চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি কারণ ও উত্তরণের উপায়

মো. আবুল হাসান

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

ইংরেজি একটি বিদেশি ভাষা। অতএব শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি নিয়ে বলতে গেলে একটু প্রাসঙ্গিক কথায় যেতে হয়। বাংলাদেশের নাম বাংলা ভাষা থেকে উৎপত্তি। আর যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে তাদের বাঙালি জাতি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সেই অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু কিছু অংশ যেমন কলকতা ও শিলিগুড়ির মানুষরাও বাংলায় কথা বলে। তবে ভারতের সেই সকল মানুষরা কিন্তু শুধু বাংলাচর্চা করে তা না, তারা কিন্তু দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজিও চর্চা করে। অতএব যারা দুটি ভাষায় কথা বলে তাদের দ্বিভাষী বলা যায়। এখানে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা বেশির ভাগ বাংলাদেশিরা শুধু একটি ভাষায় অর্থাৎ বাংলায় কথা বলি এবং বাংলাকেই চর্চা করি। তাই আমরা একভাষী মানুষ অর্থাৎ ইংরেজি ভাষায় তাদের বলা হয় মনোলিনগুয়েল (গড়হড়ষরহমঁধষ)। এখন আসা যাক বাংলাদেশিদের অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি প্রসঙ্গে। প্রথমতঃ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা হচ্ছে একভাষী (গড়হড়ষরহমঁধষ) থাকার চিন্তা, চেতনা অর্থাৎ দ্বিতীয় আর একটি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করা। ইংরেজিতে ভীতির দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে আমাদের দেশে ইংরেজি বিষয়ের ক্লাসটি শিক্ষকদের বাংলায় নেয়ার প্রবণতা। ইংরেজি ক্লাসটি যখন বাংলায় পরিচালিত হয় অর্থাৎ ইংরেজি বিষয়টি বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা দেয়া হয় তখন শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়টাকে ইংরেজিতে না ভেবে বাংলায় ভাবতে শুরু করে। এই ক্ষেত্রে শিক্ষক যদি একটি ইংরেজি শব্দের আরেকটি সহজ শব্দ ব্যবহার করেন তবে শিক্ষার্থী কিন্তু সেই শব্দটি শেখার চেষ্টা করবে। আর ইংরেজি শব্দটির সরাসরি বাংলা অর্থ বলে দেয়া হলে এই শিক্ষার্থী সেই বাংলা শব্দটি কল্পনা করবে, নতুন কোন ইংরেজি শব্দ নয়। এই ক্ষেত্রে বলতে হয় ইংরেজি ক্লাসটি চাইলে শিক্ষক ইংরেজিতে পরিচালনা করতে পারেন। ক্লাসটিতে শিক্ষক যদি একটি শব্দের অন্য একটি সহজ প্রতিশব্দ ব্যবহার করেন কিংবা কোন শিক্ষা উপকরণের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দেন তবে ক্লাসটি হয়ে উঠে অনেক বেশি প্রাণময় ও ফলপ্রসূ।

ইংরেজি ভীতির তৃতীয় কারণ হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণে দুর্বলতা। আমরা যে ভাষাই শিখি না কেন সেই ভাষার কিছু মৌলিক নিয়মকানুন আছে, যা ছাড়া সেই ভাষার বাক্য গঠন ও শব্দের সঠিক প্রয়োগ কোনভাবেই সম্ভব নয়। অতএব, যে কোন ভাষায় কথা বলতে হলে সেই ভাষার ব্যাকরণ অবশ্যই জানতে হবে।

সবকথার শেষ কথা হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের এই কথাটি বুঝাতে হবে যে, আমাদের বাংলা ভাষা শুধু মাত্র বাংলাদেশ আর ভারতের সামান্য অংশে জুড়ে চলমান। কিন্তু বাকি পৃথিবীতে আর কোথাও বাংলা চলবে না। তবে ঐ সকল দেশে আর যাই চলুক না কেন সাথে ইংরেজিটা চলবে কারণ ইংরেজি হচ্ছে বর্তমান বিশে^র বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিক ভাষা এবং সেই ভাষাটি জানা থাকলে অন্তত কেউ না খেয়ে মরতে হবে না। ভাষা হচ্ছে এমন একটি হাতিয়ার যা দিয়ে মানুষ মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। আমি যার সাথে কথা বলবো তার বোধগম্য ভাষাটি আমার অবশ্যই জানা থাকতে হবে, তা না হলে কোন কিছুই তাকে বোঝানো সম্ভব হবে না। অতএব, শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি দূর করতে হলে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা এনে তাদের বোঝাতে হবে এবং তাদেরকে ইংরেজি চর্চা করার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। ভাষার ক্ষেত্রে সেই কাজটি করা হলে এবং ইংরেজি ক্লাসটি শুধু ইংরেজিতে পরিচালনা করলে ইংরেজি ভীতি দূর হবে। সেক্ষেত্রে নতুন প্রজন্ম মনোলিনগুয়েল থেকে মাল্টিলেনগুয়েন হতে পারবে (বহুভাষী) এবং জাতি পরিণত হবে একটি দক্ষ মানবশক্তিতে অর্থাৎ ঝশরষষবফ গধহঢ়ড়বিৎ সৃষ্টির মাধ্যমে এই দেশকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া নতুন প্রজন্ম একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা করতে পারবে এবং সেই সূচনার মাধ্যমে তারা নির্বাক না থেকে সবাক থাকতে পারবে।

লেখক ঁ চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট