চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক অপরিষ্কারে আশঙ্কা রোগের

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর হালিশহর, শেরশাহসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছিল। এ কারণে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি এ ঘটনায় জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে হালিশহরে কমপক্ষে ১০ জন মারা যায়। ২০১৮ সালের জুনে এ ঘটনা ঘটে। তখন এ ঘটনার জন্য স্থানীয়রা চট্টগ্রাম ওয়াসাকে দায়ী করেছিল। তবে ওয়াসার পক্ষ থেকে এসব ঘটনার জন্য সংস্থাটি দায়ী নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, ওয়াসার পাইপ লিক হয়ে হালিশহর, শেরশাহসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের পায়খানা, পুকুরের পানি, ড্রেনের পানি ওয়াসার পাইপের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। এ কারণে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা, পোকা পাওয়া গিয়েছিল। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম ওয়াসা দ্রুত পানি পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একই সাথে সিটি করপোরেশন এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে। হালিশহর এলাকায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ ওই সময় জন্ডিস ও হেপাটাইটিস-ই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। খবর পেয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল সে সময় আক্রান্ত কয়েকশ মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৩১ জনের শরীরেই হেপাটাইটিস-ই পায়। স্থানীয়দের দাবি ওই সময়ে এক মাসে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ওয়াসার পানিতে পানিবাহিত রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থ্পানা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘নগরীর হালিশহর ও শেরশাহ এলাকা ছাড়া আর কোথাও গত ৮/১০ বছরে পানিবাহিত রোগের তথ্য পাওয়া যায়নি। শেরশাহতে একটা নিদির্ষ্ট এলাকায় পানিতে জীবাণু পাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। ওয়াসা থেকেও পানি টেস্ট করে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পরে তিনদিন ধরে পানি বন্ধ রেখে পাইপলাইনে ব্লিচিং পাউডার ও ক্লোরিন দিয়ে পরিষ্কার করে নিরাপদ করার পর আবার পানি সরবরাহ শুরু করা হয়। এছাড়া হালিশহর এলাকায় ট্যাংকের পানিতেই জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। জোয়ারের পানির কারণে সেখানে পানির ট্যাংকে জীবাণু ঢুকে পরে। তাতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখানে ওয়াসার পানির সমস্যা ছিল না। আবার এমনও তথ্য ছিল যে হালিশহরের এমন জায়গায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়েছে যেখানে ওয়াসার লাইনও নেই।’
প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে নানা ধাপে ট্রিটমেন্ট করে এবং শেষ ধাপে ক্লোরিন মিশিয়ে পানিকে নিরাপদ করে পাইপলাইনে সরবরাহ করি। সরবরাহের আগে তিনটি ল্যাবরেটরিতে সেই পানি পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় যে, পানিতে কোন জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া নেই। তখনই সুপেয় পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।’
প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি জীবানুমুক্ত কিনা তা দেখতে সপ্তাহে শহরের ৬০টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে ওয়াসা। মাসে প্রায় ২৪০ থেকে ২৫০টি নমুনা পানি সংগ্রহ করে ওয়াসার ল্যাবে টেস্ট করা হয়। সর্বক্ষেত্রেই দেখা যায় ওয়াসার পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু যখনই বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ট্যাংক থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে, তখনই তাতে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কারণ তারা নিয়মিত ট্যাংক পরিষ্কার করে না। আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক পরিস্কার করে না। অনেক জায়গায় এমনও আছে টয়লেট ও পানির ট্যাংক পাশাপাশি। যে কারণে সেসব এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা যায় বেশি।’

লেখক ঁ নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট