চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঘুম আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত

শামসুদ্দীন সাদী

২৩ আগস্ট, ২০১৯ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে ঘুম। অনিদ্রা অনেক বড় রোগ। মানুষের কর্মশক্তি অব্যাহত রাখা ও সুস্থ-সবল জীবনের জন্য ঘুম অতি জরুরী একটি বিষয়। ঘুম না হলে মানুষের স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্য।’ (সুরা ফুরকান : ৪৭)। ঘুমানোর আগে-পরে কিছু আদব ও নিয়ম কানুন রয়েছে। সেগুলো একদিকে নবীজির সুন্নত অপরদিকে স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানসম্মত, বিভিন্ন ক্ষতি ও দুর্ঘটনা থেকেও মুক্তির উপায়। নিচে এ সংক্রান্ত কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো।

আগুন নিভিয়ে দেওয়া : ঘরের কোথাও আগুন প্রজ্বলিত থাকলে ঘুমানোর আগে ‍উচিত তা নিভিয়ে দেয়া। আমরা অনেকে গ্যাসের চুলা কিংবা বাতি জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে যাই, এটা কিছুতেই উচিত নয়। রাতে আগুন প্রজ্বলিত থাকলে শয়তান ও ইঁদুর গৃহে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। হযরত সালিম (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন রেখে ঘুমাবে না।’ (বুখারি : ৫৮৫৬)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার একটি ইঁদুর একটি সলিতা টেনে নিতে লাগল। তা এনে নবীজির সামনে একটি চাটাইয়ের ওপর ফেলে দিল, যার ওপর নবীজি বসা ছিলেন। সলিতার আগুন চাটাইয়ের এক দিরহাম পরিমাণ অংশ পুড়ে ফেলল। অতঃপর নবীজি (সা.) বললেন, তোমরা যখন ঘুমাও তখন বাতি নিভিয়ে দেবে। শয়তান এ রূপ করতে শিখিয়ে দেয়। ফলে তা তোমাদেরকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ : ৫২৪৭)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এর অভ্যাস ছিল সকলে ঘুমিয়ে গেলে তিনি পুরো ঘর ঘুরে দেখতেন, কোথাও আগুন প্রজ্বলিত আছে কি না। থাকলে নিজে তা নিভিয়ে দিতেন।

হাড়ি পাতিল ঢেকে রাখা : ঘুমানোর আগে ঘরের দরজা বন্ধ করা। খাবারের হাড়ি পাতিল, পানির জগ বোতল কলস ইত্যাদি ঢেকে রাখা। খালি পাত্র উপুড় করে রাখা। কারণ দরজা খোলা ফেলে শয়তান বা অন্য ক্ষতিকর প্রাণি প্রবেশ করতে পারে। পাত্র খোলা থাকলে শয়তান তা চেটে রাখে। হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা (শয়নকালে) পাত্রসমূহ ঢেকে রাখবে, পানির মশকগুলোর মুখ বন্ধ রাখবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতি নিভিয়ে দেবে। কারণ, শয়তান মশকের (বন্ধ) মুখ খুলতে পারে না, (বন্ধ) দরজা খুলতে পারে না এবং আবৃত পাত্রও অনাবৃত করতে পারে না। যদি তোমাদের কেউ তার পাত্রের ওপর রাখার জন্য কাঠি ছাড়া আর কিছু না পায় তবে সে যেন তাই রাখে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কেননা, দুষ্টু ইঁদুর বাড়িওয়ালার বাড়ি দ্রুত জ্বালিয়ে দেয়।’ (মুসলিম : ৫০৭৪)

বিছানা পরিষ্কার করা : বিছানা ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। কারণ বিছানায় ক্ষতিকর কিছু পড়ে থাকতে পারে। তাছাড়া ময়লা-আবর্জনায় রাত যাপন করা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি তার বিছানায় যায় তখন তার উচিত লুঙ্গির ভেতরের (নিচের) অংশ দিয়ে (হলেও) তার বিছানা ঝারা এবং আল্লাহর নাম নেয়া। কেননা সে ব্যক্তি জানে না যে, তার যাওয়ার পরে বিছানায় কী পড়েছে।’ (বুখারি : ৫৮৮১)

মুখ পরিষ্কার করা : ঘুমানোর আগে উচিত মুখ পরিষ্কার করে নেয়া। কারণ দাঁতের ফাঁকে খাবারের কণা আটকে থাকে এবং বিভিন্ন রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। মেসওয়াক বা ব্রাশের মাধ্যমে মুখ পরিষ্কার করলে তা দূর হয়ে যায়। নবীজি (সা.) ঘুমের আগে ও ঘুম থেকে ওঠে মেসওয়াক করতেন।

হাতের চর্বি বা ময়লা পরিষ্কার করা : রাতে শোয়ার আগে হাতে তেল চর্বি বা ময়লা লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে নেয়া জরুরী। হাতে চর্বি লেগে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে কাঁথা বালিশ ও বিছানা চাদরও ময়লা হয়ে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চর্বিমাখা হাতে রাত যাপন করল এবং তা ধুয়ে পরিষ্কার করল না; কোনো বিপদ ঘটলে সে যেন নিজেকে ছাড়া কাউকে দোষারোপ না করে।’ (আবু দাউদ : ৩৮৫২; তিরমিজি : ১৮৬০)

শোয়ার নিয়ম : আদব হলো ডান কাতে ঘুমানো। নবীজি (সা.) এভাবেই ঘুমাতেন। প্রয়োজনে চিৎ হয়েও ঘুমানো যায়। কিন্তু উপুড় হয়ে ঘুমানো কিছুতেই উচিত নয়। নবীজি (সা.) এর থেকে নিষেধ করেছেন। হযরত আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘একদা নবী করিম (সা.) মসজিদে এমন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যে উপুড় হয়ে পড়েছিল। তিনি তাকে পা দ্বারা ঠুকলেন এবং বললেন, ওহে ওঠ, এটা জাহান্নামীদের শয়ন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১২০৫)

ঘুমের দোয়া : ঘুমানোর আগে সুরা তাবারাকা পড়া উত্তম। নবীজি (সা.) এই সুরা না পড়ে ঘুমাতেন না। তারপর এই দোয়া পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু ওয়া আহইয়া।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার নামে আমি মারা যাবা এবং আপনার নামেই জীবিত হব। তা ছাড়া আয়াতুল কুরসি, চার কুল ও দরুদ শরিফ পড়ে গায়ে ফুঁ দিয়ে ঘুমালে সারারাত জিন-ভূতের বদ আছর থেকে বাঁচা যায়।

জাগ্রত হওয়ার দোয়া : ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে আল্লাহর প্রশংসা করে এই দোয়া পড়া ‘আল হামদুলিল্লাহিল্লাযি আহয়ানা বা‘দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’ অর্থ : সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদের মৃত্যুর পরে জীবিত করেছেন এবং তাঁর কাছেই আমাদের একত্রিত হতে হবে।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কাওরান বাজার, ঢাকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট