চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কারিগরি শিক্ষা ‘স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ)’

দক্ষতা উন্নয়নে বাড়ছে সক্ষমতা

ইমরান বিন ছবুর

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:২৬ পূর্বাহ্ণ

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও দেশ-বিদেশের শ্রমবাজারের বাস্তব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কারিগরি শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে “ঝশরষষং ধহফ ঞৎধরহরহম ঊহযধহপবসবহঃ চৎড়লবপঃ (ঝঞঊচ)” শীর্ষক প্রকল্প।
ঝঞঊচ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর যুবসমাজের কাছে কারিগরি শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তোলা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা। প্রকল্পটির কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে:
ক) সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের অংশ হিসেবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়ন করা এবং আর্থিকভাবে অনগ্রসর পরিবারের শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদান, প্রাতিষ্ঠানিক অনুদান, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কলকারখানার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
খ) ওহফঁংঃৎু ঝশরষষং ঈড়ঁহপরষ এবং ঘধঃরড়হধষ ঝশরষষং উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঈড়ঁহপরষ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং এসএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এ্যাপ্রেন্টিসশিপ বিষয়ক পাইলটিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।
গ) কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সংস্থা, যেমনÑ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ঘ) প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কাঠামো সৃষ্টি, যোগাযোগ কৌশল বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা : ঝঞঊচ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। সহ-বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প মেয়াদ: স্টেপ প্রকল্প প্রাথমিকভাবে ২০১৫ সালে সমাপ্ত হবার কথা ছিল। সরকার দ্বিতীয় বারের জন্য প্রকল্প দলিল সংশোধনপূর্বক মেয়াদ জুন ২০১৯ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়। মূলত বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্নমুখী কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠুভাবে গুছিয়ে আনা এবং কম্পোনেন্ট, সাব-কম্পোনেন্টসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য সর্বশেষ সংশোধনী (উইন্ড আপ কার্যক্রমের জন্য) আনা হয়।
ইতোমধ্যে স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (ঝঞঊচ) দেশের কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, ভর্তি ও পাসের হার বৃদ্ধি, ইনস্টিটিউট ও কল-কারখানার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটি ২০১৬ সালে সমাপ্ত হবার কথা থাকলেও সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ২০১৯ পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করেছে। অগ্রযাত্রার এ ধারা অব্যাহত থাকলে, আশা করা যায়, ২০২০ সালের মধ্যে শতকরা ২০% শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্রকৃত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের রূপকল্প অর্জন সহজতর হবে।
১ লাখ ৪৭ হাজার পাঁচ শত ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। নিন্ম-মধ্যম আয়ের এ দেশটির ৬৬ ভাগ মানুষ এখন কর্মক্ষম বয়সের। শীঘ্রই একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে আমাদের এ সম্ভাবনাময় মানুষগুলোর হাতকে দক্ষ কর্মীর হাতে রূপান্তর করতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে গেছেন, “শুধু বিএ, এমএ, পাস করে লাভ নেই। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।” তাই আজ সর্বাগ্রে প্রয়োজন কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের যথাযথ মানোন্নয়ন ও ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলা।
সরকার ইতোমধ্যেই এ লক্ষ্যে নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করেছে ‘স্কিলস এন্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’, বা ‘স্টেপ’ প্রকল্প।
১০ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য ছিল কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে এ শিক্ষাকে যুবসমাজের কাছে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করে তোলা এবং প্রশিক্ষিতক ও দক্ষ জনগোষ্ঠীর জন্য দেশ-বিদেশে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা। ২০১০ সালে যাত্রা করা এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক এবং কানাডা।
বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সফল এ প্রকল্পটি আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের মাসে ৮০০ টাকা হারে বৃত্তি প্রদান করেছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এ অর্থ দিয়ে পড়ালেখার ব্যয়ভার এবং আনুষাঙ্গিক খরচ বহন করেছে।
এতে ঝরে পড়ার ঝুকির মুখে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি ক্লাসে উপস্থিতি এবং পরীক্ষার ফলাফলেও পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব।
আবেদনকারী পুরুষ শিক্ষার্থীদের মোটামুটি অর্ধেককে এই বৃত্তি দেয়া হয়েছে। আর ধনী-গরিব নির্বিশেষে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সকলেই এই বৃত্তি পেয়েছে। এভাবে স্টেপ প্রকল্প সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১৬২টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪১৭ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করেছে।
কারিগরি শিক্ষা অনেক বেশি ব্যবহারিক ক্লাস নির্ভর। এর জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ছিল দীর্ঘ দিনের। প্রকল্প থেকে পলিটেকনিকগুলোর যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, শিখন-শিক্ষণ উপকরণ সরবরাহ, শিল্প-কারখানা পরিদর্শন, প্লেসমেন্ট সেল গঠন, কলকারখানা থেকে অভিজ্ঞ অতিথি বক্তা আমন্ত্রণ ইত্যাদির জন্য নির্বাচিত সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে সাত কোটি টাকা হারে প্রাথমিক মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক কোটি পঁচানব্বই লক্ষ টাকা এবং নতুনভাবে নির্বাচিত আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিকে দেয়া হয়েছে তিন কোটি বার লাখ টাকা।
অনুদানের এ অর্থ দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরগুনা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার ও পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ দেশের ৫৬টি ডিপ্লোমা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি ইন্সটিটিউটের ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ, ক্লাসরুম ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো সেজেছে নতুনরূপে।
কারিগরি শিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য দেশ-বিদেশে সাবজেকটিভ, প্যাডাগোজি, সফট স্কিল ইত্যাদি বিষয়ের উপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ হাজার ৯৮০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
কারিগরি শিক্ষায় যোগ্য শিক্ষক এবং নিয়মিত ব্যবহারিক ক্লাস যেমন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে শিল্প কারখানার ঘনিষ্ঠ সংযোগ। এ লক্ষে নির্বাচিত পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোতে প্রকল্পের অনুদানে গড়ে তোলা হয় প্লেসমেন্ট সেল।
সেলগুলো নিয়মিত শিল্পকলকারখানার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর ইন্ডাস্ট্রি ট্যুরে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বায়োডাটা প্রস্তুতিতে সহায়তা প্রদান, ডাটাবেজ তৈরি, শিল্পকারখানার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, ভ্যাকেন্সি শেয়ারিং, জব প্লেসমেন্ট সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করেছে।
প্লেসমেন্ট সেল তথা স্টেপ প্রজেক্টের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল পলিটেকনিকগুলোতে মহাসমারহে জব ফেয়ার আয়োজন করা। পূর্বে যেখানে কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে জব ফেয়ার আয়োজনের কথা কেউ কল্পনা করতে পারেনি, সেখানে স্টেপের মাধ্যমে শুধু জবফেয়ারের আয়োজনই করা হয়নি, শতশত শিক্ষার্থী এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি লাভের সুযোগ পেয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনি কারিগরি শিক্ষার অগ্রযাত্রায় গৃহীত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দেশের অভ্যন্তরে এবং বৈদেশিক শ্রম বাজারে দক্ষ শ্রমজীবীর চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে বেকারত্বের হার নিয়ন্ত্রণ এবং দারিদ্রতা দূরীকরণের লক্ষ্যে স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। ৫৫টি সরকারি ও ২৪টি বেসরকারি, মোট ৭৯টি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুবসমাজকে বিভিন্ন ট্রেডে ছয় মাস বা ৩৬০ ঘন্টা মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মূলত স্বল্প-শিক্ষিত যুবসমাজকে অল্প সময়ে দক্ষ শ্রমশক্তি হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল এ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য।
ট্রেডগুলোর মধ্যে ছিল ড্রাইভিং কাম অটোমেকানিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হাউস ওয়ারিং, রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং, অটোমেকানিক্স, ওয়েল্ডিং ও ফেব্রিকেশন, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, গার্মেন্টস, ডাইং, প্রিন্টিং ও ব্লক-বাটিক, জেনারেল ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্ট্রি, সিভিল কনস্ট্রাকসন, ফ্রুট ও ফুড প্রসেসিংসহ ৩২টি বিষয়।
ছয় মাস মেয়াদী এ প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীকে কোন ফি বা অর্থ প্রদান করতে হয়নি। টিউশন ফির অর্থ প্রকল্প তথা সরকার বহন করেছে। উপরন্তু প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে মাসিক ৭০০ টাকা হারে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
বছরে দু’বার এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এভাবে মোট ৫৫টি সরকারি ও ২৪টি বেসরকারি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭৭ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে যাদের ৪৮ ভাগই পাস করার ছয় মাসের মধ্যে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পেরেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী কারিগরি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে শীঘ্রই একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
দেশের টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজসমূহে পরিচালিত এসএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি পাইলটিং প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়। এর আওতায় নবম-দশম শ্রেণির ৯ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় দেড় মাস মেয়াদী এ্যাপ্রেন্টিসশিপ বা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ গঠন করা হয়েছে। এ বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ স্টেপ প্রকল্প বাস্তবায়নে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন।
কারিগরি শিক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, যেমনÑ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও স্টেপ প্রজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এ সকল প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি সরবরাহ, গবেষণা পরিচালনা, তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়ন, জনবলের প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্টেপ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। সফল এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব রওনক মাহমুদ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কারিগরি শিক্ষা তত্ত্বাবধানকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
স্টেপ প্রকল্পের অন্যতম একটি অর্জন হলো পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটগুলোতে শূন্যপদের বিপরীতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসমূহর শিক্ষকদের প্রায় অর্ধেক পদ দীর্ঘদিন শূন্য ছিল। এসব পদে দুই দফায় এক হাজারের অধিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তারাই এখন কারিগরি শিক্ষার প্রাণ।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশের লক্ষ্যে প্রকল্প থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হয়েছে ‘স্কিলস কম্পিটিশন’। এর মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের নব নব আবিষ্কারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সারা দেশ। কারিগরি শিক্ষাঙ্গনের সর্ববৃহৎ এ আয়োজন থেকে উঠে আসা অনেক আবিষ্কারই এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্টেপ প্রকল্পের সহায়তায় প্রশিক্ষিত হয়ে ইতোপূর্বে চাকরির সন্ধানরত অনেকেই এখন হতাশার গ-ি পেরিয়ে নিজের তথা পরিবারের সচ্ছলতা আনতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। চাকরির পাশাপাশি অনেকেই আতœকর্মসংস্থানের মাধ্যমে একদিকে যেমন নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে, তেমনি অন্যদের বেকারত্ব মোচনেও রাখছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

লেখক ঁ নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট