চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেজাল খাদ্য নীরব ঘাতকের মতো কেড়ে নেয় প্রাণ

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মো. আতিয়ার রহমান। খাদ্যে ভেজাল প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন পূর্বকোণের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
রায়হান উদ্দিন।

ভেজাল খাদ্য নীরব ঘাতকের মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মো. আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, “খাদ্যে ভেজাল এক নীরব ঘাতক। আমাদের দৈনন্দিন বাজারের প্রত্যেকটি খাদ্যজাতীয় দ্রব্যের মধ্যেই ভেজালে ছেয়ে গেছে। ফরমালিন, কার্বাইড, ইউরিয়া সার, হাইড্রোজসহ নানারকম ক্ষতিকর ও রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে খাদ্যে ভেজাল দেয়াসহ ‘বিষ’ মেশানো হচ্ছে। এ খাবার আমাদের জাতিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “ফরমালিন হচ্ছে বর্ণহীন গন্ধযুক্ত ফরমালডিহাইড। ফরমালিন হল একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ। ফরমালিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেয়া। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। ফরমালিন হল ননফুড গ্রেডের প্রিজারভেটিভ। তাই খাদ্যদ্রব্যে এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ধূসর কালো-দানাদার রসুনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয় ইস্পাত কারখানায়। ধাতব বস্তু কাটাকাটিতে বা ওয়েল্ডিং কাজে। কিন্তু এগুলো দৈনন্দিন খাবার গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে।”
সর্বত্র ভেজাল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোথায় নেই ভেজাল? হাত বাড়িয়ে যা কিছু খাচ্ছি সবকিছুতেই ভেজাল। মাছে ফরমালিন। অপরিপক্ক টমেটো হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে। গরুকে নিষিদ্ধ ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে। পচনরোধে বিষাক্ত ফরমালিন, তাজা দেখাতে ফলমূল ও শাকসব্জিতে কার্বাইড মিশানো হচ্ছে। আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, মুড়িতে ইউরিয়া-হাইড্রোজ, পানিতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই। ঘাসের গুঁড়ার সঙ্গে রং মিশিয়ে নামি-দামী ব্র্যান্ডের মসলা তৈরি করা হচ্ছে। ছোলা ও মুড়ি সাদা করতে মেশানো হয় হাইড্রোজ। কৃত্রিম রং মিশিয়ে নকল ঘি বানানো হচ্ছে। এমনকি শিশুদের বিকল্প খাদ্যেও মেলামিন মেশানো হচ্ছে। আম, আনারস ও টমেটোতে কেমিক্যাল মিশিয়ে হলুদ করা হচ্ছে।”
মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ভেজাল খাদ্য উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “খাদ্যে নানাবিধ ভেজাল দেওয়া হয়। এজন্য নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে সংক্রমিত হচ্ছেন অনেকেই। যেমন ভেজালের কারণে চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রে এলার্জি, এজমা অথবা এজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। আবার রাসায়নিক ভেজালের কারণে লিভার এবং কিডনি আক্রান্ত হয়। লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে লিভার ডেমেজ হয়। কিডনিও কার্যকারিতা হারায়।
রসায়নবিদ ড. মো. আতিয়ার রহমান আরো বলেন, “হজমের ক্ষমতা কমে পাকস্থলীর স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হলে বদহজম হয়। এ কারণে ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও হয়। আবার এর বাইরে অনেক খাদ্যে ভেজাল স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির বোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আবার কিছু ভেজাল স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত এবং উত্তেজিত করে, যার কারণে হার্টরেট, পালস রেট ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে ক্লান্তিবোধে ভোগে। ঘুম হয় না এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আবার কিছু ভেজাল ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে। এসব রোগের বাইরে ক্যান্সারের মতো ক্রনিক রোগের সৃষ্টি হয়। নারীরা স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এক কথায় ভেজাল খাদ্য নীরব ঘাতকের মতো প্রতিনিয়ত আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট