, স্মরণ হওয়ামাত্রই যেন সে তা আদায় করে নেয়। এটাই এর একমাত্র ক্ষতিপূরণ।’ (বুখারি : ৫৯৭)। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ ঘুম বা অলসতার কারণে নির্ধারিত সময়ে কোনো নামাজ আদায় করতে না পারে, তাহলে নামাজের কথা স্মরণ হওয়ামাত্রই যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে আমার স্মরণে নামাজ কায়েম কর।’ (মুসলিম : ৬৮৪)

যে ব্যক্তি নামাজ আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে বা নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উদাসীন থাকে, তার ছুটে যাওয়া নামাজের বিধান সম্পর্কে রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি বললেন ‘এর প্রায়শ্চিত্ত হলো, স্মরণ হওয়ামাত্রই কাজা আদায় করে নেয়া।’ (নাসায়ি : ৬১৪)। এসব হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। তা হলো, যদি কেউ কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে, তার করণীয় হলো, এর কাজা পরবর্তীতে অবশ্যই আদায় করবে। জীবনে যত ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়েছে, অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে জীবনে যত ফরজ নামাজ কাজা হয়েছে সবই করতে হবে আদায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও হাদিসে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘খন্দকের যুদ্ধের সময় যুদ্ধের প্রচন্ডতার কারণে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আসরের নামাজ ছুটে যায়। যুদ্ধের তীব্রতা কমে এলে রাসুল (সা.) মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সে নামাজের কাজা আদায় করেন।’ (মুসলিম : ৬২৭)

কেউ কেউ মনে করেন ছুটে যাওয়া নামাজের সংখ্যা বেশি হলে কাজা আদায় করার দরকার নেই; বরং তওবা করলেই প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে, তা মোটেই সঠিক নয়। ‘নেয়ামুল কোরআন’ ও ‘মকসুদুল মুমিনিন’সহ প্রচলিত কিছু বইয়ে ‘উমরি কাজা’ আদায় না করে কিছু দোয়া-দরুদ পড়ে নিলেই হয়ে যাবে মর্মে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলোর নির্ভরযোগ্য ও সঠিক কোনো সূত্র বা ভিত্তি নেই। (আল মাওজুআতুল কুবরা : ৩৫৬)

উমরি কাজা নামাজের প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারে ফকিহদের বক্তব্য হচ্ছে কাজা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে জাগ্রত রাখতে হবে তওবার অনুভূতিও। আর স্মরণ রাখতে হবে, ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজের কাজা আদায় করা ওয়াজিব।’ (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৮০)

উমরি কাজা আদায়ের পদ্ধতি : উমরি কাজা আদায়ের নেই কোনো নির্ধারিত সময়। মাকরুহ সময় ছাড়া নামাজ আদায়ের বৈধ যেকোনো সময়ে আদায় করা যাবে কাজা নামাজ। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১৮০)। কাজা নামাজের সংখ্যা যদি কম হয় এবং মনে রাখা সম্ভব হয়, তাহলে কাজা আদায় করার সময় নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে যে, অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের নামাজের কাজা পড়ছি। আর কাজা নামাজের সংখ্যা যদি এত বেশি হয় যে, সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব নয় তাহলে একটা অনুমান করে কোন নামাজ কত ওয়াক্ত কাজা হয়েছে, তা নির্ধারণ করে নেবে।

তারপর যে ওয়াক্তের কাজা আদায় করতে চাইবে সে ওয়াক্তের নিয়ত করবে যে, অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামাজ আদায় করছি। যেমন কাজা হওয়া নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের কাজা আদায় করতে চাই। তাহলে নিয়ত করবে আমার জিম্মায় যত ফজরের নামাজ কাজা আছে, তার সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষটা আদায় করছি। এভাবে একে একে সব আদায় করবে, যাতে জীবনের সব ছুটে যাওয়া কাজা নামাজ আদায় হয়ে যায়। তবুও শেষ না হলে জীবনের শেষ মুহূর্তে অসিয়ত করতে হবে অবশিষ্ট নামাজের ফিদয়া দেয়ার। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/৬৮; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৪/৩৩২)

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট